জয় নিয়ে ব্রডের বিদায়, সিরিজ শেষ সমতায়

IMG 0903
Vinkmag ad

চতুর্থ টেস্টে বৃষ্টি কাল হয়ে এসেছিল ইংল্যান্ডের জন্য। এবার বৃষ্টি ছাড়ার পর-মুহূর্ত যেন কাল হয়ে এল অস্ট্রেলিয়ার জন্য। মুহুর্মুহু উইকেট পতনে দিশেহারা হয়ে গেল দল। বাঁধনছেঁড়া হয়ে ঘুরতে ঘুরতে শেষ টেস্টে পরাজয় বরণ করতে হলো সফরকারীদের। নিজের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষের শেষ উইকেট তুলে নিয়ে জয়ী দলে থেকে ক্যারিয়ার শেষ করলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। স্বপ্নের মতো এক সময় গেল ইংলিশ ক্রিকেট, সমর্থক- সবার জন্য।

ব্রডের চোখে-মুখে মুগ্ধতা। টড মার্ফির উইকেট তুলে নিলেন। কিন্তু তাঁর আগে করেছেন এক কাণ্ড। মার্ফির উইকেট তুলে নেওয়ার আগের বলে স্টাম্পের বেইল চেঞ্জ করে নিয়েছিলেন ব্রড। শুধু একটু ‘সোয়াপ’ করে নেওয়া। প্রথম ইনিংসে লাবুশেইনের উইকেট পতনের আগে এই ‘ট্রিক’ করেছিলেন, যা কাজে দিয়েছিল মার্ক উডের বলে। ব্রডের ভাষ্যমতে, এটা মূলত অস্ট্রেলিয়ানরা করে, ভাগ্য বদলাতে। নাথান লায়নকে তিনি এই কাজ করতে দেখেছেন। সে যাইহোক। মার্ফি পরের বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে বেয়ারস্টোর গ্লাভসে আটকে গেলেন। ওভালের গ্যালারি ভর্তি মানুষ। তালি আর তালি। ব্রডের পরিবার আপ্লুত নয়নে তাকিয়ে আছে মাঠের দিকে৷ ব্রডও সতীর্থদের নিয়ে মুগ্ধতায়। এমন মুহূর্ত, সবই উপভোগ করে গেল ইংল্যান্ড। ইনিংসে ব্রডের প্রথম উইকেট। যা তাঁর ক্রিকেটের শেষ দিনেও।

অ্যালেক্স ক্যারির সাথে টড মার্ফি’র জুটি মূলত ভয়ংকর হচ্ছিল আস্তে আস্তে। তবে ৩৫ রানে মার্ফি ফিরলে, অজিদের পক্ষে যেন আর কিছুই থাকে না। তখনও প্রয়োজন ছিল ৫৫ টি রান। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১ টি উইকেট। ব্রড পরের ওভার করতে এসে সম্ভাবনা তৈরি করলেন, জ্যাক ক্রলির হাত থেকে ক্যাচ পড়ে না গেলে, সে ওভারেই খেলা খতম হয়ে যেত। তবে মাঝখানে মঈন আলির আরো এক ওভার যায়। শেষমেশ ব্রড-ই খেলা শেষ করলেন ক্যারি-কে ফিরিয়ে। ইংল্যান্ড সিরিজে সমতা আনে। ২-২ এ শেষ হয় এবারের অ্যাশেজ।

দিনের শুরুতে ভেজা আউটফিল্ড এর কারণে খেলা শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। তখনই বোধহয় একরকম বার্তা দিয়েছিল আবহাওয়া যে, ম্যাচের মাঝেও বিলম্ব ঘটানোর সম্ভাবনা আছে। ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা মিলে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেন। আগের দিনের দারুণ ব্যাটিংয়ে দুজনেই ছিলেন ছন্দে। ক্রিকেটে নিজের শেষ দিন কাটানো স্টুয়ার্ট ব্রডও দিনের প্রথম ওভার করতে ছুটে আসেন। আগের দিনে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকা ওয়ার্নার এদিন এগোতে পারলেননা বেশিদূর। ক্রিস ওকস এসে কট বিহাইন্ডে ফেরত পাঠালেন ওয়ার্নারকে, ৬০ রানে। ব্রডের পর ওকসের শিকার হচ্ছেন ইদানীং ওয়ার্নার৷

