বৃষ্টি টেস্ট ক্রিকেটের বন্ধু নয়

ভারত
Vinkmag ad

অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্ট ড্র হয়েছে। মাঠের খেলায় ড্র হলে ব্যাপারটা ঠিক ছিল। ড্র হয়েছে মূলত বৃষ্টির কারণে। শেষ দুই দিন মুষলধারার বৃষ্টি। মাত্র এক সেশন খেলা গড়ায় চতুর্থ দিন। পঞ্চম দিন পুরো দিন বৃষ্টিতে শেষ। ফলে দিনের খেলা পরিত্যক্ত হলে, টেস্ট ড্র ঘোষণা হয়। এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতে পারে এই টেস্টে কোন ফল না আসায়। অথচ ওল্ড ট্রাফোর্ড যেখানে প্রথম তিন দিন সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে এসেছিল স্বাগতিকদের জন্য।

২-১ এ এগিয়ে থেকে চতুর্থ টেস্ট শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড যেভাবে প্রথম ৩ দিন খেলেছে, সেক্ষেত্রে নিজেদের পক্ষে ফল বের করা খুব কঠিন কিছু হত না। সিরিজ তখন হতে পারত ২-২। তবে তা হয়নি। অজিরা বৃষ্টির প্রতি নানাভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে দ্য ওভালে। সেখানে অস্ট্রেলিয়া জিতলে, সিরিজ তাদের। আর যদি ইংল্যান্ড জেতে, তবে এবারের অ্যাশেজ সমতায় শেষ হবে।

বৃষ্টিতে ক্রিকেট বন্ধ থাকা, রিজার্ভ ডে না থাকা এবং আরো অনেক উপায়ন্তর নিয়ে বিবিসি স্পোর্টে এক কলাম প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে কিছু বিষয় জানার চেষ্টা করা যাক।

বৃষ্টিতে ক্রিকেট বন্ধ থাকে কেন, এটা খুব পরিষ্কার। বল, পিচ, আউটফিল্ড- সবই থাকে খেলার অনুপযুক্ত। আপনি চাইলেও সেরা খেলাটা সেখানে খেলতে পারবেন না। খেলোয়াড়দের ফিল্ডিং করতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হবে ভেজা মাঠে। তা থেকে ইঞ্জুরির সম্ভাবনা থাকবে। অল্প বৃষ্টিতে খেলা চালানো যেতে পারে, এমন ভাবনা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু না। আম্পায়ারের পুরো সিদ্ধান্ত এখানে থাকে। আম্পায়ার যদি নিরাপদ মনে না করে, তবে তিনি সেরকম কোন সিদ্ধান্তে যাবেন না। আউটফিল্ড সাধারণত কাভার করা থাকে না। তবে বেশিরভাগ টেস্ট খেলুড়ে মাঠগুলোতে আউটফিল্ডের ‘ড্রেনেজ’ ব্যবস্থা বেশ চমৎকার থাকে। ফলে বৃষ্টি হলে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয়।

টেস্টে রিজার্ভ ডে কেন থাকেনা, এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলে থাকেন। কিছুদিন আগে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অবশ্য রিজার্ভ ডে ছিল। কারণ সে ম্যাচে একটা ফল বের করা খুব জরুরী, ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে। দুই বছরের একটা সার্কেলে একজন চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে রিজার্ভ ডে-র প্রস্তুতি সেখানে ছিল।

কিন্তু একটা টেস্ট সিরিজে রিজার্ভ ডে দেওয়ার চাহিদা তৈরি হয়নি এখনো। একটা রিজার্ভ ডে মানে সেখানে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, নিরাপত্তা, ক্যাটারিং স্টাফ সকলের সাহায্য পেতে হবে। মূলত সকলকে ‘অ্যাভেইলেবল’ থাকতে হবে। যেখানে ক্রিকেটের অনেক বেশি শিডিউল থাকে, সেখানে রিজার্ভ ডে করলে অনেক বিষয় অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে করতে হবে, এবং ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার সাহায্য একত্রে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

অ্যাশেজ সিরিজ প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে চলমান থাকছে। দ্য ওভালে পঞ্চম টেস্টের পঞ্চম দিন পরেই ‘দ্য হান্ড্রেড’ টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসর শুরু হতে যাচ্ছে। এই আগাম শিডিউলগুলো ‘রিজার্ভ ডে’ ধরনের কিছু থাকলে কোনোভাবে কি এড়ানো সম্ভব? এছাড়াও ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা সবসময়ই থাকছে। যা পূর্ব-নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী। এসকল ব্যাপার দেখলে, টেস্টে রিজার্ভ ডে দেওয়া খুব কঠিন ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অসম্ভব পর্যায়ের।

