

টি-টোয়েন্টির অন্যতম শক্তিধর দল আফগানিস্তান এবার বাংলাদেশে হোয়াইটওয়াশ। তবে সহজ ম্যাচ কঠিন করেই জিততে হল সাকিব আল হাসানদের। বৃষ্টির কারণে ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে আফগানরা ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে জমা করে ১১৬ রান। বৃষ্টি আইনে ২ রান বেড়ে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১১৯ রানের। লিটন-আফিফের উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ পায় উড়ন্ত সূচনা। তবে মুহূর্তেই পালটে যায় দৃশ্যপট। কঠিন হয়ে যাওয়া ম্যাচ সহজ করে আনলেন অধিনায়ক সাকিব। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৬ উইকেটে ম্যাচ জেতান শামীম পাটোয়ারী। ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কার অধিনায়ক সাকিবের হাতে।
সিলেটে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১১৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় লিটন দাসের সঙ্গী আফিফ হোসেন ধ্রুব। আজকের ম্যাচসহ ৬৩ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম ওপেনিংয়ে আফিফ। স্ট্রাইকে থাকা লিটন দাস ফজলহক ফারুকির প্রথম ওভারেই পরপর দুই বাউন্ডারির পর সিঙ্গেল নিয়ে স্কোরবোর্ডে তুলেন ৯ রান। পরের ওভারে অভিষিক্ত ওয়াফাদার মোমান্দকে পেয়ে আরও চড়াও হন লিটন। তাকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্বাগত জানান হ্যাটট্রিক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে।
লিটন-আফিফ মিলে ওয়াফাদারের ৮ বলের এই ওভার থেকে সংগ্রহ করেন মোট ১৯ রান। ২ ওভারে বাংলাদেশের রান ২৮, লিটন একাই করেন ১০ বলে ২২। মুজিব-উর রহমানও বল হাতে এসেই হজম করেন লিটনের বাউন্ডারি। এরপর আফিফের ব্যাট থেকে আসে বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম ছক্কা। উদ্বোধনী জুটির দাপটে পাঁচ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের রান ৫০।
ঝড়ো শুরুর কল্যাণে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট নেমে আসে তখন ৭২ বলে ৬৯ রানের। টি-টোয়েন্টিতে যা খুবই সহজ সমীকরণ, লিটন-আফিফের ব্যাটে তা হয়ে যায় আরও সহজ। ওয়াফাদার নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে ওভারের শেষ বলে ফের তাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় আফিফ, শর্ট বল পেয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে হাঁকান বিশাল এক ছয়।
পরের দুই ওভারে নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান। রাশিদ খানের ওভার থেকে আসে পাঁচ রান, ওমরজাইকে পাঁচ বল ডট খেলে শেষ বলে দৌড়ে এক নেন লিটন। দারুণ শুরু করেও লিটন হয়ে যান ধীরগতির। পরের ওভারে তো হারিয়ে বসেন উইকেটই। প্রথম দুই ওভারেই পাঁচ চার হাঁকানো লিটন দশতম ওভারের শুরুর বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তখন নামের পাশে ছয় চার। লিটন নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রাশিদ খান কভারে দাঁড়িয়ে কিভাবে নিলেন এই ক্যাচ। ১০ বলে ২২ করা লিটনের রান তখন ৩৬ বলে ৩৫।
এক বল পর আফিফকেও তুলে নেন মুজিব। তিন বলের ব্যবধানে নেই বাংলাদেশের চমক দেখানো দুই ওপেনার। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ২০ বলে ২৪ রান। ওভারে মাত্র ৩ রান খরচায় মুজিবের ঝুলিতে জোড়া উইকেট। আজমতউল্লাহ ওমরজাই এসে বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন। তার বলে স্টাম্প উড়ে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর। বাউন্ডারিবিহীন ইনিংসে শান্ত ৬ বলে করেন ৪ রান।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটে চড়েই ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। সাকিবকে এসে সাপোর্ট দেন তাওহীদ হৃদয়। মুজিবের চতুর্থ ওভার থেকে এই জুটির ব্যাটে আসে ১২ রান। পরের ওভারে রাশিদ খানকে লং অন দিয়ে হাঁকালেন ওভার বাউন্ডারি। বল উড়িয়ে নিয়ে ফেলেন ওয়েস্টার্ন গ্যালারিতে। ম্যাচের আগে ব্যাটিং অনুশীলনে করা শটের যেন কার্বন কপি। সাকিব ম্যাচ শুরুর আগে একাধিকবার প্র্যাক্টিস করা শট ম্যাচে খেললেন দুর্দান্ত রাশিদ খানকেই।
ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে তাওহিদ হৃদয় ছয় মারলেন আজমতউল্লাহকে। পরের বলেও খেলতে যান ওভার বাউন্ডারি, তবে এ যাত্রায় ব্যর্থ হয়ে ক্যাচ তুলেন হৃদয়। তার ইনিংস থামে ১৯ রানে। এরপর বাকি কাজটা শামীম হোসেনকে নিয়ে সারেন সাকিব। ওয়াফাদারের করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই ৪ হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে ম্যাচ জেতান শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
