

‘সবাইকে ধন্যবাদ, আশা করি আপনাদের সাথে অন্য কোথাও দেখা হবে।’- নিজ শহর চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে এমনটা বলেই শেষ করেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক রানের মালিক বিশ্বকাপের ৩ মাস পূর্বে অবসরের ঘোষণা দিলেন হুট করেই। বিদায়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে তামিম কাঁদলেন, কাঁদালেনও।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হয়েছে কেবল ১ ম্যাচ। সেই ম্যাচে টাইগাররা হারার পর বিসিবির মিডিয়া থেকে জানানো হয় আজ (৬ জুলাই) কোন সংবাদ সম্মেলন হবে না দলের তরফে। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
শুরুতে বেলা ১২ টায় সংবাদ সম্মেলনটি হবার কথা থাকলেও তা পরে হয় ১ টা ৩০ মিনিটে। কালো এক টি শার্ট ও ক্যাপ পরে সংবাদ সম্মেলনে আসা তামিমকে শুরু করতে বেগ পেতে হয় বেশ। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে মিডিয়াকর্মীদের ছড়াছড়িতে কথা শুরু করতেই বেগ পেতে হচ্ছিল তার। এক পর্যায়ে তো বলে বসেন, ‘আমি কি চলে যাব?’। বারবার বিঘ্ন ঘটায় ‘আমাকে একটু কথা বলতে দেন, আল্লাহর ওয়াস্তে একটু কথা বলতে দেন’ এমন অনুরোধও করতে হয় তামিমকে।
একটু পরেই তামিম দেন বড় ঘোষণা। বলেন, ‘গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ আমার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি, যা কার্যকর হচ্ছে এখন থেকেই।’
তামিম জানান, হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি, ‘এটা হুট করে নেওয়া কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এর পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে। আমার মনে হয় না আমার এখানে বলার দরকার আছে। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময়।’
বিদায়ের ঘোষণা দেবার জন্য কোন স্পিচ লিখে না আনলেও তামিম ধন্যবাদ দেন তার ক্যারিয়ারে অবদান রাখা অনেককেই। নিজের প্রয়াত বাবার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তামিম।
অশ্রুসিক্ত তামিম নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য। আমি জানি না আমি তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি, ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে।’
নিজের প্রয়াত চাচা আকবর খানকে স্মরণ করেন তিনি। তার হাত ধরেই ক্রিকেট বলে খেলা শুরু করেন তিনি। কোচ তপনের কাছে ক্রিকেট শেখা, তাকেও ধন্যবাদ দেন তামিম। নিজের মা, দুই ভাই, স্ত্রী, সন্তানদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ দেন তিনি।
নিজের সতীর্থদের (বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের) ধন্যবাদ দেন তামিম। এত বছর খেলার সুযোগ দেওয়া ও অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এরপর তামিম কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, ‘একটা কথাই বলবো, আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। হয়তো আমি ভালো করেছি, বা করিনি, আমি ঠিক জানিনা। তবে আমি যখনই মাঠে খেলেছি নিজের শতভাগ দিয়েছি।’
‘আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে, তবে দেখেন আমি ঠিক কথা বলতে পারছি না। আমি আশা করব আপনারা পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। এটা সহজ পরিস্থিতি নয় কথা বলার। এত বছর ক্রিকেট খেলেছি, এখন বিদায় বলাটা…’
মিডিয়াকর্মীদের প্রতি তামিম অনুরোধ করেন সব ক্রিকেটারকে ক্রিকেটীয় মানদণ্ডে বিচার করতে। অক্রিকেটীয় ইস্যু সামনে না আনার অনুরোধ জানান।
নিজের অবসরের ইস্যু নিয়ে জলঘোলা হোক এমনটা চান না তামিম। বলে দিলেন, ‘ইটস এ দ্য এন্ড’।
‘এটাই অনুরোধ করব আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন, ইট’স এ দ্য এন্ড। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গু’তাগু’তি কইরেন না। কেনো, কি, আরও কি হতে পারত, না পারত… এটার শেষ এখানেই হোক।’
‘আমি সবসময় বলেছি দল সবসময় যেকোন ব্যক্তির চেয়ে বড়। দলেই ফোকাস করি সবাই। সিরিজে ২ ২ ম্যাচ বাকি আছে, আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই সিরিজ জেতা উচিত। এবং তারপর সামনে দুইটি মেজর ট্রফি (এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ) আছে।’