

চতুর্থ দিন শেষ হয়েছে। ২৮১ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুড়েছে ইংল্যান্ড। ৩ উইকেট শেষে অস্ট্রেলিয়া তুলেছে ১০৭ রান। আরো প্রয়োজন ১৭৪ রান, হাতে ৭ উইকেট। পঞ্চম দিনে আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তা থাকুক। জয়ের সম্ভাবনা কোন পাল্লায় ভারী- সে নিয়ে এক দফা তর্ক করার সময় পেয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০০৫ অ্যাশেজে ২৮২ রানের টার্গেট মোকাবিলা করতে গিয়ে অজিরা হেরেছিল ২ রানে। সে ইতিহাসকে চাপা দিয়ে নতুন কিছু কি এবার লিখতে পারবে অস্ট্রেলিয়া?
টার্গেট মোকাবিলায় হাতে ছিল ৪ সেশন। চতুর্থ দিনে এক সেশন ব্যাট করা শেষ অজিদের। ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে উসমান খাজার শুরুটা হয়েছিল নান্দনিক। ইংলিশদের শেষ সেশনে করা বল ভালোই দেখেশুনে খেলছিলেন দুজন। ৬১ রানের জুটিতে ফাটল ধরায় অলি রবিনসন। গুড লেংথের বলে আউট-সাইড এজ হয়ে ওয়ার্নার ফেরেন ৩৬ (৫৭) রানে।
লাবুশেইন উইকেটে আসেন। মইন আলির এক ওভারে পর পর দুটি চার মনে করিয়ে দিচ্ছিল স্কট বোল্যান্ডকে মারা রুটের ছয় আর চারের কথা। ক্লোজ ফিল্ডার সাজিয়ে আলী বল করছিলেন লাবুশেনকে। ওভারের পঞ্চম বল, রিভার্স সুইপ করে পাঠিয়ে দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে, চার। পরের বলে আবারো একই শট এবং একই ফলাফল। যেন বলতে চাইলেন ইংলিশদের, তোমরা আক্রমণাত্মক হতে পারো বটে, তবে পরীক্ষা করতে পারো আমাকেও।
তবে লাবুশেইন টিকতে পারেন নি। স্টুয়ার্ট ব্রডের আউট-সাইড অফ স্টাম্পের বল, ছাড়লেই পারতেন- সেটা ফেস করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। টিকতে পারেন নি স্টিভ স্মিথও। ব্রডের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের খোঁচা লেগে বল চলে যায় বেয়ারস্টোর কাছে। স্মিথ ফেরেন ৬ রান করে।
পুরো টেস্ট জুড়েই ব্যাটার স্মিথ এবং লাবুশেইন থেকে হতাশই হতে হয়েছে অজিদের। পরবর্তীতে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে স্কট বোল্যান্ড উইকেটে আসেন। এবং দিন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৩ (১৯) রানে। অন্যদিকে এই টেস্টে অজিদের এক প্রান্ত আগলে রাখার দায়িত্ব নিয়ে ৩৪ (৮১) রানে মাঠে আছেন উসমান খাজা।
এর আগে, ২৮-২, এই স্কোরকার্ডে শেষ হয়েছিল তৃতীয় দিনের খেলা। তৃতীয় দিনের বেশিরভাগ খেলা বৃষ্টিতে ভেসে যায়। বৃষ্টি বিরতিতে যতটুকু খেলা হয়েছিল, সেখানে উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। তাদের দুই ওপেনারকে। আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন জো রুট এবং অলি পপ। রুটের রিভার্স করে শট খেলার চেষ্টা ও সফলতা ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসেই দেখা গেছে। দিনের শুরুতে কামিন্সের বলে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করলেন রুট। সফল হলেন না কামিন্সের বিপরীতে।
তবে পরের ওভার করতে আসা স্কট বোল্যান্ডকে চার, ছয়, চার- দেখালেন রুট। শেষ দু’টি এসেছে রিভার্স-স্কুপ শটেই। যা চেষ্টা করেছিলেন কামিন্সের প্রথম ওভারে। রুটের এহেন আচরণ দেখে কামিন্স ফ্লাই স্লিপ দাঁড় করাতে বাধ্যই হলেন একরকম। ধারাভাষ্যের কক্ষ থেকে শোনা গেল, রুট এমনই, যেখানে খেলোয়াড় দেখবেনা, সেখানেই তার শট চলে যাবে।