বেন স্টোকস চতুর্থ টেস্ট ড্র হওয়ার পরেও স্কাই স্পোর্টসকে বলেছেন, “আমি সম্ভবত সেই পক্ষে থাকব না, সেখানে বলা হয় রিজার্ভ ডে থাকা উচিত। টেস্ট ক্রিকেট পাঁচ দিনেরই।“

ক্রিকেট মাঠে ছাদ কেন দেওয়া হয় না? এমন প্রশ্ন অনেক লম্বা সময় ধরেই চলে আসছে। ইংল্যান্ডে অবশ্য কিছুটা ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করা হয়েছে এ ব্যাপারে। মূলত ক্রিকেট স্টেডিয়াম, অন্যান্য খেলার মাঠের তুলনায় আকারে বড়। নকশা ও অর্থের ব্যাপারটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ক্রিকেট মূলত আউটডোর খেলা হিসেবেই বিবেচিত। ছাদ হয়ে গেলে, সেটা অনেকটা ইনডোর অবস্থায় চলে যাবে। এছাড়াও পিচের ঘাস, আউটফিল্ড ইত্যাদি টেকনিক্যাল বিষয়ের জন্য রোদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন। আর্টিফিশিয়াল অবস্থায় এগুলি ঠিকভাবে বেড়ে উঠবেনা বলে ধারণা করা যায়।

ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি হবে আগে থেকেই ফোরকাস্টে জানানো হয়েছিল। তবে কেন প্রথম ৩ দিন আরো লম্বা সময় খেলা হয়নি, এমন প্রশ্ন উঠেছে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্ট ঘিরে। সাধারণত ৯০ ওভার বল করতে হয় টেস্টের এক দিনে। লাঞ্চ ও ব্রেকের টাইমগুলো কমিয়ে আরেকটু খেলা যেত কিনা সেসব নিয়েও আলোচনা ছিল। জো রুট অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। ইংল্যান্ডে সামারে দিনের আলো নিভতে বেশ সময় লাগে। সেক্ষেত্রে দিনের খেলা আরো বেশি সময় ধরে হওয়া উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।

“গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে ১০ (পিএম) ঘটিকার আগে দিন অন্ধকার হয় না। আমরা কেন আরো খেললাম না, যতক্ষণ ওভার করা যাচ্ছিল?” বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে প্রশ্ন রাখেন জো রুট। তিনি আরো যোগ করেন, “অনেকরকম উপায় বের করা যেত, যত বেশি খেলা সম্ভব তার জন্য।“

কিন্তু এখানে কিছু ব্যাপার জড়িত। আপনি জানবেননা, ভবিষ্যতে কতগুলো ওভার আপনার অতিরিক্ত ক্ষতি হতে পারে। এবং সেটা কত ওভার ধরে আপনি আগের দিনে খেলা সম্প্রসারণ করবেন। খেলোয়াড়দের শরীর ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার তো থাকছেই। এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক ব্যাপার; ব্রডকাস্ট, ক্যাটারিং, নিরাপত্তা- পাশাপাশি যারা টিকিট কেটে খেলা দেখতে এসেছেন, তাদের আগাম ট্রান্সপোর্ট শিডিউলিং, কতরকম বিষয়। তবে দিনের খেলার মধ্যবর্তী সময়ে এপাশ-ওপাশ করে কিছু ওভার বেশি খেলা সম্ভব এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে। তা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।

‘টেস্ট’ ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণ। ৫ দিন খেলোয়াড়রা বিভিন্ন মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়। খেলার চিত্র বদল হয় নানাদিকে। দিনে যে ৯০ ওভার খেলার কথা, সেই ৯০ ওভার যত দ্রুত সম্ভব খেলতে পারা- সবচেয়ে ভাল। সাধারণত এসব ম্যাচে খেলোয়াড়েরা স্লো ওভার রেটের সম্মুখীন হয়ে থাকে। ম্যাচ ফি কর্তনের চেয়ে রান কর্তন বা বর্ধন- স্লো ওভার রেট-কে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে টেস্টের সৌন্দর্য মূল্যায়ন করার ব্যাপারে সকলের সচেতন চিন্তাভাবনা জরুরী।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

বদলে যাচ্ছে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সূচি!

Read Next

মেন্টর হওয়া নিয়ে অভিপ্রায় তামিমের, মাশরাফির উত্তর সাদামাটা

Total
0
Share