

২৩ বছর বয়সী পৃথ্বী শ। ভারতীয় ক্রিকেটে এসেছিলেন সম্ভাবনার ফুলকি নিয়ে। ২০১৮ সালে অভিষিক্ত পৃথ্বী এখন অনেকটাই স্বল্প-আলোকে নিজের সময়গুলো কাটাচ্ছেন। শেষ দুই বছর ধরে নিজের শক্তির জায়গা যে ‘ব্যাটিং’- তা একেবারেই খারাপ যাচ্ছে। যার ফলে জাতীয় দল বাদ, যেকোনো একাদশেই নিজের জায়গা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে তাঁর জন্য। তবে এর জন্য নিজেকে একা হতে হবে কেনো? হতে হয় আসলে। দর্শকদের আশার পারদ পূর্ণ করতে না পারলে, দর্শকেরা আর ভাল থাকতে দিতে চান না পৃথ্বী-দের
উপমহাদেশীয় ক্রিকেটারদের জীবন-যাপন খুব বেশি সহজ নয়। বাংলাদেশ-পাকিস্তান, বড় পরিসরে যদি ভারতকে নিয়ে আসা হয়, অনেক চিত্র আপনি দেখতে পারবেন। সেই চিত্র দেখতে অবশ্য আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। খালি চোখে তা দেখতে পারা একটু কঠিনই বটে। খালি চোখে ‘গ্ল্যামার’ ছাড়া তেমন কিছু দর্শকদের দৃষ্টিগোচর হয় না। তবে সেই গ্ল্যামার ছাপিয়ে পরের পৃষ্ঠা কেউ উল্টাতে চায় না। সেখানে হয়তো আরো অনেক গল্প লেখা থাকে, জানা হয় না।
কোনো ফরম্যাটেই নেই এই ভারতীয় ক্রিকেটার। ছিলেন শুবমান গিলদের বন্ধু। গিল ২০২৩ আইপিএলে অসাধারণ পারফর্ম করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতলেন। বলা হতো, গিলদের চেয়েও সম্ভাবনাময় ছিলেন পৃথ্বী। যখন আলোতে এলেন, সকলে তাঁকে শচীন টেন্ডুলকারের সাথে তুলনা দিতে লাগল। ডান-হাতি ব্যাটার পৃথ্বী। শচীনের সাথে যে একেবারে মিল নেই, তা না। খুব সহজেই তাঁর ব্যাটিং দেখে, আপনি শচীনের কথা মনে করতে পারবেন। পৃথ্বী নিজেও অবশ্য ‘শচীন’- কেই আইডল হিসেবে দেখেছেন।
তবে সেই পৃথ্বীর সময়টা এখন খারাপ। নিজের সম্ভাবনার জায়গা থেকে ভালো কিছু দিতে পারছেন না। যা হয় ক্রিকেটে। খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু তা কি দর্শক-সমর্থকদের হজম হয়! আর হয় না বলেই সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রকাশ্যেও পৃথ্বী-কে শুনতে হয় নানারকম কথা। কথা হলেও চলত। নানারকম মন্দ কথা, যা নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দেওয়ার জন্য খুবই যথেষ্ট।
সম্প্রতি এক ইন্টারভিউতে পৃথ্বী শ বলেন,
‘আমি কম জিনিস নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু আমি আমার রুমে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আসতে চাই না। আমি যদি দ্রুত আউট হয়ে যাই, এটা এমন না যে আমি আবার গিয়ে ব্যাটিং করতে পারব। তাই আমি আমার পরের ইনিংসের দিকে মনোযোগ দিই। আমি আমার রুমে যাই, আরাম করি, গোসল দিই এবং প্লে স্টেশনে ফিফা, কল অব ডিউটি ইত্যাদি খেলি। আমি যদি বাইরে যাই, লোকেরা আমাকে হয়রানি করে। তারা হয়তো সামাজিক মাধ্যমে কিছু লেখে। তো আমি আর ইদানীং বাইরে যাওয়া পছন্দ করি না।’
একজন ক্রিকেটারকে কেন এ ধরনের অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, সে প্রশ্ন রাখলে উত্তর পাওয়া যাবে না। অথচ এমন অবস্থার কোনো দরকার ছিল না। গঠনমূলকভাবে আমরা কিছু লিখতে ও বলতে পারতাম। তা পৃথ্বী-রাও খুব স্বাভাবিকভাবেই নিতে পারত। অথচ আমরা সেদিকে না গিয়ে, তাকে জনগণের দ্বারপ্রান্তে এনে বিচার করা, হয়রানি করা- এসব আপনি কোন বিবেচনায় করতে চাইবেন?
পৃথ্বী আরো বলেন, ‘আমি কি করব বাইরে গিয়ে? যখনই আমি বাইরে যাই, সমস্যা শুরু হয় যায়। ইদানীং আমি দুপুর ও রাতের খাবারও খেতে যাচ্ছি একা। একা থাকাই উপভোগ করছি। কিছুদিন আগে একটা মুভিও দেখে এলাম একা। একেবারেই একা ছিলাম, কাউকে এমনকি জিজ্ঞেসও করিনি যে আসো, আমার পাশে বসে মুভিটা দেখো।’
কথাগুলো হাসতে হাসতে বলেন পৃথ্বী শ।