রুটের শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল, চতুর্থ দিনেই দ্রুত ইনিংস ঘোষণার দিকে যেতে চায় ইংলিশরা।
৪৭ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপের ভাঙ্গন ধরে কামিন্সের এক ইয়র্কার বলে। ১৩৯ কিলোমিটারের ছোঁড়া বল অলি পপের অফ-স্টাম্পে গিয়ে আঘাত হানে। সে ইয়র্কারে কিছুই করার ছিল না পপের। শুধু উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়া ছাড়া। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র সাড়ে ষোলোর কিছু বেশি গড় অলি পপের, যেখানে প্রথম ইনিংসে পঞ্চাশ গড় নিয়ে ব্যাট করেন এই ব্যাটার। পপের উইকেটের মাধ্যমে চতুর্থ দিনের প্রথম আঘাত ইংলিশ শিবিরে।
পপের উইকেট রুটকে থামাতে পারেনি। তার পাশে যোগ সেন হ্যারি ব্রুক। দুজন মিলে রান তুলতে থাকেন সমান তালে। যেমন ব্রুক নাথান লায়নকে স্বাগত জানালেন তার ওভারে ১৩ টি রান নিয়ে। ৬.৮৮ হারে রান উঠতে থাকে প্রতি ওভারে।
তবে প্রথম ওভারে ১৩ রান দিলেও, লায়ন ঠিকই ফিরে এলেন। দিনের খেলায় নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে রুটকে জায়গা ছেড়ে শট খেলতে বাধ্য করলেন। রুটও বাধ্য ছেলের মতো স্টেপআউট করে খেলতে গিয়ে বল মিস করে বসলেন। ক্যারি দেরি করলেন না। স্টাম্পিং হয়ে ৪৬ (৫৫) রান করে ফিরে গেলেন এই ইংলিশ আগ্রাসী ব্যাটিং স্তম্ভ।
হ্যাজেলউডের সাথে লায়নের স্পেল ইংলিশদের কিছুটা কোণঠাসা করে, অন্তত যেভাবে ব্যাটে রান উঠছিল- সেখান থেকে। বেন স্টোকসকেও খুব বেশি আরামদায়ক অবস্থায় পাওয়া যায় না। বড় শট খেলার তেমন সুযোগ করে উঠতে পারছিলেন না। ঠিক এ সময়, হ্যারি ব্রুকের উইকেট পতন ঘটে। লায়নের বল শর্ট-মিডউইকেটে মার্নাস লাবুশেনের ডিসেন্ট ক্যাচের শিকার হন। রুটের মতোই ৪৬ (৫২) রানে ফেরেন এই ব্যাটার।
লাঞ্চের আগ পর্যন্ত অজি বোলারদের কাছেই থাকে দিনের ছড়ি। বিরতির ঠিক আগের ওভারটা স্কট বোল্যান্ড যা করলেন, বেয়ারস্টো শুধু বেঁচে গেলেন বলা ভালো। এক ডেলিভারিতে লেগ-বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন ফিল্ড আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে ফিরলেন বেয়ারস্টো। তারপরের ডেলিভারি আবারো লেগ-বিফোরের আবেদন- তবে খুব উপযুক্ত জায়গায় না হওয়াতে কামিন্সরা সেটা নিয়ে আর আগায়নি। পর পর দুই বলে এমন সম্ভাবনা বোল্যান্ড তৈরি করলেন লাঞ্চের আগে, যা তিনি এর আগেও করেছেন- বিরতির আগে উপযুক্ত বোলার হিসেবে নাম কামাচ্ছেন বলতে হয়।
বিরতির পর স্টোকস কিছু শট খেলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। দলের খাতায় রান তোলেন। বেয়ারস্টোও বাদ যান নি। দুজন মিলে পার্টনারশিপটা যখন ৪৬ এ পৌঁছে গেছে, তখন লায়নের বলে লেগ-বিফোরের ফাঁদে পড়েন বেয়ারস্টো। ১৯৭ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে ইংল্যান্ডের।
দলীয় ২১০ ও ২২৯ রানে স্টোকস এবং মইন আলীর উইকেট পতন ঘটলেও, শেষ তিন ব্যাটার; অলি রবিনসন, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস অ্যান্ডারসন থেকে ইংল্যান্ডের ঝুলিতে যোগ হয় ৪৪ টি মূল্যবান রান। শেষমেশ ইংলিশরা ২৭৩ রানে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ২৮১ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় অজিদের জন্য। প্যাট কামিন্স এবং নাথান লায়ন দুজনেই ৪ টি করে উইকেট নেওয়ার সম্মান অর্জন করেন। হ্যাজেলউড ও বোল্যান্ড পান ১ টি করে উইকেট।