দলীয় ১৪১ রানে ওয়ার্নার যাওয়ার পর তাঁর সতীর্থ খাজাও সে পথ ধরলেন। এবারও ওকস। লেগ বিফোরে খাজার উইকেট। রান স্থিতিশীল অবস্থায় রেখে, অজিদের দুই উইকেট পড়ে পরপর। মারনাস লাবুশেইন ও স্টিভ স্মিথ থিতু হওয়ার আগেই, লাবুশেইনকে বিদায় করলেন মার্ক উড। লাবুশেইন ফিরলেন ১৩ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার অমন রাজকীয় উদ্বোধনী জুটির পর, প্রথম ৩ উইকেটের এত দ্রুত পতন যেন একটু থমকে দিয়েছিল সফরকারীদের। তবে অনন্য ছিলেন আরো দুইজন। ট্রাভিস হেড ও স্টিভ স্মিথ। দ্রুত ৩ উইকেট পতনের ধাক্কা সামাল দিয়ে গড়ে তোলেন অপ্রতিরোধ্য জুটি। মাঝে স্মিথের ক্যাচ নিতে ভারসাম্য হারিয়ে সে ক্যাচ ফেলে দেন স্টোকস। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় হয়ে যায়। দলীয় রান ২৩৮/৩, এমন স্কোরে বিরতিতে যায় দুই দল। হাতে দুই সেশন, রান দরকার হবে ১৪০।

মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়ে বৃষ্টির বিরতিতে পড়তে হয় ওভালের দর্শকদের। খেলা বন্ধ থাকে দীর্ঘ সময়। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে খেলা একসময় শুরু হয়। প্রথমে জানানো হয় ৫২ ওভার খেলা হবে। পরে জানানো হয়, তা ৪৭ ওভার মূলত। সে যাইহোক। অস্ট্রেলিয়ার জন্য হিসাব সহজই ছিল।

সে হিসাবে গোলমাল বেঁধে যায়। মঈন আলি প্রথমে হেডকে ফেরালেন ৪৩ রানে। আলি বলে পাচ্ছিলেন বহুরূপী টার্ন। ভাঙ্গে অজি ইনিংসের বড় জুটি। ১৪৭ বলে ৯৫ রানের সে জুটি ভাঙলে, ভাঙনের সুর নামে সফরকারীদের ইনিংসে। দলে আর মাত্র ১০ রান যোগ হতেই স্মিথ ফিরলেন ৫৩ রানে। এবার শিকারি বোলার ওকস। ২৭৪ রানে স্মিথ ফেরার পর, একই রানে ফেরেন মিচেল মার্শ। আলি তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় শিকার। এরপর আর ১ রান যোগ হতেই, স্টার্ক ফিরলেন ওকসের বলে। ওকস তুলে নিলেন নিজের চতুর্থ শিকার।

অ্যালেক্স ক্যারি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন। মাঝে প্যাট কামিন্স কিছুটা সঙ্গ দিয়েছেন। এরপর টড মার্ফি। হ্যাজেলউডের সাথে শেষে এসে আর সুবিধা করতে পারেননি ক্যারি। নিজের উইকেটই বিলিয়ে এসেছেন, ব্যক্তিগত ২৮ রানে। আর এভাবেই শেষ হয় অজিদের ইনিংস। শেষ হয় এবারের অ্যাশেজ। এই সিরিজে সমতা থাকায়, আগের সিরিজ জয়ী দল অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজের ট্রফি ধরে রাখল।

সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন মিচেল স্টার্ক। তিনি সংগ্রহ করেছেন সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ উইকেট সংগ্রহ করেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড।

সিরিজে সর্বোচ্চ রান তুলেছেন উসমান খাজা, সর্বমোট ৪৯৬ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জ্যাক ক্রলির, ৪৮০ রান।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

অধিনায়ক হয়েই ক্রিকেটে ফিরলেন বুমরাহ

Read Next

আমরা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি: স্টোকস

Total
0
Share