

শুরুটা আশাজাগানিয়া হলেও ধারাবাহিতার বড্ড অভাবে সৌম্য সরকার ছিলেন হারিয়ে যাওয়ার পথে। ফর্ম সৌম্য সরকারের পক্ষে কথা বলছে না। অফ ফর্মে থাকা এই সৌম্যকেই যেন এবার নতুন করে ফেরার পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিশেষ যত্ন নিয়ে তিনি সৌম্যকে ক্লাস করাচ্ছেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে সৌম্য’র আগমনী ট্রেন আসছে। বিশ্বকাপের বছর বলেই অভিজ্ঞ সৌম্য সরকারকে নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন সৌম্য। ফেরার মিশনে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন হেড কোচকে।
ব্যাট হাতে সৌম্য যতক্ষণ উইকেটে থাকেন চারপাশটা নিজের দখলে রাখেন। সামনে যতই বিশ্বমানের বোলার থাকুক না কেন রাজত্ব যেন শুধুই তার। নিজের দিনে প্রতিপক্ষের বোলিং লাইন-আপ ভেঙে দেয়ার সক্ষমতা রাখেন সৌম্য। ওপেনিংয়ে ছিলেন বাংলাদেশের পাগলা ঘোড়া। একজন ওপেনারের ভুমিকা কি হতে পারে সেটা সৌম্য দেখিয়েছেন। এখন অবশ্য হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। তবে নিয়ম করে নিজেকে ঝালাই করছেন পুরনো ফর্ম ফিরে পেতে। সৌম্যকে তার পুরানো রূপে দেখতে চান স্বয়ং হেড কোচও। তাইতো আলাদা ভাবে তাকে পরখ করছেন, যত্ন করে সৌম্যকে পরামর্শ দিচ্ছেন, দেখছেন তার ব্যাটের স্ট্রোক্স। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত কয়েকদিনে সৌম্যকে দেখা গিয়েছে মনোযোগী ছাত্র হিসাবে।
বাংলাদেশের জার্সি গায়ে সৌম্য’র অনেক ভালো পারফরম্যান্স আছে। ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স! যা এখনও মনে রেখেছেন হাথুরুসিংহে। সেই পুরানো সৌম্যকে ফেরাতে স্বপ্ন দেখছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বড় স্কোর করার যে সামর্থ্য সৌম্যের ব্যাটে আছে তা বেশ ভালোভাবেই মানেন টাইগার হেড কোচ। নিজ তাড়না থেকেই সৌম্যকে দেখভাল করছেন। একটা সময় জাতীয় দলের অপরিহার্য ব্যাটারের দুঃসময়ে পাশে থাকা দায়িত্ব বলে মনে করেছেন। সৌম্যকে তিনি আগলে রাখছেন। বরাবরই সৌম্য সরকারকে পছন্দ করেন এই লঙ্কান কোচ।
সবশেষ ২০২২ এশিয়া কাপে সৌম্য স্ট্যান্ডবাই হিসেবে দলের সাথে যান সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমে ডাক পাননি। ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে সৌম্য যান বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে। পারফরম্যান্সে দাপট দেখিয়ে জায়গা করে নিলেন মূল স্কোয়াডে। ব্যাট হাতে মলিন পারফরম্যান্সে বাদ পড়েন পরের সিরিজেই। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাট হাতে বাজে সময় ছিল তার সঙ্গী। কেন এমন বারবার ফিরে এসেও আবার পিছিয়ে যাওয়া? কারণ হয়তো এতোদিনে খুঁজে পেয়েও গেছেন। সমাধানের রাস্তাটা বের করবেন হয়তো দ্রুতই।
এবারের ডিপিএলে মোহামেডানের জার্সি গায়ে সৌম্য খেলার সুযোগ পেয়েছেন ১২ ম্যাচে, ব্যাট করেছেন ১১ ইনিংসে। প্রথম ১০ ইনিংসে রান ১৯১, শেষ ম্যাচে ১০২ রান করে নামের পাশে জমা করেন মোট ২৯৩ রান।
সৌম্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার ফিরে আসতে চান। এখনো তার চ্যালেঞ্জ নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়ার। এজন্য প্রতিদিন ঘাম ঝরাচ্ছেন নিয়ম করে। ফিটনেসের প্রতিও মনোযোগ দিয়েছেন। সৌম্য সরকারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় এক দশকের। অভিজ্ঞতা যেন আকাশচুম্বী! হবেই বা না কেন, পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে উত্থানপতন তো কম হলো না। কখনও দুর্দান্ত ফর্মে চোখ বড় বড় করে দিচ্ছেন সবার, কখনও বা সৌম্যতে হতাশ পুরো দেশবাসী। বর্তমান সময়ে এসেও নিজেকে দারুণভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়া সৌম্য সরকার অভিষেকেই বুঝিয়েছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তার সহজাত।
সৌম্য সরকারের কাছে যে প্রত্যাশা, সে অনুযায়ী সার্ভিস পাচ্ছে না দেশের ক্রিকেট। প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স না পেলেও সৌম্য আছেন কোচ, টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তাভাবনার মধ্যেই। শ্রীলঙ্কায় আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া ইমার্জিং টিম এশিয়া কাপের জন্য সৌম্য সরকারকে দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারলেই সৌম্য’র ফের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত। প্রত্যাবর্তনের দারুণ এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই সৌম্য করবেন বাজিমাত। এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপে তার ব্যাটিং শো দেখে চোখের আরাম পাবে দর্শকরা।
অভিষেকের পর থেকে ২০১৫, ২০১৯ বিশ্বকাপ মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন সৌম্য; এবারও সৌম্যকে নিয়েই ভারতের বিমানে বসতে চায় কি দল?