বাজবল ক্রিকেট: বিনোদন, জয়; নাকি দুটোই?

অ্যাশেজ ১ম দিন
Vinkmag ad

বিনোদন দেওয়া কি জয়ের চেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়ল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন অনেকেই। বাজবলের কথাই বলা হচ্ছে বুঝতে পারছেন। প্রশ্ন রাখছেন ইংল্যান্ডের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার জিওফ্রে বয়কট। তিনি বলছেন, সবকিছুই দারুণ- তবে যেকোনো কিছুর চাইতে ইংল্যান্ডের জয়টা সবচেয়ে বেশি চায় তাদের দর্শকেরা, বয়কট মনে করিয়ে দিলেন সে কথা।

ইংল্যান্ডের সাপোর্টাররা আনন্দ করছেন, দলবেঁধে অ্যাশেজ দেখতে আসছেন। হৈ-চৈ আর ভরপুর আড্ডা, কমতি রাখছেননা কোনো কিছুর। বাজবল- নামে যে ধরন তাদের দল রপ্ত করেছে, তাও হাসিমুখে দেখে প্রতিদিন বাড়ি ফিরেছেন। যদিও পঞ্চম দিন ফিরেছেন দুঃখ নিয়েই। আন্তরিকভাবে সকল বিনোদন গ্রহণ করবার পরেও সাপোর্টার হিসেবে তারা খুব আগ্রহ ভরে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে জিততে দেখতে চায়। পঞ্চম দিনে হার আর মাথা ভরা হিসাব-নিকাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে তারা পছন্দ করে না। বয়কট তাই বললেন, আমরা যতই বিনোদিত হই, অস্ট্রেলিয়া যদি অ্যাশেজ নিয়ে বাড়ি ফিরে, তবে আমরা অসুস্থ বোধ করবো।

ব্যাপারটা এতটাই স্পর্শকাতর অবস্থানে থাকে। বিনোদন, অবশ্যই। বিনোদনের জায়গা থেকে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে ক্রিকেটের কিছু ধাঁধা রয়েছে, যে ধাঁধা- তার মতো করে সমাধান না করলে,তার সমাধান হয় না। বরং আরো জটিল হয়ে যায়। ক্রিকেটকে দাবার মতোই মনে করেন বয়কট। একটা মুহুর্ত আসবে, যখন আপনাকে রক্ষণের নিরাপত্তা দিতে হবে। কিছু সময় আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সেটা গ্রহণ করতে হবে।

আপনি বুদ্ধিমান, অতি-বুদ্ধিমানও নন। তবে তো খুব ভালো। তবে আপনার বুদ্ধির সাথে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রথাগত পন্থাতেও হাঁটতে হতে পারে। সেই পন্থাগুলো বাতিল করে দিলে, আপনার বুদ্ধির সাথে বিবেচনার পার্থক্য তৈরি হবে এবং সেটা আপনার ফলাফলকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারে।

‘শুধু অ্যাটাক অ্যাটাক অ্যাটাক, এটা করো না। ইংল্যান্ডের দরকার কিছুটা কমন-সেন্স এবং বাস্তববাদীতা’

– বলেন ৮২ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটার।

স্টুয়ার্ট ব্রড তার এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, আমরা যদি বিনোদিত হই, সেক্ষেত্রে এটা কোনো ব্যাপার না আমরা যদি হারিও। হয়তো তিনি সরাসরি হারতে চান নি, এটা একটা দর্শনের দেখা হিসেবেই বলেছেন। অবশ্যই তার হৃদয়ের গভীর থেকে তিনি জিততেই চান। তবে সেই দর্শনে কিভাবে নিজেকে অর্পণ করে, কতটুকু অর্জনে মাঠের খেলায় নিজের ভূমিকা রাখবেন- তা আসলে খুব তাৎক্ষণিক। এই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আপনি কীভাবে নিবেন? এটা আপনাকে শুধু নতুন দর্শনের অনুপ্রেরণা দিয়ে নিলে হবেনা, নিতে হবে ইতিহাস, পর্যালোচনা আরো কিছু কিছু বোধের সমন্বয় ঘটিয়ে।

উইকেট ভালো থাকা অবস্থায় সাধারণত যত বেশি রান করে নেওয়া যায়, তত মঙ্গল। প্রথম ইনিংস ইংল্যান্ড দল যেভাবে ঘোষণা করে দেয়, তাতে অতিচমক দেওয়ার ব্যাপারটা ছিল। তা দর্শকদের জন্যে আদতে না হলেও, অস্ট্রেলিয়া দলের জন্য তো বটেই। তবে সে ঘটনায় দর্শকেরা শুধু না, অনেকেই চমকিত হয়েছে। অলি রবিনসন যতটুকু টাচে ছিল এবং জো রুট শতক করে যেভাবে খেলছিল- তাতে আসলে আরো ৪০-৫০ রান হতে পারতো বলে আশা করেছিলেন জিওফ্রে বয়কট। ডিক্লেয়ার দেওয়ার একমাত্র কারণ ছিল, শেষ বিকেলে দুই-একটা অজি উইকেট শিকার। এরচেয়ে ভিন্ন কোনো কারণ সেদিন ছিল না, হয় না।

দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড দলের ব্যাটিংয়ে তাড়াহুড়া পরিলক্ষিত হয়। ৫-৬ করে প্রতি ওভারে আসবার পরেও, আরো রান সংগ্রহের একটা প্রবল ইচ্ছা ব্যাটারদের মধ্যে দেখা যায়। যেটা তাদেরকে বিপদেই ফেলেছে বেশি। বেন ডাকেট, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জনি বেয়ারস্টো, মইন আলী- উল্লেখযোগ্য বিপদগ্রস্ত উইকেট বলে বয়কটের বিবেচনা।

মইন আলীর ব্যাটিংয়ের ধরনে যে অতি আক্রমণাত্মক হবার ব্যাপারটি ছিল, তা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন দর্শকেরা। যদিও তা খুব বেশি দরকার ছিল কিনা, তা জানবেন বাজবলের কারিগরেরা।

তবে দিনশেষে ফলাফলটা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে গিয়েছে। তাই হয়তো কিছুটা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে বলতে চান, বাজবলের নিয়মটাই এই: খেলো, ফলাফল নিয়ে ভেবো না, আক্রমণ করো, বিনোদন দাও, বিনোদিত হও। হয়তো বাজবলের প্রভাব ও অর্জন নিয়ে আলাপ করতে হলে, আরো সময়ের প্রয়োজন। তাই আপাতত এই বিশ্লেষণই সই।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

উসমান খাজার প্রিয় হয়ে রইল এজবাস্টন জয়!

Read Next

চোট-আঘা’তের অস্বস্তিকর এক দিন গেল বাংলাদেশ দলের

Total
0
Share