

অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট শেষ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে। সেই জয়ে উসমান খাজার ছিল বড় অবদান। খাজা নিজেও তা উপলব্ধি করেন। আর তাই কিনা ‘এজবাস্টন জয়’- খাজার জীবনের সেরা ম্যাচ হিসেবেই ধরা দিচ্ছে।
গত ১৬-ই জুন শুরু হওয়া প্রথম টেস্টে ৫ দিনের লড়াই শেষে ২ উইকেটের জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই জয়টা এতটাই আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে অজিদের; অধিনায়ক কামিন্স যেমন বলেছেন, এই ম্যাচটা তার কাছে ‘নিউ নাম্বার ওয়ান ফেভারিট’ হিসেবে থাকবে। খাজা তো বলেই ফেললেন জীবনের সময়কালে খেলা ‘প্রিয়’ ম্যাচ বলুন বা ‘সেরা’ ম্যাচ- তার কাছে হয়ে থাকবে। খাজার কাছে কেনো এই ম্যাচ এত স্পেশাল, তা ম্যাচের চিত্র দেখলেই বোঝা যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে টপ-অর্ডারের ব্যর্থতা ছিল, দ্বিতীয় ইনিংসেও তাই। তবে সকল ব্যর্থতাকে আড়াল করে উসমান খাজা একা লড়ে গেছেন এক পাশ আগলে রেখে। তা যে শুধু প্রথম ইনিংসে, না। দুই ইনিংসেই একই ধরনের ট্যাম্পার, টেকনিক, ডিসিপ্লিন- সবকিছুর এক মিশেল দেখিয়ে গেছেন। প্রথম ইনিংসে ১৪১ (৩২১) আর দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ৬৫ (১৯৭)।
দীর্ঘদিন ছিলেন দলের বাইরে, প্রায় আড়াই বছর। ফিরে এসেই সিডনিতে গতবছর করলেন দুই সেঞ্চুরি। এক ম্যাচেই, অ্যাশেজ সিরিজেই। তো ইংল্যান্ডের সাথে ফেরার পালা স্মরণীয় করে রাখা খাজা, এবারও (২০২৩) তো দলের জয়- বলা ভালো ভিত্তি গড়ে দেওয়ার কাজটা, ভালোই করলেন। অর্জন করলেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড।
‘সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেরটা ছিল স্পেশাল, আর এটা ছিল অবিশ্বাস্য।’ ‘ব্যক্তিগত দিক থেকে দেখলে, এটাকে জয় করা কঠিন কিন্তু দলের দিক থেকে দেখলে এবং জেতাটা, এটা ধরতে গেলে আমার জীবনের সেরা ম্যাচ।’-
এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন উসমান খাজা।
গত বছরের সিডনির সেই পারফর্ম্যান্সের পর, ৩২ ইনিংসে ৭ টি সেঞ্চুরি করেন খাজা, যা ৬৭.৬৬ গড়ে। এই ধারাবাহিকতা তিনি এজবাস্টন পর্যন্ত নিয়ে এলেন। যার ফলাফল ৭৯৬ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করা, ৫১৮ বল মোকাবিলা করা আর দুই ইনিংস মিলিয়ে ২০৬ রান সংগ্রহ করা। উক্ত ধারাবাহিকতা রক্ষায় তার মনোযোগ এবং নিয়মতান্ত্রিক ব্যাটিং সবচেয়ে বড় নিয়ামক বলে মনে হয়। ক্রিজে থাকা অবস্থায় তার ফোকাস, ইংলিশদের নানারূপ ফিল্ড ডিসিশনের কোনো প্রভাব তার উপর পড়তে দেখা যায় নি। ব্যাটে যখন বল চালিয়ে দিয়েছেন, বলও চলে গেছে সব নিরাপত্তা-বলয় এড়িয়ে, জায়গা খুঁজে।
৭৯৬ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫ দিনই কোনো না কোনো সময় ব্যাট করেছেন খাজা। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র ১৩-তম খেলোয়াড় হিসেবে এই গৌরব অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও রিকি পন্টিংয়ের (২০১২) পর টেস্টে ৫০০ বল এর বেশি মোকাবিলা করা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার তিনি।
‘আমি ছোট ছিলাম, আমার হাতে খুব বেশি শট ছিল না। তাই আমি অল্প বয়স থেকেই শিখতাম, কিভাবে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করা যায়। যদিও এটা সবসময় এভাবে কাজ করতো না। তবে আমার মধ্যে এটা আছে।’- বলেন উসমান খাজা।
উসমান খাজা খেলেছেন বিনয়ী ইনিংস। ভুল করেছেন কম। ভুল হয়েছে কম। বলগুলো যেন বুঝে যায়, খাজার ব্যাটে গিয়ে থেমে যেতে হবে তাকে। প্রথম টেস্টে তো মনের মাধুরী মিশিয়ে ইনিংস সাজিয়ে ম্যাচ সেরা হয়ে ফিরলেন, এখন কি সাজাচ্ছেন পরেরগুলির পরিকল্পনা? আগামী ২৮ জুন শুরু হচ্ছে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট, অপেক্ষা করা যাক।