

কলম্বোতে ইমার্জিং এশিয়া কাপের ডু-অর-ডাই ম্যাচে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়। ২১ রানের জয়ে টাইগারদের হাতে সেমির টিকিট। জাকির হাসানের ফিফটির পর ফিরে গেলেও শতক ছুঁয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। সৌম্য ২ রানের জন্য পাননি পঞ্চাশের দেখা। শেষদিকে শেখ মেহেদী হাসানের ক্যামিও! এরপর বল হাতে দাপট দেখালেন রাকিবুল, সাকিব, মেহেদী। ৩০৯ রানের টার্গেট টপকাতে নেমে ২৮৭ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে জমা করে ৩০৮ রান। আফগানিস্তান ৮ উইকেট হারিয়ে করতে পারে কেবল রান ২৮৭ রান। আর তাতেই বাংলাদেশের ২১ রানের জয়ে নিশ্চিত করল ইমার্জিং এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা আফগানিস্তান ভালো করলেও রাকিবুল হাসানের আঘাতে আফগানরা হারায় প্রথম উইকেট। বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেওয়া রাকিবুল তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ১০ রান করা ওপেনার জুবাইরউল্লাহ আকবরিকে। তিনে নামা নুর আলি জাদরানকে নিয়ে আরেক ওপেনার রিয়াজ হাসানের প্রতিরোধ। এই দুইয়ের ব্যাটে আফগানিস্তান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৯০ রান।
দারুণ খেলতে থাকা এই জুটি ক্রমশ বিপদ বাড়িয়ে তুলছিল বাংলাদেশের। তবে টাইগারদের কান্ডারি হয়ে আসেন তানজিম হাসান সাকিব। তার লাফিয়ে উঠা বল নুর আলি জাদরানের ব্যাটে চুমো দিয়ে যায় উইকেটকিপার আকবর আলির হাতে। ভাঙ্গে আফগানদের জুটি, স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে। এর মাঝেই রিয়াজ হাসান ফিফটি হাঁকিয়ে টেনে নিয়ে যান দলকে।
নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসেই সৌম্য সরকার বিদায় করেন ৭৮ রানে থাকা রিয়াজকে। সৌম্যর স্লোয়ার বাউন্সারে ব্যাট চালিয়ে রিপন মন্ডলের হাতে ধরা পড়েন রিয়াজ হাসান। আর তাতেই ম্যাচের লাগাম ফিরে আসে বাংলাদেশের হাতে। শহিদুল্লাহ কামালকে ৪৪ রানে রেখে বোল্ড করেন রাকিবুল। নিজের শেষ ওভারে এই গুরুত্বপূর্ণ শিকারে রাকিবের ঝুলিতে দ্বিতীয় উইকেট। ইকরাম আলি খিলকে ১ রানের বেশি করতে দেননি তানজিম সাকিব। শরফুদ্দিন আশরাফ রিপন মন্ডলকে পরপর দুই বলে ৬, ৪ হাঁকিয়ে পরের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হন জয়ের হাতে। ২৪৬ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
৩ বাউন্ডারিতে ৪৭ বলে ফিফটি রান পূর্ণ করেন বাহির শাহ। কিন্তু সৌম্য সরকারের স্লো বাউন্সারে ফের কুপোকাত ইজহারুল নাভেদ। নিজের শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান খরচায় উইকেট তুলে নেন সৌম্য। শেষ ওভারে জয়ের জন্য আফগানদের সামনে সমীকরণ দাঁঁড়ায় ৬ বলে ৩৫ রানের। ওভারের প্রথম বলেই ৬ হাঁকিয়ে পরের বলে আউট জিয়া আকবর। সাকিবের ঝুলিতে যায় তৃতীয় উইকেট, আরও এক দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেন জয়। শেষপর্যন্ত ২৮৭ রানে থামে আফগানিস্তান এ দলের ইনিংস।
এদিন উইকেট শূন্য থাকলেও শেখ মেহেদী হাসান করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং, ১০ ওভারে দুই মেডেন নিয়ে খরচ করেন মাত্র ৩৩ রান। রাকিবুল হাসান বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন, মাত্র ৩০ রান খরচায় তুলে নেন ২ উইকেট। তবে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তানজিম হাসান সাকিবের।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩০৯ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল। শতক হাঁকিয়ে পরের বলেই ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ রানের ইনিংস আসে জাকির হাসানের ব্যাট থেকে। ৪২ বলে ৪৮ রান করে ফিরলেন সৌম্য সরকার। শেখ মেহেদী হাসান ১৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে থাকেন অপরাজিত।
কলম্বোর পি সারা ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ইমার্জিং অধিনায়ক সাইফ হাসান। শুরুর ওভারেই ব্যাটে ঝড় তুলেন ওপেনার নাইম শেখ। ৩ বাউন্ডারিতে ৬ বলে করেন ১২ রান। কিন্তু দারুণ শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ নাইম। ব্যক্তিগত ১৮ রানে বিদায় নেন ক্যাচ তুলে। আগের দুই ম্যাচে দাপট দেখানো তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটেও আজ নেই রান। ৯ বলে করেন ৯। অধিনায়ক সাইফ হাসান পাননি ৪ রানের বেশি।
দলীয় ৩৪ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে এরপর পথ দেখায় জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়। এই দুই ব্যাটার আফগান বোলারদের পাত্তা না দিয়ে খেলতে থাকেন দারুণ সব স্ট্রোক্স। ইনিংসের ২৩ তম ওভারের শেষ বলে ইজহারুলহক নাভেদকে ছক্কা হাঁকিয়ে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন জাকির। ৫৮ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে জাকিরের ব্যাটে দেখা মিলে গুরুত্বপূর্ণ ফিফটি। পরের ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয়ের অর্ধশতক। এই দুই ব্যাটারের জোড়া ফিফটিতে শুরুর বিপর্যয় সামলে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফিফটির পর আরও মারমুখী হয়ে ব্যক্তিগত ৬২ রানে ক্যাচ তুলেন জাকির হাসান। সৌম্য সরকার এসেই ব্যাট চালিয়ে খেলতে থাকেন। অপরপ্রান্তে জয়ও আছেন ছন্দে।
সৌম্য সরকার নিশ্চিতভাবেই ছিলেন ফিফটির পথে। কিন্তু পুল খেলতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়েছেন ক্যাচ আউটের শিকার। ৪২ বলে ৪৮ রান করে ফিরলেন সৌম্য সরকার। সমান ৩ ছয় ও চারে সাজানো এই ইনিংস। ধুঁকতে থাকা আকবর আলি ১০ বলে ৪ করে নিয়েছেন বিদায়। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে জয় ছুটে চলেন শতকের পথে। ইনিংসের ৪৬ তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। কিন্তু পরের ওভারের শুরুতেই শট খেলতে গিয়ে হন ক্যাচ। ১২টি চার ও ২ ছক্কায় বরাবর একশো রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন জয়।
এরপর ব্যাট হাতে ক্যামিও ইনিংস খেললেন শেখ মেহেদী হাসান। তাকে সঙ্গ দেন রাকিবুল হাসান। শেষের ওভারগুলোতে চার-ছয়ের বন্যা বইয়ে দেন মেহেদী। আর তাতেই বাংলাদেশ টপকায় তিনশো রানের গণ্ডি। মেহেদী ৩৬ ও রাকিবুলের ১৫ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ পায় ৩০৮ রানের সংগ্রহ।