

টসের ঠিক আগে বৃষ্টিরা ক্ষান্ত যায়। মেঘেদের বুকভেদে ঠিকরে ছড়িয়ে পড়ে মিষ্টি রোদ। সিলেটের চিরচেনা এই রোদ-বৃষ্টির খেলা শেষে বাইশগজে বল হাতে তাসকিন, শরিফুলদের দাপট। টাইগার বোলারদের তান্ডবের সাথে সিলেটের কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারির গর্জনে দিশেহারা হয়ে উইকেটের মিছিল দেখায় আফগানিস্তান। মোহাম্মদ নবী কেবল ব্যতিক্রম, দাপুটে ব্যাটিংয়ে ফিফটি হাঁকিয়ে থাকেন অপরাজিত। শেষপর্যন্ত আফগানিস্তানের ইনিংস থামে ১৫৪ রানে।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৫৫ রান। সিলেটি দর্শকদের উন্মাদনার জন্যে হলেও ম্যাচ জিতিয়ে আসা দরকার টাইগার ব্যাটারদের।
ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই কানায় পূর্ণ হতে শুরু করে ১৮৫০০ ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামটি। মাঠের বাইরে টিকিটের জন্য হাহাকার করতে থাকা দর্শকের সংখ্যাও ভেতরের চাইতে নেহাত কম নয়। টস জিতে আগে বোলিং নেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইনিংসের শুরুটা করেন নাসুম আহমেদকে দিয়ে। জাজাই আর গুরবাজ মিলে প্রথম দুই বলে নেন দুই সিঙ্গেল, বাকি ৪ বল ডট দিয়ে যান ঘরের ছেলে নাসুম। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ এসেই এনে দিতে চেয়েছিলেন ব্রেকথ্রু। তিনজন ফিল্ডার একত্রিত হলেন, দুজন উদযাপন শুরু করলেন কিন্তু ক্যাচ না হওয়ায় রনি তালুকদার বল করলেন উইকেটকিপারের গ্লাভসে থ্রো। কভার পয়েন্ট থেকে উল্টো দৌঁড়ে গিয়ে বল হাতে পান রনি তালুকদার, কিন্তু শরীর মাটিতে আগে পরে যাওয়ায় তিনি আর ধরে রাখতে পারেননি। এ যাত্রায় বেঁচে যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে নাসুম যেন হয়ে গেলেন ট্রেডমার্ক সাকিব আল হাসান; আগের বলে ছক্কা হজম করে পরের বলে উইকেট শিকার। ঠিক তেমনি নাসুমও ওভারের প্রথম বলে ৬ হাঁকানো হযরতউল্লাহ জাজাইকে পরের বলে বানালেন ক্যাচ আউট। ১০ বলে ৮ করে জাজাই ফিরে গেলে ভাঙে ১৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। রীতিমতো ধুঁকতে থাকা গুরবাজ শেষপর্যন্ত ফিরলেন তাসকিনের বলেই। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক লো ক্যাচ লুফে নেন মিরাজ। ফেরার আগে ১১ বল খেলা গুরবাজের সংগ্রহে ১৬ রান।
ছক্কা হাঁকানোই যেন আফগান ব্যাটারদের বড় ভুল। সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যান শাস্তি, হারান নিজেদের মহামূল্যবান উইকেট। নাসুমের মতোই রূপ নিলেন শরিফুল ইসলাম। টপ এজে আগের বলে ৬ পাওয়া ইব্রাহিম জাদরান পরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে হয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। ৮ রানের বেশি করতে পারেননি ইব্রাহিম। এবারের বাংলাদেশ সফরে এসে টানা ৪ বার শরিফুলের হাতেই উইকেট হারালেন ইব্রাহিম জাদরান। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৪০ রান করতেই আফগানদের নেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার।
ইনিংসের ৮ম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তুলে নেন উইকেট। করিম জানাত এদিন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে নাজমুল হাসান শান্তর হাতে হয়েছেন ক্যাচ। ভয়ংকর হয়ে উঠার আগেই নাজিবউল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়ে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে আসল কাজটা করেন উইকেটকিপার লিটন দাস। গ্লাভস হাতে লিটনের আরও একটি তীক্ষ্ণ কাজ। এটি এত ভালভাবে করা হয়েছিল যে প্রথম দর্শনে কী ঘটেছিল তা বোঝা কঠিন। বল ব্যাট ছুঁয়ে প্রথমে আঘাত করে লিটনের প্যাডে, এরপর লাফিয়ে উঠা বলটিকে রীতিমতো এক, দুই পা এগিয়ে ক্যাচ নেন লিটন।
মোহাম্মদ নবী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই এরপর দেখান ৫৬ রানের ক্যামিও জুটি। সাকিব ভাঙেন এই জুটি। ১৮ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলা ওমরজাই ছয় হাঁকান ৪ টি। শেষ ওভারে মুস্তাফিজকে ৬ হাঁকিয়ে মাত্র ৩৯ বলে পঞ্চাশ ছুয়েছেন নবী। আর তাতে আফগানিস্তানের রানও পৌঁছে যায় দেড়শ রানে। ইনিংসের পঞ্চম বলে রাশিদ খানকে ফেরাতে লং অনে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩ রানে বিদায় নেন আফগান অধিনায়ক।