

বাংলাদেশ ক্রিকেটের নানা অবিশ্বাস্য সংস্কৃতির একটা হলো খেলোয়াড়দের হয়ে তাদের ঘরের পত্নীর আবেগঘন বার্তা। দলে থেকে কোনো ক্রিকেটার জায়গা হারালেই ফেসবুকে কিছু লিখে আলোচনা আরও উস্কে দেওয়া হচ্ছে নানা ঘটনায়। এমনটা ঘটেছে আজও, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের ১৭ জনের দলে নির্বাচিত হননি। প্রথমে এই সংবাদ মেনে নিতে না পেরে মুশফিকুর রহিমের স্ত্রী জান্নাতুল কেফায়েত মন্ডি লিখলেন, “ইনজাস্টিস ইজ দ্য নিউ ট্রেন্ড”। এবার মন্ডির বোন মাহমুদউল্লাহ পত্নী জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি লিখলেন আবেগঘন দীর্ঘ বার্তা। তুলে ধরেছেন, কিভাবে রিয়াদের সাথে টিম ম্যানেজমেন্ট ‘অবিচার’ করেছে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তিতুল্য খেলোয়াড়। তার অবদান জড়িয়ে আছে এদেশের ক্রিকেট অঙ্গনের আষ্টেপৃষ্ঠে। রিয়াদের হাতেই লেখা হয়েছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইতিহাস। প্রথম শতক হাঁকানোর উল্লাসের মাঝেই রিয়াদ তুলে নিলেন ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি। পর পর দু’ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড গড়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিদাহাসে ছক্কা হাঁকিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিয়ে রূপ নেন আনসাং হিরো’তে। সেদিন প্রেমাদাসায় পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা ম্যাচের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ মিলিয়েছিলেন সমীকরণ।
বাংলাদেশ দলের অনেক জয়ে অবদান রাখা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়তো শেষ, অনেকটা নীরবেই। সাইলেন্ট হিরোর অধ্যায়ের ইতি টানতে বিসিবিও ছিল রিয়াদের মতোই ‘খুব চুপ’।
তবে অভিমানে এবার ক্ষোভ ঝারলেন রিয়াদ পত্নী জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি। ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখলেন আবেগঘন দীর্ঘ বার্তা। রিয়াদকে বাদ দেওয়ার আসল কারণ খুঁজতে চাইলেন। বিশ্রামের কথা বলে একসময় দলের বাইরে ফেলে দেওয়ার সংস্কৃতির বন্ধ চান।
‘’বিশ্বকাপ এর প্রথম সেঞ্চুরিয়ান এর স্ত্রী হিসেবে আমি জান্নাতুল কাওসার গর্ববোধ করি এবং আজীবন করবো যাকে কোটি কোটি মানুষ ভদ্রলোক,সৎ,ভালো মানুষ হিসেবে জানে। আলহামদুলিল্লাহ্।
তাকে দলের প্রয়োজনে যখন যেখানে খুশি খেলতে নামানো হতো তাও সে কখনো কনোদিন কিছু বলেননি তার স্বাচ্ছন্দ্যের পজিশন আসলে কোনটা। সেই সেক্রিফাইসগুলো না করলে আজকে তার রানের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো! সে সর্বদাই অপ্রতিবাদী ছিলেন। নিজের যোগ্যতায় সবসময় দলে জায়গা পেয়ে আসছেন। আমি এখনো গর্ববোধ করছি কারণ আমার স্বামী খারাপ খেলে দল থেকে বাদ পড়েনি! ভালো করে পরিসংখ্যান অনুসন্ধান করলে দেখবেন! প্রাথমিক দলে থেকে কঠোর অনুশীলন করে চেষ্টা করেছেন এবং ফিটনেস টেস্টেও ফেইল করেনি। আলহামদুলিল্লাহ। তাই যথাযথ কারণ বিশ্লেষন করে তাকে বাদ দিলে উপকৃত হতাম।
আমি দোয়া করি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ আর কোনো ক্রিকেটার যেন অবহেলার স্বীকার না হয়, সুযোগ বঞ্চিত না হয়, সাইলেন্ট হিরো না হয়! আগামী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য “বিশ্রামের” ট্রেন্ড বন্ধ হোক যাতে তাদের অবসরের অধিকার কেড়ে নেওয়া না হয়।
সর্বোপরি, আমি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সব শুভাকাঙ্খী, ফ্যান ফলোয়ারদের কাছে কৃতজ্ঞ এত ভালোবাসা, সম্মান আর সমর্থনের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ্। বাংলাদেশের জন্য তার অবদান কতটুকু যারা ক্রিকেট সত্যিকার অর্থে বোঝে তারাই জানে এবং মনে রাখবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা সবাই তার সুস্বাস্থের জন্য দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ।”