

মাটি কামড়ে থেকে জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড মিলে দিন শেষ করলেন। দিনশেষে ব্রড জানালেন, তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে ওভালের এই টেস্টের মাধ্যমেই। তৃতীয় দিনে টপ অর্ডার থেকে দারুণ রান আসে ইংল্যান্ডের জন্য। চল্লিশের ঘরে ২ ইনিংস, সত্তরের ও নব্বইয়ের ঘরে একটি করে ইনিংস। ঐকান্তিক প্রচেষ্টা যাকে বলে। ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৮৯ রানে দিন শেষ করা ইংল্যান্ডের লিড এখন ৩৭৭ রান। যেকোনো বিচারে দারুণ লক্ষ্যমাত্রা তৈরি হয়েছে স্বাগতিকদের জন্য। চতুর্থ দিনে অজি বোলাররা ক্রিজে থাকা একটি উইকেট তুলে নিয়ে নিজেদের ব্যাটিংয়ে কতটা নৈপুণ্য দেখাতে পারে, তার উপর নির্ভর করছে সিরিজ জয়।
২০২৩ অ্যাশেজ শুরু হয়েছিল জ্যাক ক্রলির ব্যাটে আসা বাউন্ডারি দিয়ে। শেষ টেস্টের শেষ ইনিংস খেলতে নেমে জ্যাক ক্রলি প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকালেন। যেন এক ‘রিইউনিয়ন’ করতে চাইলেন। ইংল্যান্ড টেস্টে যে এক বর্নিল দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, সেটা আরেকটু উজ্জ্বল দেখাতে পারে এমন শুরু আর শেষ দ্বারা।
নতুন দিনে নিজেদের নতুন ইনিংস শুরু করেছে স্বাগতিকরা। ক্রলির অমন প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর, প্রথম ওভারে আসে ১৩ রান। বোঝা যাচ্ছিল বেন ডাকেট আর ক্রলির চিন্তা। ঝরঝরে ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার মিলে ৫০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন ৫২ বলে।
ক্রলির রান যখন ১৮ তে পৌঁছায়, তখন তিনি এই অ্যাশেজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী বনে যান। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজার ৪২৪ রান ছাড়িয়ে, ক্রলি অবস্থান করেন ৪২৫ রানে। প্রথম পানি বিরতির সময় ইংল্যান্ডের দলীয় রান ৬৬, বিনা উইকেটে৷
প্রথম ফেরা বেন ডাকেটের। মিচেল স্টার্কের বলে এজ হয়ে অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভস বরাবর বল৷ ফিল্ড আম্পায়ার জোয়েল উইলসন অবশ্য প্রথমে আউট দেননি। স্টার্কও দ্বিধায় ছিলেন। ক্যারি অবশ্য নিশ্চয়তা দেন। সেই ভরসায় প্যাট কামিন্স রিভিউ নিলে, ফিরতে হয় ডাকেটকে, ৪২ রানে।
আগেই প্যাড-আপ করে থাকতে দেখা যায় বেন স্টোকসকে। খুব দ্রুত নামবেন এমন মনে হচ্ছিল। দর্শকেরা দেখে বেশ আপ্লুত হলেন, স্টোকস আসেন তিনে। স্টোকস আসার পর ক্রলি নিজের অর্ধ-শতক তুলে নেন ৬১ বলে। ক্রলি শট খেলতে থাকেন একের পর এক। বাউন্ডারি ছাড়া করতে থাকেন ফুলার লেংথে পড়া বলগুলো। বের হয় সুইপের রসদও।
৪১ বলে ৫০ রানের জুটি এসে যায় স্টোকস-ক্রলির ব্যাটে। ইংল্যান্ডের দলীয় রান যখন ১ উইকেট হারিয়ে ১৩০, তখন মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতি থেকে ফিরে স্টোকসের টপ এজ শটে একটা সুযোগ তৈরি হয়। তবে বাউন্ডারি লাইনে থাকা মিচেল স্টার্ক বল তালুবন্দি করতে পারেননি ঠিকঠাক। ফলাফল হিসেবে ওভার-বাউন্ডারি।
