আবারও স্বপ্নভঙ্গ, তবে সিরিজ জিতল না কেউ

সিরিজ হার
Vinkmag ad

আবারও স্বপ্নভঙ্গ। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখতে গিয়েও পারল না বাংলাদেশ নারী দল। ভারতের বিরুদ্ধে নারীদের প্রথম কোনো সিরিজ জয়ের খুব কাছে গিয়েও পারল না নিগার সুলতানার দল। ফারজানা হক পিংকির প্রথম সেঞ্চুরিতে স্কোরবোর্ডে আসে ২২৫ রান। এরপর শেষদিকে বোলার, ফিল্ডারদের দাপটে বাংলাদেশের মেয়েরা ম্যাচের ভাগ্য ঘুরে আসে বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু হল না, ম্যাচ শেষপর্যন্ত হল টাই। অমিমাংসিতভাবে সিরিজ শেষ করল দুই দল। ১-১ সমতার ফলে দুই দুল ভাগ করে নিল ট্রফি।

শেষ ৬ বলে দরকার ৩ রান। এমন সমীকরণের ম্যাচে বল হাতে মারুফা আক্তার। প্রথম দুই বলে দুই সিঙ্গেল নেন জেমিমাহ-মেঘনা। তৃতীয় বলে মারুফার বাউন্সার সামলাতে ব্যর্থ মেঘনা, ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় নিগারের হাতে। উদযাপনে মাতে বাংলাদেশ, তবে সিরিজ জয়ের খুশিতে নয়, সিরিজ টাই করতে পেরেই আনন্দে আত্মহারা বাংলার মেয়েরা।

মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশী ব্যাটাররা দেখায় দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শন। ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখলেন ফারজানা হক পিংকি। আন্তর্জাতিক নারী ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের প্রথম সেঞ্চুরি। আর তাতেই ভারতকে ২২৬ রানের টার্গেট দেয় বাংলার মেয়েরা। যা নারী ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের বছর সর্বোচ্চ ২৩৪ করে নিগার সুলতানারা পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ৯ রানের ব্যবধানে।

আজ ফারজানা হক পিংকির খেলা ১০৭ রান বাংলাদেশের ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ফারজানা এই শতক হাঁকানো ইনিংসের দিন ছুঁয়েছেন আরও এক রেকর্ড। নারী ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ তার ব্যাটেই। এমন রেকর্ড বন্যার দিনও ম্যাচ শেষে হাসতে পারলেন না ফারজানা। কারণ বাংলাদেশ হেরেছে রানে, আর তাতেই দেখল সিরিজ হার।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বিপাকে ভারত। মারুফা আক্তার এসেই আগুন ঝরালেন, নিজের বলেই ফিরতি ক্যাচে বিদায় করেন শেফালি ভার্মাকে। শেফালি ৪ রানে ফেরার পর তিনে নামা ইয়শতিকা ভাটিয়া উইকেট হারান ব্যক্তিগত ৫ রানে। ওপেনার স্মৃতি মান্দানা ও হারলিন দেউল এরপর দারুণ কিছু শটে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। দুজনেই হাঁকান ফিফটি রান। অথচ মান্দানা আউট হয়ে ফিরতে পারতেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শুরুর বলেই। মারুফার বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ছাড়েন নিগার সুলতানা।

এই জুটি বড় হতে হতে একশো রানও ছাড়িয়ে যায়। তবে ১০৭ রানের জুটি ভেঙে ব্রেকথ্রু এনে দেন ফাহিমা খাতুন। ব্যক্তিগত ৫৯ রানে বিদায় হন মান্দানা। হারমানপ্রীত কর এসে এরপর সঙ্গ দেন হারলিন দেউলকে। তবে নাহিদা আক্তার অ্যাকশনে এসেই অধিনায়ক হারমানকে ইনিংস বড় করতে দেননি।

সুইপ খেলতে গিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক পড়েন বিপাকে। অনফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদ আঙুল উঁচিয়ে যান ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্ত। মেজাজ হারিয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে উড়িয়ে কয়েক ফুট দূরে নিয়ে ফেলেন হারমানপ্রীত কর।

বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা লেগ বিফোরের আবেদন করলেও আম্পায়ার আউট দিয়ে জানান ক্যাচ আউট ছিলেন হারমানপ্রীত কর। হয়তো বল প্যাড ছোঁয়ার আগেই করের গ্লাভস ছুঁয়ে যায়। তবে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত এই আউট না গড়ানোয় ক্ষোভ নিয়েই ব্যক্তিগত ১৪ রানে মাঠ ছাড়েন হারমানপ্রীত কর। মেজাজ হারিয়ে এমন অযাচিত কান্ডের জন্য নিশ্চিতভাবেই ম্যাচ রেফারির আবেদনের প্রেক্ষিতে বড় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন হারমানপ্রীত কর। যা আসলে বোঝা যাবে ম্যাচ শেষে।

ফের নাহিদা বাংলাদেশের কাণ্ডারি হয়ে আসলেন ৪২ তম ওভারে। তার স্পিন জাদুর সঙ্গে ফিল্ডারদের দৃঢ়তা। এক ওভারেই দুই রান আউটের শিকার হয়ে চরম বিপাকে পড়ে যায় ভারত। ওভারের দ্বিতীয় বলে ৭৭ রানে থাকা সেট হারলিন দেউলকে ফেরাতে দুর্দান্ত ভূমিকায় উইকেটকিপার নিগার সুলতানা। ওভারের শেষ বলে সুবহানা মোস্তারির সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন দিপ্তী শর্মা।

নাহিদা আক্তার ইনিংসের ৪৮ তম ওভারে মাত্র ১ রান খরচায় তুলে নেন ব্যাক টু ব্যাক উইকেট। ২১৭ রানে ভারত হারিয়ে ফেলে নবম উইকেট। আগের ওভারে রাবেয়া ফেরান আমানজোত করকে। মুহূর্তেই ম্যাচ ঘুরে আসে বাংলাদেশের প্রান্তে। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৯ রান। আর বাংলাদেশের ১ উইকেট। শেষ ৬ বলে দরকার ৩ রান। এমন সমীকরণের ম্যাচে

ফারজানা হক পিংকি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতক হাঁকালেন আন্তর্জাতিক নারী ওয়ানডেতে। আর তাতেই বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২২৫ রান। এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দুই উদ্বোধনী ব্যাটারের দাপটে পায় উড়ন্ত সূচনা। দুই ওপেনারের শুরুর জুটিতেই স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৯৩ রান। ফিফটি হাঁকিয়ে ব্যাক্তিগত ৫২ রানে শারমিন আক্তার আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর নিগার সুলতানা জ্যোতি ও ফারজানা হক পিংকির ব্যাট থেকে আসে আরও ৭১ রান।

৩৬ বল খেলে অধিনায়ক নিগার ২৪ রানে বিদায় নিলে বাংলাদেশ হারায় দ্বিতীয় উইকেট। পরের ওভারে আরও এক উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। রিতু মণি প্যাভিলয়নের পথ ধরেন দুই রান করতেই। এরমাঝেই ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলা ফারজানা হক পিংকি ছুটতে থাকেন বড় ইনিংসের পথ ধরে। ভারতীয় বোলারদের পাত্তা না দিয়ে খেলতে থাকেন দারুণ সব স্ট্রোক্স। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন সোবহানা মোস্তারি।

ইনিংসের শেষ বলে রান আউটের ফাঁদে পরে ফেরার আগে ওপেনার ফারজানা করে ফেলেছে ন অনন্য এক রেকর্ড। যা নারী ওয়ানডেতে প্রথম কোনো বাংলাদেশী ব্যাটারের শতক। তাও আবার ভারতের মতো শক্তিশালী বোলিং লাইন-আপের বিরুদ্ধে।

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

আম্পায়ার তানভীর দিলেন আউট, ক্ষোভে হারমান ভাঙলেন স্টাম্প

Read Next

হারমানপ্রীতের কথায় বাংলাদেশকে অপমান, দল নিয়ে চলে আসেন নিগার

Total
0
Share