

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভরাডুবি ছাড়া একে আর অন্যকিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনেই ইনিংস ও ১৪১ রানের হার উইন্ডিজদের। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ১২ উইকেট শিকার খুব সহজেই ক্যারিবিয়ানদের গুটিয়ে দিতে সহায়ক ছিল। ডোমিনিকার প্রথম টেস্ট তাই ভারতের পক্ষে। অভিষেক টেস্টে ১৭১ রান করা জাইসাওয়াল পেলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
উইন্ডসোর পার্কে রোহিত শর্মার শতক এবং ইয়াশভি জাইসাওয়ালের ১৭১ রানের সুবাদে বড় সংগ্রহ তুলতে সক্ষম হয়েছিল ভারত। ভিরাট কোহলি ও রবীন্দ্র জাদেজা মিলেও যোগ করেছিলেন যথাক্রমে ৭৬ ও ৩৭ রান। জাদেজা ও ইশান কিষান মাঠে থাকাকালীন ভারতের পক্ষ থেকে ইনিংসের ঘোষণা আসে। তখন সংগ্রহটা ৪২১, ৫ উইকেট হারিয়ে। লিডও বলার মতো, ২৭১।
প্রথম ইনিংসের বিশাল লিড নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। মাথায় চাপ, এর আগে ১৫০ রানেই অল আউট হয়েছিল দল।
পিচে কিছুটা টার্ন আর বাউন্স ছিল স্পিনারদের জন্য। ফলে রোহিত শর্মা অশ্বিন ও জাদেজাকে ব্যবহার করতে থাকে চতুর্থ ওভারের পর থেকেই। স্বাগতিকদের প্রথম চার ব্যাটারকে নিজেদের স্পিনের কব্জায় নিয়ে আসেন অশ্বিন ও জাদেজা।
দলীয় ৮ ও ২২ রানে তাগেনারিন চন্দরপল এবং ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের উইকেট তুলে নেন অশ্বিন। এরপর দলীয় ৩২ রানে আরো দুই উইকেটের পতন ঘটে। জার্মেইন ব্ল্যাকউড ও রেইমন্ড রেইফার। সে উইকেট দু’টি নেন জাদেজা। ৩২ রানে প্রথম ৪ ব্যাটসম্যান হারিয়ে তখন অনেকটাই দিশেহারা উইন্ডিজ দল।
আলিক আথানেজ ও জশুয়া দা সিলভা তখন চেষ্টা করতে থাকেন কিছুটা ভিত গড়ার। তবে দুজন মিলে ৫০ বলের বেশি জুটি গড়তে পারেননি। ৫০ বলে ২৬ রানের জুটি ভাঙ্গে মোহাম্মদ সিরাজ। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন দা সিলভা কে। আলিক আথানেজ একপাশ আগলে খেলতে থাকেন। তবে ৪৪ বলের বেশি খেলতে পারেননি। অশ্বিনের বলে ৪৪ বলে ২৮ রান করে শর্ট লেগে জাইসাওয়ালের কাছে ক্যাচ তুলে দেন।
রাকিম কর্নওয়ালের আগে আলজারি জোসেফ ক্রিজে আসেন। ক্রিজে তখন জোসেফের সাথে জেসন হোল্ডার। অশ্বিনকে ওভার বাউন্ডারিও হাঁকান জোসেফ। তবে আরেকবার স্লগে চেষ্টা করতে করতে গেলে ডিপ মিড-উইকেটে ধরা পড়েন শুবমান গিলের হাতে। দলীয় ১০০ রানে ৭ উইকেটের পতন ঘটে ওয়েস্ট উইন্ডিজের।
অশ্বিন তাঁর পঞ্চম উইকেট শিকার করেন কর্নওয়ালের মাধ্যমে। ওভার দ্য উইকেটের ডেলিভারিতে শর্ট লেগে ধরা পড়েন কর্নওয়াল। পরের দুই লেজের ব্যাটার কেমার রোচ এবং জোমেল ওয়ারিকানকে ফিরিয়ে ৭ উইকেট অর্জন করে নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। জেসন হোল্ডার তখনো ৫০ বল খেলে ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু দল ততক্ষণে ১৩০ রানে অল আউট।
এর আগে সকালে ৩১২/২ এমন অবস্থায় ইয়াশভি জাইসাওয়াল ও ভিরাট কোহলি ভারতের ইনিংস শুরু করেন। জাইসাওয়াল কোনো ধরনের অসুবিধা ছাড়াই সিমারদের স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন। পাশাপাশি দ্রুত রান তুলতে থাকেন। যখন ১৫০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন, তখন তিনি ভারতের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে এই অর্জন করছেন। বাকি দুইজন শিখর ধাওয়ান (১৮৭) এবং রোহিত শর্মার (১৭৭) এই অর্জন রয়েছে।
ইতিমধ্যে কোহলির সাথে জাইসাওয়াল গড়েন ১০০ রানের জুটি। আলজারি জোসেফের ওভারে ৫ বল ডট খেলার পর, শেষ বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন ইয়াশভি জাইসাওয়াল। নিজের ইনিংস শেষ করেন ১৭১ (৩৮৭) রানে।
অজিঙ্কা রাহানে কেমার রোচের বলে ফেরেন ৩ রান করে। ১৪৭ বলে কোহলি তাঁর হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান। টেস্টে তাঁর তৃতীয় ধীরগতির হাফ-সেঞ্চুরি এটি।
কোহলি আর জাদেজা মিলে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। ফলে দলীয় রানসংখ্যা ৪০০ ছাড়ায়। বিরতির পর ৭২ রানে কেমার রোচের বলে এজ হয়ে দা সিলভার হাতে পড়েন কোহলি। তবে এ যাত্রায় বেঁচে যান, সিলভা ক্যাচটি লুফে নিতে পারেননি। তবে ৭৬ রানের মাথায় কর্নওয়ালের বল ফ্লিক করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ধরা পড়েন কোহলি। এবার ফিরে যেতে হয় তাঁকে।
আরেক অভিষিক্ত ইশান কিষান তাঁর রানের খাতা খুলতেও বেশ দেরি করেন। ব্যাটে তাঁর প্রথম রান আসে ২০ বল খেলে। সেই রানের পর রোহিত শর্মা ইনিংস ঘোষণা করেন। রবীন্দ্র জাদেজা ক্রিজে ছিলেন ৩৭ রান করে।
প্রথম টেস্টে বড় পরাজয়ের শিকার হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় টেস্ট আগামী ২০ জুলাই, কুইন্স পার্ক ওভাল, ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫০/১০ (আথানেজ ৪৭, অশ্বিন ৫/৬০, জাদেজা ৩/৩৬) – ভারত ৪২১/৫; ডিক্লেয়ার (জাইসাওয়াল ১৭১, রোহিত ১০৩, কোহলি ৭৬) – ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫০/১০ (আথানেজ ২৮, অশ্বিন ৭/৭১, জাদেজা ২/৩৮)
ফলাফল: ইনিংস এবং ১৪১ রানে ভারত জয়ী।