অবশ্য কামিন্স পরের ওভারে এসে তুলে নিলেন ভয়ংকর হতে থাকা জ্যাক ক্রলির উইকেট। স্টাম্পের অনেক বাইরে ছাড়লেন বল। ফিফথ বা সিক্সথ স্টাম্প হবে। এজ হয়ে সেকেন্ড স্লিপে থাকা স্টিভ স্মিথের হাত দখল করে নেয় বল। ৭৬ বলে ৭৩ রানে ফেরেন ক্রলি। আর সাথে সর্বোচ্চ রান ৪৮০ নামের পাশে।
নতুন ব্যাটার হিসেবে জো রুট আসেন ক্রিজে। রুটের রান যখন ৫, হ্যাজেলউডের বলে লেগ বিফোর থেকে বেঁচে ফিরেছেন। ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেওয়ায়, রিভিউ নিতে হয় কামিন্সকে। দেখা যায়, ইম্প্যাক্ট ‘আম্পায়ার্স কল’– শুরুতে ফিল্ড আম্পায়ার আঙুল তুললে, রুটকে ফিরতে হতো সেই সিদ্ধান্তেই।
সেই রুটের সাথে স্টোকসের জুটি ভালোই জমে ওঠে। দুজন মিলে দলের খাতায় ৭৩ রান যোগ করেন। টড মার্ফির বলে স্টোকস ফিরলেন ৪২ রানে। হ্যারি ব্রুক ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারলেননা এই ইনিংসে। ৬ বলে ৭ রান করে জশ হ্যাজেলউডের বলে কট বিহাইন্ড হলেন। তবে রুট ছিলেন নিজের শিকড় গেড়ে।
পরের ব্যাটার জনি বেয়ারস্টো আসলে, রুট-বেয়ারস্টো মিলে গড়লেন লম্বা জুটি। দুজন মিলে দ্বিতীয় সেশন শেষও করলেন। মোট ২৪ ওভার খেলা হয়ে, ১৩৫ রান আসে দ্বিতীয় সেশনে।
পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকেন রুট ও বেয়ারস্টো। শেষমেশ টড মার্ফি ত্রাতা হয়ে এলেন। নব্বইয়ের ঘরে ড্রিফট দিয়ে বোল্ড করলেন রুটকে। ১০৬ বলে ৯১ করে ফিরলেন এই ইংল্যান্ড ব্যাটার। এতে ভাঙে বেয়ারস্টোর সাথে ১১০ রানের জুটি।
নতুন ব্যাটার মঈন আলির সাথে ২৮ রানের জুটি গড়ে বেয়ারস্টো’র ফেরার সময়ও চলে আসে। স্টার্কের বলে এজ হয়ে কট বিহাইন্ড হন ৭৮ (১০৩) রানে। ক্রিস ওকস ১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দলের খাতায়, স্টার্কের শিকার হন। মঈন আলি ও মার্ক উডও ফিরতে খুব বেশি সময় নেননি। ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে খেলতে ২৯ রানে ফেরেন আলি। উডও ৯ এর বেশি যোগ করতে পারেননি এদিন।
একেবারে শেষ বেলায় এসে ক্রিজে আটকে থাকেন স্টুয়ার্ড ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসন। ব্রড ২ বলে ২ রানে এবং অ্যান্ডারসন ১৪ বলে ৮ রানে। অজি বোলারদের নানারকম চেষ্টাতেও ফেরানো যায়নি দুজনের কাউকে। ফলাফল ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৮৯ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পক্ষে মিচেল স্টার্ক নিয়েছেন ৪ উইকেট। এই টেস্টে মোট ৮ উইকেট শিকার করলেন এই বোলার। এছাড়াও এই ইনিংসে টড মার্ফি তুলেছেন ৩ টি। প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউড নিয়েছেন ১ টি করে উইকেট।