

ওয়ার্নার যেন এক পরাজিত বীর, ব্রডের কবলেই ১৫ বার! ডেভিড ওয়ার্নার ভাবতে পারেন, আর কত! ব্রড বনাম ওয়ার্নার; ১৫ তম বারের মতো ব্রডের শিকার হয়েছেন ওয়ার্নার। অ্যাশেজ-২০২৩, প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ওয়ার্নার। কোনো ধরনের ফুটওয়ার্ক চোখে পড়েনি, কি খেলতে চেয়েছেন তাও বোঝা গেল না- হাত ছড়িয়ে শুধু ক্রস ব্যাটে ড্রাইভ করলেন- ফলাফল বল সরাসরি স্টাম্পমুখী। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মাঠ ছাড়লেন অজি ওপেনার। স্টুয়ার্ট ব্রডের শিকার তো পরে, দলের জন্য তেমন কিছু না করার আফসোস তো রয়েই গেল।
আর সেই উইকেটে ব্রড ভাসলেন, ভাসালেন পুরো এজবাস্টনের ইংলিশ সমর্থকদের। তিনি জানেন, তার দর্শকেরাও জানেন- আবারো এই বামহাতি ওপেনারকে যে করা হয়েছে কুপোকাত। ১৫-তম বারের মতো ব্রডের কাছে নতি স্বীকার করেছেন ওয়ার্নার।
‘ইট ওয়াজ অ্যা গ্রেট ব্যাটেল’
– স্টুয়ার্ট ব্রড
তার জন্য গ্রেট, মধু। কিন্তু ওয়ার্নারের জন্য যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু না। এই গ্রেট ব্যাটেলের শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ১০ বছর আগে, ২০১৩ সালে। ডারহামে। অস্ট্রেলিয়া ছিল সফরকারী দল। ভেন্যু ছিল ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটারের এক বল ছাড়েন ব্রড। স্টাম্প মেপে বল পিচ করে, লেংথ ডেলিভারি। ওয়ার্নারের ব্যাট একটু দেরিতে নামায়, বল সরাসরি অফ স্টাম্পের উপরে আঘাত হানে। দলীয় ১১ রানেই আর্লি ব্রেকথ্রু পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
২০১৩-১৪ এর সময়কাল। ব্রিজবেন, অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানে মাঠে ওয়ার্নার। ব্রডের শর্ট-বল ডেলিভারি, খুব সাধারণ- সেটাকে ব্যাক-ফুটে গিয়ে কাভারের দিকে স্ল্যাপ করার চেষ্টা বিপদ হয়ে আসে এই ওপেনারের জন্য। পিটারসেনের কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। দ্বিতীয়বারের মতো ব্রডের শিকার হন ওয়ার্নার।
একই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকান এই অজি ব্যাটার। ১২৪ রানের মাথায় আবারো ব্রডের শিকার তিনি। শরীর থেকে দূরত্ব রেখে ব্যাটের খোঁচা দিয়ে বসেন ব্রডের ১৩৪ কিলোমিটারের বলটি, সরাসরি চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। তৃতীয়বারের মতো ব্রডের কবলে পড়লেন ওয়ার্নার। এবার আবার একই ম্যাচে, পর পর দুই ইনিংসে।
সেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হয় অ্যাডিলেইডে। প্রথম ইনিংসে ২৯ রান করে ব্রডের বলে আউট হয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। শর্ট-লেংথের বল দুর্বল শটে পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ফিল্ডারের তালুবন্দি হন তিনি। চতুর্থবারের মতো। একই সিরিজে তৃতীয়বারের মতো ব্রডের বলে কপাল পোড়া যাকে বলে।
পঞ্চম টেস্ট, সিডনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। ১৩৬ কিলোর ফুল-লেংথ বল ছাড়লেন ব্রড। ১৬ রানের অপরাজিত ওয়ার্নার বলের লাইন মিস করলেন। ফুট-ওয়ার্কের সুবিধা নিতে পারলেন না। ফলাফল অফ-স্টাম্পে আঘাত। পঞ্চমবারের মতো ওয়ার্নারকে ফেরালেন ব্রড।
এরপর ২০১৯ সময়কালে, এজবাস্টনে হওয়া প্রথম টেস্টের দুই ইনিংস, দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংস, তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস, চতুর্থ টেস্টের দুই ইনিংস এবং দ্য ওভালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে- অর্থাৎ ৫ টেস্টে মোট ৭ বার স্টুয়ার্ট ব্রডের পছন্দের যুদ্ধে পরাজিত বীর হয়ে ধরা দেন ডেভিড ওয়ার্নার। এরপর ২১-২২ সময়কালে সিডনি ও হোবার্টের দুইটি টেস্টে দুইবার করে ব্রডের শিকার হয়ে, ক্লান্ত ওয়ার্নার চলমান টেস্টে অজিদের প্রথম ইনিংসেও একই কাণ্ড ঘটালেন। ফিরলেন ব্রডের বলেই।
কিছুটা ক্লান্তিকর হয়তো বিষয়টা। মনে করেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইক আথারটন। ক্রিকেট ইতিহাসে একই বোলারে বলে সবচেয়ে বেশিবার আউট হওয়া ব্যাটসম্যান যে তিনিই। বোলার আর কেউ নন, অজি গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রা।
আথারটন বলেন, ‘একজন ব্যাটার হিসেবে, এটা বাজে একটা দুঃস্বপ্নের মতো। আপনার এরমধ্যে একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মানসিকভাবে এটা খুবই কঠিন, যখন একজন বোলার একইভাবে আপনার বিরুদ্ধে একের পর এক সাফল্য পেয়েই যাচ্ছে।’
ডেভিড ওয়ার্নারের হয়তো তাই এখন উপায় খোঁজার সময়। বা সেই সময়টা ওয়ার্নার পান কিনা, তাও এক প্রশ্ন। টেস্ট থেকে যে অবসর নেওয়ার কথাও ঘোষণায় এনেছেন তিনি। তবে স্টুয়ার্ট ব্রডের কাছে এটা তো এক ‘গ্রেট ব্যাটেল’ হিসেবে প্রতীয়মান। তা যে তিনি আনন্দের সাথেই উপভোগ করছেন, ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে তার উদ্যাপন দেখলেই আন্দাজ করা যায়।