আইসিইসি’র ৩১৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ; সমতার কাঠগড়ায় ইসিবি

3138
Vinkmag ad

ইংলিশ ক্রিকেট বর্ণপ্রথা, পুরুষ-প্রাধান্য পরিবেশ, অভিজাততন্ত্রে আবদ্ধ হয়ে আছে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন ফর ইকুইটি ইন ক্রিকেট’ (আইসিইসি), যারা কিনা ক্রিকেটে সম অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। আমেরিকা পুলিশ হেফাজতে ‘জর্জ ফ্লোয়েড’ এর মৃত্যুর পর ২০২১ সালে এই কমিশনটি গঠন করা হয়।

৩১৭ পৃষ্ঠা, ৪৪ টি প্রস্তাব ও বেশ কিছু উপ-প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবেদনটি গঠিত। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘HOLDING UP A MIRROR TO CRICKET’ – যেখানে প্রায় ৪ হাজার মানুষ, খেলোয়াড়, প্রশাসন, সমর্থক-সহ অনেকের তথ্য ও প্রমাণাদি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘শেকড়ের গভীরে’ ও ‘ছড়িয়ে পড়া’ সমস্যা হিসেবে উক্ত বিষয়গুলো দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন উক্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ পাওয়ার পর একটি ‘পাবলিক অ্যাপোলজি’ ঘোষণা করেছেন। প্রতিবেদনটি তিনি বর্ণনা করেছেন ‘WAKE UP CALL’ হিসেবে। থম্পসন বলেন,

“যারা কখনো ক্রিকেট থেকে বাদ পড়েছেন বা তা তাদের নিজেদের নয় বলে মনে হয়েছে, তাদের কাছে আমি পুরোপুরিভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রতিবেদনের শক্তিশালী উপসংহারগুলো থেকে বোঝা যায় যে, দীর্ঘকাল ধরে নারী এবং কালো মানুষেরা অবহেলিত হয়ে ছিল। আমরা এর জন্য সত্যিই দুঃখিত।”

২০২০ সালে ইংল্যান্ডের সাবেক ইয়র্কশায়ার খেলোয়াড় আজিম রফিক বর্ণবাদের শিকার হন। ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল ক্লাবের অধীনে থাকাকালীন সময়ে এই বিষয়টি চরমভাবে আহত করে তাকে। আদালত পর্যন্ত চলে যায় সে ঘটনা। জানা যায়, জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষ এর পিছনে লুকায়িত। শুনানিতে আজিম বলেন, ‘আমি কি বিশ্বাস করি, বর্ণবাদের কারণে আমার ক্যারিয়ার হারিয়ে ফেলব?’ ‘হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি।’ — আজিম রফিকের এই ঘটনাটি প্রতিবেদনে এসেছে। এবং খুব গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে, আজিমের এই ঘটনার আগে কেনো ইংল্যান্ড বোর্ড এ বিষয়ে সোচ্চার ও পদক্ষেপ মুখাপেক্ষী ছিল না।

নারী ক্রিকেটে সমতার অসামঞ্জস্যতা উঠে এসেছে। যা বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন বিষয়ে। বেতন কাঠামোতে সম-বিধান করার প্রস্তাব এসেছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফি, কেন্দ্রীয় চুক্তির অধীনে বেতন, ঘরোয়া লিগের ম্যাচ ফি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নারীদের বেতন হারে যে অসমতা, তা ঠিক করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এছাড়াও লর্ডসে নারীদের এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ আয়োজন হয়নি। সেই বিষয়টিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। নারী দলকে সবসময় ‘দ্বিতীয় শ্রেণি’ হিসেবে উল্লেখ করার প্রবণতা রয়েছে, সবসময় ছোট করবার প্রবণতা রয়েছে– এই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।

প্রাইভেট স্কুল, প্রতিষ্ঠানে– যারা মূলত পাঠদান করে, সেখানে ক্রিকেট একটি অভিজাত ব্যাপার বলে গণ্য হয়ে থাকে এখনো। প্রাইভেট স্কুলের ছেলে বা মেয়েরা ইংল্যান্ড জাতীয় দলে আলাদাভাবে বিবেচিত হয়। অথচ যাদের জাতিগত বৈচিত্র্যে ভিন্নতা আছে, তাদের অন্যভাবে দেখা হয়ে থাকে। গত ৩০ বছর ধরে এই অনুশীলন চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বছরে এমন দুইটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়– যেখানে অংশ নেয় অভিজাত দু’টি প্রাইভেট স্কুল, অন্য খেলায় দু’টি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়টি সমালোচিত ছিল। এমসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যাতে খেলা দুটি আর না হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আন্দোলনের মাধ্যমে তা বহাল থাকে। আইসিইসি চাচ্ছে, এই খেলা দু’টির বদলে রাজ্য স্কুলের ছেলে ও মেয়ে উভয় দলের ফাইনাল এখানে অনুষ্ঠিত হোক।

এছাড়াও ক্রিকেটে শ্রেণি-বিভাজন, ইসিবির ‘ইকুইটি’ অফিসার নিয়োগ দেওয়া এবং তাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া, খোলা ও স্বচ্ছ অভিযোগ ব্যবস্থা, ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়েছে। ইংল্যান্ড, তথা ইউরোপে বর্ণপ্রথা নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ কানে এসেছে সবসময়ই। আমেরিকাতেও এর চাষ নিতান্তই কম নয়। ইংল্যান্ড বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায় পড়ে সবার আগে। তাদের টনক নড়ানোর জন্য বিশাল প্রতিবেদন ছাপতে হয়, অথচ দায়িত্ব ছিল– এই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে নিয়ে এর পিছনে কাজ করা, কমিটি গঠন ও অদূরভবিষ্যৎ চিন্তা করে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

সুপার ওভারের থ্রিলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও এক পরাজয়

Read Next

২০২৩ বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ করল আইসিসি

Total
0
Share