

শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৭৪ রান, ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট। এজবাস্টনের খেলায় শুরুতে প্রভাব ফেলল বৃষ্টি। এরপর উসমান খাজার লড়াই। শেষদিকে কামিন্স-লায়নের হার-না-মানা লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেটের জয়। রোমাঞ্চের নানা অলি-গলি পেরিয়ে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স দলকে এনে দিলেন শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়। দুই ইনিংস মিলিয়ে ২০৬ (১৪১, ৬৫) রান করা উসমান খাজার হাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৭৮ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ৩৯৩ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। বাজবল ব্যাটিং অর্থাৎ ভয়ডরহীন ক্রিকেটের আরও একটি নজির গড়ে তারা। এবার সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে গেল। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়ে নাটকীয় জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। ‘বাজবল’ ক্রিকেটেই দারুণ সফলতা অর্জন করা ইংল্যান্ড শেষপর্যন্ত ম্যাচ হারল বাজবলের আগ্রাসী আক্রমণের কারণেই?
২৮১ রানের টার্গেট টপকাতে নেমে অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল ৩ উইকেটে ১০৭ রান তুলে। উসমান খাজা ৩৪, নাইটওয়াচ ম্যান হিসেবে নামা স্কট বোল্যান্ড শেষদিন বৃষ্টি বাধায় নির্ধারিত সময়ে শুরু করতে পারেনি খেলা। বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে কোনো বল না খেলেই লাঞ্চ বিরতিতে যায় দু’দল।
প্রথম সেশন বাতিল হওয়ায় শঙ্কা ছিল ম্যাচ কি ড্র’য়ের দিকে যাচ্ছে। দ্বিতীয় সেশনে খেলা শুরু হলেও স্কট বোল্যান্ডকে ২০ রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান স্টুয়ার্ট ব্রড। ট্রাভিস হেড আগ্রাসী শুরু করেও ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। তাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান মঈন আলি। তবে উসমান খাজা একপ্রান্ত আগলে রেখে অজি শিবিরে স্বস্তি এনে দেন। প্রথম ইনিংসে ১৪১ করা খাজা সহজাত ব্যাটিংয়ে পূর্ণ করেন অর্ধশত রান।
ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন খাজা। চা বিরতি পর্যন্ত খেলেন বেশ দেখেশুনে। দ্বিতীয় সেশন শেষে অজিদের স্কোর ছিল পাঁচ উইকেটের বিনিময়ে ১৮৩ রান। জয়ের জন্য শেষ সেশনে আরও ৯৮ রান তুলতে হত খাজাদের। কিন্তু বিকালের সেশন শুরু হতেই পরপর ধাক্কা খায় অজি ব্যাটিং লাইন। অলি রবিনসন ক্যামেরন গ্রিনকে ২৮ রানে আউট করেন। সেট খাজাকে ৬৫ রানে বোল্ড করে প্যাভিলিনে ফেরান বেন স্টোকস।
অ্যালেক্স ক্যারি আর প্যাট কামিন্স খেলছিলেন পারফেক্ট টেস্ট মেজাজে। কিন্তু বিপত্তি বাধালেন জো রুট। নিজের বলেই দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ভাঙেন জুটি। ব্যক্তিগত ২০ রানে উইকেট হারান ক্যারি। ২২৭ রানে আট উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের দিকে এগোচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেই দলের ত্রাতা হয়ে উঠেন অধিনায়ক কামিন্স। চতুর্থ দিনে তিনি বল হাতে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। এদিন ব্যাট হাতে নিজের পরিপক্ক ইনিংসে সকলকে মুগ্ধ করলেন কামিন্স। তার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়েই জয় পেল অজিরা। নাথান লায়নও ১৬ রানে অপরাজিত থেকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন। নবম উইকেট জুটিতে প্যাট কামিন্স ও নাথান লায়ন স্কোরবোর্ডে মহামূল্যবান ৫৫ রান যোগ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৭৩ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন কামিন্স।
অলি রবিনসন, স্টুয়ার্ট ব্রডের বোলিং আক্রমণে বেন স্টোকস নেন সাহসী কিছু সিদ্ধান্ত। কিন্তু উইকেট শিকারের কোনো সুযোগই আর তৈরি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। চাপের মুখে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে কামিন্স-লায়ন। ফলে স্বাগতিকদের পরাজয়ে শেষ হয় অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট। ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়ে চলমান অ্যাশেজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো সফরকারী অস্ট্রেলিয়া।