বৃষ্টি নামার আগে আফগানিস্তানের ইনিংসের ৭.২ ওভারে স্কোরবোর্ডের অবস্থা ৩৯/২। দেড় ঘণ্টার বেশি সময়ের বিরতির পর জানা গেল ম্যাচ শুরু রাত ৮ টা ১৫ মিনিটে। কমে গেল ওভার, দুই দলের ইনিংস ১৭ ওভার করে। সর্বোচ্চ ২ বোলার করতে পারবে ৪ ওভার। আফগানিস্তানের ইনিংসের বাকি থাকে ৯.৪ ওভার। ম্যাচ মাঠে ফিরতেই সাকিবের বাকি ওভারের পর নাসুম আহমেদ জোড়া উইকেটের সুযোগ তৈরি করেও পাননি উইকেটের দেখা।
পরপর ক্যাচ ছাড়লেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। মুহূর্তেই নবীর পাঠানো বুলেট গতির শট কভারে দাঁড়িয়ে ধরতে পারেননি সাকিব। পরের বলে উইকেটের পেছনে থেকে গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি লিটন। ব্রেকথ্রু আনতে অবশ্য দেড়ি করেনি বাংলাদেশ। পরের ওভারে মুস্তাফিজ এসেই বিদায় করেন ১৬ রানে থাকা মোহাম্মদ নবীকে। ভয়ংকর হয়ে উঠেন ইব্রাহিম জাদরান। সফরের আগের পাঁচ ম্যাচে শরিফুলের হাতে বিদায় নেওয়া ইব্রাহিম আজ শরিফুল ম্যাচে না থাকায় খেলতে থাকেন স্বাছন্দে। তবে সাকিব আজ সারেন শরিফুলের কাজ।
ইনিংসের ১১তম ওভারে এসে অধিনায়ক সাকিবের জোড়া আঘাত, ফিরে যান দুই জাদরান। ওভারের প্রথম বলে তুলে নেন ইব্রাহিমের উইকেট। শেষ বলে ফেরান নাজিবউল্লাহ জাদরানকে। ইব্রাহিম ব্যক্তিগত খাতায় ২২ রান তুললেও নাজিবউল্লাহ পাননি ৫ রানের বেশি। ১১ ওভারে আফগানদের রান ৬৭, উইকেট খুইয়ে ফেলে পাঁচ।
এরপর করিম জানাত আর আজমতউল্লাহ ওমরজাই মিলে দারুণ খেলতে থাকেন। তবে এই জুটিও ভাঙেন মুস্তাফিজ। ২৫ রানে থাকা ওমরজাইকে ফেরাতে ডিপ থার্ডে দাঁড়িয়ে নিরাপদভাবে ক্যাচ লুফে নেন শামীম হোসেন। তাসকিন আহমেদের ঝুলিতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। তবে সেরা একাদশে থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ পাননি বল করার সুযোগ। শেষদিকে লণ্ডভণ্ড হয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের ইনিংস থামে ১১৬ রানে।
প্রথম টি টোয়েন্টির মতো আজও ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই কানায় পূর্ণ হতে শুরু করে ১৮৫০০ ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামটি। মাঠের বাইরে টিকিটের জন্য হাহাকার করতে থাকা দর্শকের সংখ্যাও ভেতরের চাইতে নেহাত কম নয়। টস জিতে আগে বোলিং নেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইনিংসের শুরুটা করেন তাসকিন আহমেদকে দিয়ে। তাসকিন যেন হয়ে গেলেন ট্রেডমার্ক সাকিব আল হাসান; আগের বলে ছক্কা হজম করে পরের বলে উইকেট শিকার।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৫ বলে ৮ করে বিদায় নিলে তাসকিন আহমেদের ঝুলিতে যায় ৫০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট। সাকিব, মুস্তাফিজের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে অনন্য এই উইকেট শিকারির ক্লাবে তাসকিন নাম লেখালেন। দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদ এসে খরচ করেন ২ রান। পরের ওভারে আবারও তাসকিনের আঘাত। এবার উইকেট হারান ৪ রান করা হযরতউল্লাহ জাজাই। তাসকিনের লাফিয়ে উঠা বলে কাট শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ হন জাজাই। স্কোরবোর্ডে ১৬ রান উঠতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে আফগানিস্তান।
মোহাম্মদ নবী ফিরতে পারতেন গোল্ডেন ডাক হয়ে। তাসকিন নবীকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি করেও শেষপর্যন্ত পাননি উইকেটের দেখা। ৫ ওভারে ২১ রানে থাকা আফগানিস্তান পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বিপক্ষে ১৩ রান নিয়ে মোট ৩৪ রানে শেষ করে শুরুর ৬ ওভার। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসে যখন ৭.২ ওভার তখন নামে বৃষ্টি। আজ আফগানিস্তানের ইনিংসেরও একই ওভারের সময় বেরসিক বৃষ্টির হানা।
মাঠে-ঘাসে বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ার শব্দ, অনেকটা আফগানদের আর্তনাদের মতো। ২৬ মিনিট পর অবশ্য থামে সিলেটের এই চিরচেনা বৃষ্টি। কাভার সরিয়ে মাঠ শুকানোর কাজে ব্যস্ত হন গ্রাউন্ডসম্যানরা। এর মাঝেই অনফিল্ড আম্পায়াররা দুই বার মাঠ পরিদর্শন করে গেছেন। পরবর্তী পর্যবেক্ষণের সময় নির্ধারিত হয় রাত ৮টা ৫ মিনিটে। তখনই জানা যায় ম্যাচ শুরুর সময়।