তামিম ইকবালকে মাশরাফির খোলা চিঠি

মাশরাফি বিন মর্তুজা তামিম ইকবাল বাংলাদেশ
Vinkmag ad

২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক। কাল পর্যন্ত ২৪১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এ সময়কালে বহু উত্থান-পতন দেখেছেন তামিম। আজ তো পুরো ক্যারিয়ারেরই ইতি টানলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিমের বিদায় বেলায় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল সতীর্থ মাশরাফি। দেশের ক্রিকেটের ইতিহাস রচিয়তার স্মৃতিরোমন্থন করলেন।

তামিম যে দেশসেরা ব্যাটার ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ওয়ানডেতে ১৪টি সেঞ্চুরি, ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৮ হাজার ৩১৩ রান তাঁর। টেস্টে ১০ সেঞ্চুরিতে ৫ হাজার ১৩৪ রানের মালিক তিনি। কিংবদন্তি তামিমকে ধন্যবাদ জানানো মাশরাফি তার সিদ্ধান্তকে করলেন শতভাগ সম্মান।

মাশরাফি বিন মর্তুজা তার অফিসিয়াল ফ্যান পেইজে তামিম ইকবালের অবসর ইস্যুতে বললেন নানা দিক। করলেন স্মৃতিচারণ।

‘তামিম, তোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই একান্তই তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউই ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই।

তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে! তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতও আরও অনেকদিন খুঁজবে।

তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরের বার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই।

যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিলি আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করেই জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারারাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনও সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে!

তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করব না, কারণ ওই যে, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত।

তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখব। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে।

তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি।

আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ নির্ভর আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা।

গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তির বিদায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর কেঁদোনাকো

Read Next

বিশ্বকাপের টিকিট এখন ডাচদের হাতে

Total
0
Share