

জেমস অ্যান্ডারসনের বয়সটা আজ ৪১- এ পড়ল। অবসরে এখনো তুমুল আপত্তি এই পেস বোলারের। অন্যদিকে স্টুয়ার্ট ব্রড, আরেক ইংলিশ ফাস্ট বোলার– ৩৭ বছর বয়সে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসলেন। ওভাল টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে, স্কাই স্পোর্টসের মাইক্রোফোনে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ৬০০ উইকেট পেরোনো এই বোলার।
এভাবে যে সিদ্ধান্ত জানাবেন ব্রড, সমর্থকেরা ভাবেননি। তৃতীয় দিন শেষ। ক্রিজে শেষ উইকেট জুটিতে অ্যান্ডারসনের সাথে মাঠে ছিলেন ব্রড। ওভাবেই দিন শেষ হয়। স্কাই স্পোর্টসের মাইক্রোফোনে হঠাৎ করেই জানান দিলেন, শেষ হচ্ছে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ওভালের এই অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্ট দিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন তিনি।
“এটা (অবসর) নিয়ে দুই সপ্তাহ ভেবেছি। আমার মনে হয়েছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সবকিছুর উর্ধ্বে। গতকাল (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮ টায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি।”– স্কাই স্পোর্টস-কে বলেন ব্রড।
ক্রিকেটকে যতটা ভালোবাসা সম্ভব ব্রড তা বেসেছেন। চূড়ায় থেকে এই যাত্রা শেষ করতে চেয়েছেন, সেটাও তিনি পেরেছেন- বলেই মনে করেন।
স্টুয়ার্ট ব্রডের টেস্ট অভিষেক ঘটে আজ থেকে ১৬ বছর আগে, শ্রীলঙ্কায়। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন মাইকেল ভন। ব্রডকে চরম বুদ্ধিদীপ্ত খেলোয়াড় মনে করেন ভন। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত বোলার ব্রড-কেই অধিনায়কত্ব করেছেন বলে ভন জানান। ব্রড সবসময় পরিকল্পনা সাজাতেন। নিজের ফিল্ড সাজাতে পছন্দ করতেন।
ভন মনে করতেন, যদি কোনো ‘বোলার’ ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক হয়, সেটা হবে স্টুয়ার্ট ব্রড। ৬০০ উইকেট আসলে মুখের কথা নয়। যা ব্রডের অর্জন। অনেক দক্ষ ও দ্রুতগতির বোলার হয়তো আছে, থাকবে। কিন্তু একজন বোলার, যার বোধ ও বুদ্ধি প্রখর– এমন দেখতে চাইলে, ব্রডের দিকে তাকাতে হবে।
‘মিষ্টার অ্যাশেজ’ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষমতা রাখেন ব্রড। অ্যাশেজে একজন ইংলিশ বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট তাঁর, ১৫১ টি। সর্বোচ্চ ১৯৫ উইকেট শেন ওয়ার্ন (প্রয়াত) নিয়েছেন। চলমান অ্যাশেজে ইংলিশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট ব্রডের; ২০ টি। এবারের অ্যাশেজ খেলতে গিয়েই ৬০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।
ব্যাট হাতেও ব্রডের পারফরম্যান্স দেখার মতো। ব্রডের শুরুর সময়ে তাঁর অধিনায়ক মাইকেল ভন মনে করতেন, দলে ৬ বা ৭ নম্বরে ব্যাট করার জন্য ভালো উপায় হতে পারেন তিনি। টেস্টে ১৩ টি ফিফটি করেছেন। সেঞ্চুরি আছে একটি। অষ্টম উইকেট জুটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে জোনাথন ট্রটের সাথে ব্রড গড়েছিলেন ৩৩২ রানের জুটি। এখন পর্যন্ত ঐ পর্যায়ে সর্বোচ্চ সে জুটি। সেদিনই তিনি হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে একসময় অনিয়মিত হয়ে গেলেও, টেস্ট খেলেছেন পুরোদমে।
স্টুয়ার্ট ব্রড সব সংস্করণ মিলে খেলেছেন ৩৪৪ ম্যাচ। উইকেট পেয়েছেন ৮৪৫ টি। টেস্টে ৬০২, ওয়ানডেতে ১৭৮ ও টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছেন ৬৫ টি উইকেট। মাথায় সাদা ব্যান্ড নিয়ে লম্বা রান-আপে দৌড়ে আসা ব্রডকে এই অ্যাশেজের পর আর দেখা যাবেনা মাঠে। ওয়ার্নারের উইকেট তুলে নেওয়ার যে লম্বা যুদ্ধ, সেখানেও থাকবেননা। মুখে সাবলীল হাসি নিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারের ব্যাপারে ছক এঁকে ফেলা স্টুয়ার্ট ব্রড-কে ‘মিস’ করবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলেই। ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা তো অবশ্যই। আবার সে কোন ফাস্ট বোলার এমন ৬০০ উইকেটের ইতিহাস গড়বে! ব্রডকে তাই বিদায় আর সম্মান।