

দুই দলের দুইজনের জন্য দিনটা খুব ভালো ছিল। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ আর ইংল্যান্ডের মার্ক উড। একজন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, বেড়েছে দলের রান। আরেকজন নিয়েছেন ৫ উইকেট, কম রানে আটকে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। দুজনের’ই এই অ্যাশেজে প্রথম ম্যাচ। হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়াকে ২৬৩ রানে অলআউট করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এদিকে ইংল্যান্ডও যে হারিয়ে বসেছে ৩ উইকেট, তা মাত্র ৬৮ রানে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ছিল তৃতীয় অ্যাশেজ টেস্টের প্রথম দিন। হেডিংলিতে অনুষ্ঠিতব্য এই টেস্টে বরাবরের মতো টসে হেরে বসে অস্ট্রেলিয়া দল। আর এই টস জয়ে, টানা তিন টেস্টেই টস জিতে নিল ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। দুই দলের একাদশে ছিল কিছু পরিবর্তন। ইংল্যান্ড দলে মঈন আলি, মার্ক উড ও ক্রিস ওকস যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দলে মিচেল মার্শ, টড মার্ফি ও স্কট বোল্যান্ড-কে দেখা যায়।
টস হারার আমন্ত্রণ থেকে প্রথমে ব্যাট করতে আসা দুই অজি ওপেনার একদমই সুবিধা করতে পারেনি। ডেভিড ওয়ার্নার তো প্রথম ওভারেই বিদায় নিলেন। তার ‘সুপরিচিত’ প্রতিপক্ষ বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডের কাছে, ১৬ তম বারের মতো। হাল ধরেন যে উসমান খাজা, তিনি ছিলেন দলীয় ৪২ রান পর্যন্ত। মার্ক উডের প্রথম শিকার হয়ে সরাসরি বোল্ড, গতিতেই যেন পরাস্ত হলেন এই দায়িত্বশীল ওপেনার।
দলীয় ৬১ ও ৮৫ রানের মাথায় আরো দু’টি উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। মারনাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথের পালা শেষ হলো, যথাক্রমে ২১ ও ২২ রানে। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, এই টেস্টে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে স্মিথ তার ১০০ তম টেস্ট খেলছেন। কিন্তু ৮৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কিছুটা দিশেহারা সফরকারী দল।
মিচেল মার্শ শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৯ অ্যাশেজ। এতদিন বাদে তৃতীয় টেস্টের একাদশে তাঁর নামটাও কিছুটা আশ্চর্য করেছে। ক্যামেরন গ্রিনের হ্যামস্ট্রিংয়ের অল্প টান, মার্শকে সুযোগ করে দিয়েছে বা হয়তো মার্শ পরিকল্পনাতেই ছিল।
সে যাইহোক, দলের যখন ৮৫ রানে ৪ উইকেট, মিচেল মার্শ যেন হয়ে এলেন ত্রাণকর্তা হিসেবে। পাশে সঙ্গী ট্রাভিস হেড। দুজন মিলে তুললেন ১৬৮ বলে ১৫৫ রান। মার্শ একাই সেখানে ১১৮ বলে করেছেন ১১৮ রান৷ ১৭ টি চার ও ৪ টি ছয়ে এই রান তুলতে সক্ষম হন তিনি।
মিচেল মার্শ যখন ক্রিস ওকস এর শিকার হলেন, দলের রান তখন ২৪০। এর ৫ রান পরেই ট্রাভিস হেডও নিজের বিদায়ী শট খেললেন একই বোলারের বলে। দলীয় রান তখন ২৪৫, ৬ উইকেট হারিয়ে।
অ্যালেক্স ক্যারি-সহ লেজের ব্যাটাররা মিলে অস্ট্রেলিয়াকে আর মাত্র ২৩ রান তুলে দিতে সক্ষম হয়। বাকি উইকেটগুলো মার্ক উডের পকেটেই আঁটে। এতে করে অস্ট্রেলিয়া দল ২৬৩ রানে সব উইকেট হারিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করে।
একাদশে আসা মার্ক উড ও ক্রিস ওকস দুজনেই উইকেট আদায় করে নিতে সক্ষম হন। উড নেন ৫ উইকেট। ওকস নেন ৩ টি ও স্টুয়ার্ট ব্রড নেন ১ টি উইকেট।
সাধারণত শেষ বিকেলে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বিপদে ফেলবার পরিকল্পনা সাজিয়ে থাকেন ইংল্যান্ড দল ও বেন স্টোকস। গতকাল হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিন, শেষ বিকেলে নিজেরা ব্যাট করতে নেমে কিছুটা বিপদের সম্মুখীন হলেন।
কন্ডিশনের ফায়দা তুলে নিলেন প্যাট কামিন্সরা। দলীয় ১৮ রানেই ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেটকে ফেরান অধিনায়ক কামিন্স। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভস খুঁজে নেয় বল। পরের আঘাতটিও আসে কামিন্সের পক্ষ থেকেই। তিন নম্বরে নামা হ্যারি ব্রুক সেকেন্ড স্লিপে থাকা স্টিভ স্মিথের কাছে নিজেকে সঁপে দেন। দলের রান তখন মাত্র ২২।
দিনের শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন শতক হাঁকানো মিচেল মার্শ। ৩৯ বলে ৩৩ রান করে জ্যাক ক্রলি নিজেকে তুলে দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে।
ফলে ১৯ ওভার খেলে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৮ রানে দিনশেষ করে ইংল্যান্ড দল। বর্তমানে ৪৩ বলে ১৯ রান করে জো রুট এবং ১৯ বলে ১ রান করে জনি বেয়ারস্টো আছেন ক্রিজে। আগামীকাল ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দিন শুরু হবে এই দুই ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে। আর অস্ট্রেলিয়া চাইবে নিজেদের কম সংগ্রহ থেকে যতটা কমে ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দিয়ে কিছু লিড সংগ্রহ করতে।