

অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে অ্যাশেজ ধরে রাখার যুদ্ধে সফল হয়েছে। চতুর্থ টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায়, হয়েছে ড্র। ২-১ এ এগিয়ে থেকে পঞ্চম টেস্ট খেলতে নেমেছে সফরকারী দল। আজ অ্যাশেজের শেষ দিন। ২৪৯ রান প্রয়োজন, হাতে আছে ১০ উইকেট। উসমান খাজা-ডেভিড ওয়ার্নার যেভাবে খেলে যাচ্ছেন, তাতে খুব বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয় এই লক্ষ্যমাত্রা। আজ শেষ হচ্ছে স্টুয়ার্ট ব্রডের ক্রিকেটেরও দিন। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ঘোষণা দিয়েছেন, ক্রিকেটে খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর সময় শেষ।
৩৭ বছর বয়সে ক্রিকেট থেকে বিদায়। তৃতীয় দিন শেষে অনেকটা হঠাৎ করেই স্কাই স্পোর্টসের মাইক্রোফোনে জানালেন, এই অ্যাশেজ-ই তাঁর শেষ। এরপর আর খেলছেননা ক্রিকেট। চতুর্থ দিনে যখন জেমস অ্যান্ডারসনকে সঙ্গী করে মাঠে নামছেন, ওভালের গ্যালারি ভরে গেছে করতালিতে। জেমস অ্যান্ডারসন’কে সঙ্গী করে শেষবারের মতো ব্যাটিংয়ে নামা, এসব যেন ব্রডের জন্য আগে থেকেই পরিকল্পিত। অ্যান্ডারসন তো ব্রডের সঙ্গী ছিলেন দীর্ঘকাল। বোলিংয়ে একসাথে স্পেল করে গেছেন একের পর এক। সেই অ্যান্ডারসনও ব্রডের এমন খবরে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। কথা বলতে গিয়ে শেষ করতে পারলেন না। মাইকের অপরপ্রান্তে থাকা ভদ্রলোক বললেন, ‘ঠিক আছে, তোমাকে এখানেই ছাড়ছি।’
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়ার ‘গার্ড অব অনার’ পেরিয়ে ব্রড যে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক বল ‘ছক্কা’ দিয়ে শেষ করলেন, তা থাকবে ইতিহাসে। মাইকেল ভনের মতে, বুদ্ধিদীপ্ত খেলোয়াড় এই স্টুয়ার্ট ব্রড।
ব্রড অ্যাশেজ খেলতে পছন্দ করতেন। ইংল্যান্ডের হয়ে অ্যাশেজে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাঁর। সেই অ্যাশেজকে বেছে নিলেন নিজের ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য। আজ শেষ হচ্ছে অ্যাশেজ নিজেও, এ বছরের মতো। আগামী ২৫-২৬ সালে আবারও দেখা যাবে, সব ঠিক থাকলে। তবে ব্রডকে দেখা যাবে না আর ক্রিকেটের মাঠে, ব্রডের শেষ আজই।
উসমান খাজা ও ডেভিড ওয়ার্নার মিলে চতুর্থ দিন তুলেছেন ১৩৫ রান। কোনো উইকেট পতনের ঘটনা ঘটেনি। হতে পারে এই ‘অ্যাশেজ’ ওয়ার্নারের জন্যও শেষ অ্যাশেজ। শেষ দিন ইংল্যান্ডে ম্যাচ খেলার জন্য। আগামী জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নেমে, ঘরের মাটিতে অবসর নিবেন বলে জানিয়েছেন এই অজি ওপেনার। চাইবেন শেষটা ইংল্যান্ডে, অ্যাশেজে কিছুটা রাঙিয়ে রাখতে। নিজের এবং দলের জন্য। ৫৫ রানে অপরাজিত আছেন, ছুটছেন হয়তো বড় কিছুর আশা নিয়ে৷ স্টিভ স্মিথের কথাও বলতে হয়৷ অবসর সংক্রান্ত কোনো খবর তিনি জানান নি। তবে ইংল্যান্ডে হতে পারে, এটিই তাঁর শেষ খেলা। অ্যাশেজের এই পঞ্চম দিন এমন গুরুত্ব নিয়েই হাজির হয়েছে।
২০২৩ অ্যাশেজ নিয়ে আলাদা এক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সকলের। ইংল্যান্ড দল তাঁদের নতুন খেলার ধরন ‘বাজবল’ যুগে প্রবেশ করার পর, গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ ‘অ্যাশেজ’ খেলতে নামছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলা, তা ঠিক। ‘বাজবল’ বেশ সফল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, সেটাও ঠিক। কিন্তু অ্যাশেজের মতো ঐতিহাসিক সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ‘বাজবল’ কেমন করে, তা নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল সবার।
