

ওয়েস্ট জোন-কে হারিয়ে ভারতের দলীপ ট্রফির শিরোপা জিতেছে সাউথ জোন। ২০১০-২০১১ আসরের পর এবার ২০২৩-২০২৪ আসরে এসে শিরোপার স্বাদ গ্রহণ করল ভারতের এই জোনটি। শক্ত প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট জোনকে হারের তিক্ততা দিয়ে ১৪ বারের মতো ভারতের এই ঘরোয়া আসরে শিরোপা জিতে নেয় সাউথ জোন। পঞ্চম দিনে এসে অর্জিত হয় ৭৫ রানের জয়।
দলীপ ট্রফির ইতিহাস বহু পুরোনো। প্রথম আসরটা হয়েছিল ১৯৬১-১৯৬২ সালে। সাধারণত ভারতের ভৌগোলিক অঞ্চলভিত্তিক এই টুর্নামেন্টটি টেস্ট ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কুমার শ্রী দলীপ সিংজি, যিনি দলীপ নামে পরিচিত- তাঁর নামানুসারেই দলীপ ট্রফির নামকরণ করা হয়েছে। তিনি মূলত ভারতীয় কিন্তু ভারতীয় দল গঠনের আগে এই ব্যক্তি ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলেছেন। বলা হয়, তিনি ভারতের প্রথম ‘গ্রেট’ ব্যাটসম্যান। ফার্স্ট ক্লাসের রান ১৫ হাজার, প্রায় ৫০ গড়ে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকে ১২ টেস্টে ৯৯৫ রান, সেখানের গড় ৫৮.৫২! গ্রেট তাঁকে কেন বলা হয়, তা এ থেকে অনেকটা বুঝতে পারার কথা।
বেঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে প্রথম দিন টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট জোন। সাউথ জোন ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে খুব আশানুরূপ কিছু করতে পারে না। সাউথের অধিনায়ক হানুমা বিহারি সর্বোচ্চ ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন। তিলক ভার্মা ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল খেলেন যথাক্রমে ৪০ ও ২৮ রানের ইনিংস। ওয়াশিংটন সুন্দর ২২ রানে ছিলেন অপরাজিত। এক্ষেত্রে সব উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ২১৩ রান তুলতে সক্ষম হয় সাউথ জোন।
ওয়েস্ট জোন নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আরো বিপর্যয়ে পড়ে। পৃথ্বী শ ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন বটে শুরুতে নেমে। কিন্তু আর কোনো ব্যাটারকে আলাদাভাবে হাল ধরতে দেখা যায়নি। চেতেশ্বর পুজারা, সূর্যকুমার যাদব সকলেই ব্যর্থ দিন গোনেন। পৃথ্বীর পর উইকেটরক্ষক হারভিক দেশালের ২১ রান ছিল প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট জোনের সর্বোচ্চ। অবশ্য ওয়েস্ট জোনের এই বিপর্যয়ে সাউথের বোলার বিদ্বথ কাভেরাপ্পার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এই পেসার একাই নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। একেবারে সাউথকে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাকে বলে।
সাউথ জোন ৬৭ রানের লিড নিয়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শুরু করে। এই ইনিংসেও কম রানেই সকল উইকেটের পতন ঘটে তাদের। অধিনায়ক হানুমা বিহারি তাঁর দায়িত্ব এবারো পালন করেন। খেলেন ৪২ রানের ইনিংস। উইকেটরক্ষক রিকি ভুঁই ও ওয়াশিংটন সুন্দর দুজনেই খেলেন ৩৭ রানের ইনিংস। মায়াঙ্ক আগারওয়াল করেন ৩৫ টি রান। এরকম কিছু খুচরা সংগ্রহে সাউথের স্কোর গিয়ে ঠেকে ২৩০ রানে। ফলে ওয়েস্ট জোনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২৯৮ রানের। ওয়েস্টের পক্ষে স্পিন অলরাউন্ডার ধর্মেন্দ্রাসিন জাদেজা ৫ টি উইকেট তুলে নেন।
কম স্কোরের এই ফাইনালে ২৯৮ লক্ষ্যমাত্রা কম নয়। বরং বেশি। ওয়েস্ট জোন সেই লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে পৃথ্বী শ ও হারভিক দেশালের উইকেট হারিয়ে বসে দলীয় ১৮ রানে। তবে একপ্রান্ত আগলে ছিলেন অধিনায়ক প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল। সরফরাজ খান যখন ৪৮ রানে ফেরেন দলীয় রান তখন ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৭। চতুর্থ দিনে প্রিয়াঙ্কের হাত ধরেই লড়াই বাঁচিয়ে রেখেছিল ওয়েস্ট জোন। খেলা গড়ায় পঞ্চম দিনে।
পঞ্চম দিনে ওয়েস্টকে জিততে হলে করতে হতো ১১৬ টি রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। তবে এদিন প্রিয়াঙ্ক ফিরলেন একেবারেই জলদি। শতকটিও তোলা হলো না তাঁর। ২১১ বল খেলে ৯৫ রানে ফেরেন এই অধিনায়ক। অন্যরা আর তেমন সুবিধা করতে না পারায় ২২২ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট জোন। ফলে ৭৫ রানের পরাজয় বরণ করতে হয় দলটিকে। সাউথ জোনের পক্ষে ভাসুকি কৌশিক ও সাই কিশোর ৪ টি করে উইকেট নেন।
নর্থ, সাউথ, ইস্ট, ওয়েস্ট, সেন্ট্রাল ও নর্থ ইস্ট- এই ৬ দল নিয়ে দিলীপ ট্রফির আসর হয়ে থাকে। এবারো এই ছয়টি দল অংশগ্রহণ করেছিল। টুর্নামেন্ট শেষে সাউথ জোন শিরোপা অর্জন করে নিল। রানারআপ হিসেবে এই আসর শেষ করল ওয়েস্ট জোন। ফাইনাল ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও একইসাথে টুর্নামেন্ট-সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন সাউথ জোনের পেস বোলার বিদ্বথ কাভেরাপ্পা। ফাইনালে ৮ উইকেট এবং পুরো টুর্নামেন্ট খেলে ১৫ টি উইকেট নিজের পকেটে পুড়েছেন কর্ণাটকের এই তরুণ।