

জনি বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অ্যালেক্স ক্যারি এভাবে কোনো ব্যাটারকে আউট করতে পারেন কি পারেননা, তা নিয়েও নানা আলাপ হচ্ছে। লর্ডসের মাঠ থেকে শুরু করে লং রুম পর্যন্ত এর উত্তাপ ছড়িয়েছে। কথার দ্বন্দে জড়িয়েছেন এমসিসি মেম্বাররাও। এ বিষয়ে ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও টুইট করেছেন।
লর্ডস টেস্টের পঞ্চম দিন। ১০ রানে স্ট্রাইক প্রান্তে তখন বেয়ারস্টো। অপরপ্রান্তে ছন্দে থাকা বেন স্টোকস। ক্যামেরন গ্রিন বোলিং প্রান্তে। ওভারের শেষ বল, বাউন্সার। ‘ডাক’ করলেন ব্যাটার। বল চলে গেল উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভসে। সে বল ছুড়ে মারলেন তিনি। দেখা গেল ব্যাটার নিজের জায়গা ছেড়ে বেড়িয়ে গেছেন তখন। প্রান্ত বদল বা আলাপের প্রয়োজন, সে যাইহোক। সেই ছুঁড়ে দেওয়া বল আঘাত হানে স্টাম্পে। উল্লাস করতে থাকেন অজি খেলোয়াড়েরা। তবে কি বেয়ারস্টো আউট হলেন?
হলেন কি হলেন না, সেই সিদ্ধান্ত চলে গেল টিভি আম্পায়ারের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রাও খুব একটা নিশ্চিত নন। তবে তারা জানেন, একটি ভালো সম্ভাবনা তৈরি করা গেছে। মারাইস এরাসমাস দেখলেন ঘটনা। টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে থেকে তিনি আউটের সিদ্ধান্ত জানালেন।
অর্থাৎ, সেই বল ‘ডেড’ হওয়ার আগেই ক্রিজ থেকে বেড়িয়ে যাওয়া এবং ব্যাটারের উইকেট ভেঙে দেওয়া– দুই ঘটনার সমীকরণ বেয়ারস্টোর পক্ষে নেই। তাই ফিরে যেতে হবে তাকে। করার নেই আর কিছুই। আহত হলেন মনে মনে অবশ্যই।
তবে এই সিদ্ধান্তের রেশ তখনই থামেনি। ইংল্যান্ডের গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা ‘বুউউ’ দিতে থাকেন অজিদের লক্ষ্য করে। পরবর্তী ব্যাটার স্টুয়ার্ট ব্রড যখন মাঠে আসেন, তিনিও নানাভাবে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
“এসবের জন্যই তোমাদের মানুষ মনে রাখবে।”
– ক্রিজে থাকা ব্রড বলছিলেন ক্যারি’কে উদ্দেশ্য করে। স্টাম্প মাইকে এ কথা স্পষ্ট শোনা যায়।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এই ভারতীয় স্পিনার নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটারকে রানআউট করার কারণে নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন এর আগে। তিনি টুইট করেন বেয়ারস্টোর এই আউট নিয়ে।
অশ্বিন লেখেন,
‘আমরা একটা ব্যাপার পেয়েছি যেটা একদম পরিষ্কার। একটা টেস্ট ম্যাচে একজন উইকেটরক্ষক কখনোই এত দূর থেকে স্টাম্প ভাঙতে চেষ্টা করবেনা, যতক্ষণ না তিনি বা তার দল খেয়াল করছে, বল চলে যাওয়ার পর ব্যাটারের ক্রিজ ছেড়ে যাওয়ার ধরনটা– যেরকম বেয়ারস্টো করেছে। অনুচিত খেলা বা স্পিরিট অব দ্য গেমের বিষয় না টেনে, আমাদের প্রশংসা করা উচিত খেলায় স্মার্টনেস দেখানোর জন্য।’
আইসিসি’র নিয়ম অনুযায়ী এই আউটে কোনো ভুল খুঁজে পাওয়া উচিত নয়। উইকেটরক্ষক বল ধরার সাথে সাথেই উইকেট ভেঙে দিয়েছেন। কোনো ধরনের বিলম্ব করেন নি। ব্যাটার যদি এই কাজগুলো করতে থাকেন, যেখানে বল ‘ডেড’ হওয়ার আগেই তিনি ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছেন– তা ব্যাটারের উপরেই বর্তায়। প্রতিপক্ষ নিয়মের মধ্যে থেকে আউট করার চেষ্টা করবেন, এই স্বাভাবিক। তাতে আসলে ‘গেম স্পিরিট’ লঙ্ঘন হয় বলেও মনে হয় না। আইসিসির যে নিয়ম, সেখানে ধারা ২০.১.২ এ স্পষ্ট এ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
এই বিষয়টি নিয়ে লর্ডসের লং রুমেও ঘটেছে আরেক কাণ্ড। মধ্যাহ্ন বিরতিতে অস্ট্রেলিয়া দল যখন সারি ধরে যাচ্ছে নিজেদের ড্রেসিংরুমের দিকে, তখন সেখানে থাকা ‘সম্মানিত’ লর্ডস মেম্বাররা ‘উসকানিমূলক’, ‘গালি-গালাজ’ এবং নানা ধরনের মন্তব্য করেছে বলে অজি খেলোয়াড়েরা দাবি করেছেন। তারা এমসিসি’কে এ নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।