

যারা বাংলাদেশকে করেছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, তাদের হাতেই গতরাতে আফগানিস্তানের নির্মম পরাজয়। তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, শরিফুল ইসলাম; এই তরুণ ত্রয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে এসে এখন জাতীয় দলেও রাখছেন বড় ভূমিকা। আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাত ম্যাচের শেষ ওভারে এসে বাংলাদেশের জয়ের সহজ সমীকরণ কঠিন করে দেন। তবুও উইকেটের অপরপ্রান্তে থাকা তাওহীদ হৃদয়ের বিশ্বাস ছিল জয়ের ব্যাপারে। কারণ উইকেটে যে তার বন্ধু শরিফুল, তার হাতেই হৃদয় দেখেন ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন। এরপর বাকি কাজটা তো শরিফুল করেই দেখালেন, বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দুজনেই মেতে উঠেন উন্মাদ উদযাপনে। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন যুগের সূচনা।
হ্যাট্রিকের পর ওভারের পঞ্চম বল মোকাবিলায় যাওয়ার আগে নতুন ব্যাটার শরিফুল ইসলামকে হৃদয় বলেন- ‘ব্যাটে বল না লাগলেও দৌড় দিস’। জয়ের কতটা ক্ষুধা ছিল হৃদয়ের; এই একটা লাইনই যার সারাংশ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঢুকতেই তাওহীদ হৃদয়ের কাছে প্রশ্ন ছোড়া হয় শেষের নাটকীয়তা নিয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসের ৬.৩ ওভারে লিটন দাস যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন উইকেটে আসেন তাওহীদ হৃদয়। প্রথমে সঙ্গী হন সাকিব আল হাসানের। এরপর দলকে দারুণভাবে টানেন শামীম হোসেনকে নিয়ে। পালটা আক্রমণে ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেওয়া হৃদয় নাটকীয়তায় ভরপুর সেই শেষ ওভারে খেলতে পারেননি একটি বলও। পরিস্থিতি এমন হল শেষ বলটা মোকাবিলা করে দলকে জেতাতে চেয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু শরিফুলকে নিয়ে ছিল তার আত্মবিশ্বাস।
‘আমার কনফিডেন্স ছিল সবার ওপরে। কারণ আপনি যদি দেখেন তাসকিন, নাসুম, শরিফুল এরা খুব ভালোই ব্যাটিং পারে। তাসকিন ভাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এরকম অবস্থায় একটা ম্যাচে টানা দুইটা চার মারার পর আমরা ম্যাচটা জিতে যাই। আর শরিফুলের ওপর ভরসা আমার আগে থেকেই ছিল কারণ আমি জানি ওর সামর্থ্য আছে। আমরা অনূর্ধ্ব ১৯ একসাথেই খেলেছি৷ সে বড় বড় ছয়ও মারতে পারে। শরিফুল আসা পর্যন্ত আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। শরিফুলকে বলেছিলাম যদি বল ব্যাটে নাও লাগে তাহলেও তুই দৌঁড় দিবি। শেষ মূহুর্তে বলেছিলাম যে ম্যাচটা তুই জিতাবি। ও বলছিল হ্যা ইনশাআল্লাহ।’
শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য তাওহিদ হৃদয় ও মেহেদী হাসান মিরাজের সামনে ৬ বলে ৬ রানের সমীকরণ। করিম জানাতের করা ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মিরাজ। বাকি পাঁচ বলে দরকার কেবল ২। শেষ বেলায় এসেও আফগানরা ফিরে আসে ম্যাচে। পরের বলে অবশ্য পুল করতে গিয়ে ক্যাচ আউটে বিদায় নেন মিরাজ। তাসকিন আহমেদও করলেন একই ভুল, ওয়াইড বল খেলতে গিয়ে হলেন কিপারের হাতে ক্যাচ। নাসুম আহমেদ পুল করতে গিয়ে তুলেছেন ক্যাচ৷ হ্যাটট্রিকের আনন্দে মেতে উঠেন করিম জানাত, পুরো আফগান স্কোয়াড।
তবুও ভয় ধরেনি তাওহীদ হৃদয়ের মনে। কারণ তিনি যে ভালোভাবেই জানেন শরিফুল ইসলামও এই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। শোনালেন শরিফুলের হিরো হওয়ার বিহাইন্ড দ্য সিন।
‘স্বাভাবিক ছিলাম। কারণ আমি জানি রান লাগে ২। একটা বলের খেলা। বল যদি ব্যাটে লাগে তাহলে অটোমেটিক ১-২ রান হয়ে যাবে। সবসময় ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করেছিলাম তখন। এবং যেহেতু আমি নন-স্ট্রাইকে ছিলাম, আমি সবসময় চেষ্টা করছিলাম আমার পার্টনার যারা ছিল তাদেরকে তথ্য দেওয়ার বোলার কী করতে পারে।’
নিজের অনবদ্য ৪৭ রানের হার-না-মানা ইনিংস, কিংবা শামীম পাটোয়ারীর টর্নেডো ইনিংস, শরিফুলের দারুণ ফিনিশিং। ব্যাচমেটদের এই জয়ের কৃতিত্ব দিলেও কোনো ভুল হত না। তবুও হৃদয়ের মুখে শোনা গেল পুরো দলের প্রশংসা। এখানেই যে হৃদয় অনন্য। এভাবেই তো হৃদয় কেড়ে নেন সতীর্থদের হৃদয়।
‘আমি মনে করি, আমরা আজকের ম্যাচে সবাই অবদান রেখেছি। শুধু শরিফুল, আমি বা শামীম না৷ শুরু থেকেই দেখেন, তাসকিন, সাকিব থেকে শুরু প্রত্যেকটা বোলার ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন। সবাই ফিল্ডিংয়ে… সবদিক থেকেই অবদান রেখেছে। বিশেষ করি আমাদের কথা বলেন, আমরা সবসময় দল হিসেবে, দলের জন্য যতটা অবদান রাখা যায় তা চেষ্টা করি সেরাটা দিয়ে। এবং প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ই তাই করে। আমরা দেশের জন্য খেলছি। আমাদের সবসময় মাথায় একটাই লক্ষ্য থাকে, আমরা দেশের জন্য খেলব ও দেশকে ভালো কিছু এনে দিবো।’
শেষপর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ পায় ২ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়। আর তাতেই সাকিব, লিটনরা সিরিজে যায় এগিয়ে।