সিরিজ শুরু হওয়ার আগে ‘গলফ’ খেলতে গিয়েছিল ইংল্যান্ড দল দলবল নিয়ে। মাঠের অনুশীলনের আগে নিজেদের মন ও মেজাজ শান্ত করে নিতেই এই উপায়। গলফ খেলতে পছন্দ করেন দলের প্রায় সবাই। আর এই বিনোদন পদ্ধতিও ‘বাজবল’ এর অংশ। দলের সবার মধ্যে আন্তরিকতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে বোঝাপড়া– এ সকল বিষয় এরকম বিনোদনমূলক জায়গাতেই হয়ে থাকে।
প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর, ইংল্যান্ড দলের খেলা নিয়ে কিছু সমালোচনা হয় ঠিক। তবে স্টোকসের দল বড় গলায় জানিয়ে দেয়, তাঁদের ‘ইন্টেন্ট’ বদলাবে না। পরের ম্যাচও হারে স্বাগতিকরা। তবে দুই ইংল্যান্ড যে খুব খারাপ করে তা না। আরেকটু সচেতন থাকলে ম্যাচ নিজেদের ঘরেই নিতে পারত তাঁরা। ইংল্যান্ডের ব্যাট ও ফিল্ডিংয়ে আলাদা ‘চার্ম’ লক্ষ্য করা যায় দুই ম্যাচেই। বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ে, পুরো দল যেভাবে এফোর্ট দেয় এবং খেলার পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদেরকে ‘রোটেশন’ করে, তা বেশ লক্ষণীয়।
তৃতীয় ম্যাচে জয় পায় ইংল্যান্ড। দুই ম্যাচ হারের কারণে যে-সব কম-বেশি সমালোচনা ছিল, সব পিছনে ফেলে– স্টোকস ও তাঁর দল ৩ ম্যাচে ১ ম্যাচ জিতে নেয়। সিরিজ সমতায় ফেরার লড়াইয়ে চতুর্থ টেস্টে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুঃখ বয়ে আনে ইংল্যান্ড। বলা উচিত, বৃষ্টি। সেই টেস্টে প্রথম ৩ দিন কঠিনভাবে খেলায় ছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া সুযোগই পায়নি, এমন। এমন একটা পরিস্থিতি, যখন ম্যাচ অনেকটা ইংল্যান্ডের আয়ত্তে, তখন বৃষ্টি সব ভজঘট করে দেয়। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের যারপরনাই বৃষ্টি ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট ‘ড্র’ তে নেয়।
ফলে, ৪ টেস্ট শেষে ২-১ এ এগিয়ে পঞ্চম টেস্ট শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজে যদি সমতা হয়, অর্থাৎ ইংল্যান্ড যদি শেষ টেস্ট জেতে, তখন অ্যাশেজের নিয়মানুযায়ী, পূর্বের সিরিজ যে দল জয়ী ছিল– তাঁরা ‘ট্রফি’ ঘরে তুলবে। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া আগের অ্যাশেজ জয়ী দল। তারা যে এবারের অ্যাশেজের দখলদারিত্ব পেয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপেক্ষা এখন অস্ট্রেলিয়া যদি সিরিজে জয় লাভ করে, সেটার। অজিরা জিতলে ২০০১ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জেতার স্বাদ নিতে পারবে তাঁরা। পাশাপাশি ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ– এই রত্ন-দ্বয়ের যদি ইংলিশ কন্ডিশনে শেষ সময় চলে, তবে তাঁদের জন্যও এই জয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দিবে।
আজ অ্যাশেজের শেষ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। ব্রডের ক্রিকেটের শেষ দিন। আরো কত শেষ, বলা বা না বলা। তবে এমন শেষ, আরো অনেক নতুনের শুরু। ক্রিকেটের এই অংশগুলো যেন রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতো, শেষ হয়েও রেশ রয়ে যায়। এমন রেশ নিয়েই ক্রিকেট আগায় সামনে, আরো সামনে। সকল ‘রেশ’ সঙ্গে নিয়ে।