

পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে রানের বিচারে বাংলাদেশ পেল সবচেয়ে বড় জয়। বলাই বাহুল্য বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ রানের জয় এটি। আফগানদের রেকর্ড ৬৬২ রানের টার্গেট ছুড়ে দিয়ে টাইগাররা তাদেরকে অলআউট করে ১১৫ রানে। আর তাতেই বাংলাদেশের বিশ্বরেকর্ড করা ৫৪৬ রানের জয়! নাটকীয়তায় ভরপুর শেষ ওভারে আশা জাগিয়েও ফাইফার পূর্ণ হলো না তাসকিনের। টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকেই রেকর্ড গড়া জয় পেলেন লিটন দাস।
এক টেস্টে কত ঘটনা, একের পর এক রেকর্ড ভাঙা-গড়া! কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন আপনি? নিজাত মাসুদের অভিষেক বলে উইকেট এরপর পাঁচ উইকেট, শান্ত-জয়ের রেকর্ড দ্বিতীয় উইকেট জুটি, দেশের মাঠে নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম সেঞ্চুরি, পরের ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে গড়েন কীর্তি, মুমিনুল হক ২৬ ইনিংস পর পেলেন শতরানের দেখা, রেকর্ডসংখ্যক লিড, ইনিংসের প্রথম বলেই শরিফুলের উইকেট, ফাইফার হয়েও হল না তাসকিনের; তবে সব ছাপিয়ে বাংলাদেশ পেল টেস্ট ইতিহাসের সবচেয় বড় জয়, ৫৪৬ রানের জয়!
পাঁচদিনের টেস্ট শুরুর পর সবচেয়ে বড় জয় এতোদিন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে। ২০১৮ সালে জোহানেসবার্গ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৬১২ রানের টার্গেট দিয়ে ৪৯২ রানে হারায় প্রোটিয়ারা। এই রেকর্ড চুরমার করে এবার নতুন বিশ্বরেকর্ড লিখল লিটন দাসের দল।
রানের হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানের প্রথম ৬টি জয় আসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। এবার বদলায় সেই পরিসংখ্যান, তালিকায় সবার উপরে এসে যুক্ত হল আফগানিস্তানের নাম। সাদা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২২৬ রানে। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে এই ঐতিহাসিক জয় পায় হাবিবুল বাশারের দল। আজ মিরপুরে পেল ৫৪৬ রানের বড় জয়।
নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির পর মুমিনুল হকের স্বস্তির শতরান। প্রথম ইনিংসের ২৩৬ রানের বড় লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রান তুলে। আর তাতেই আফগানিস্তানের সামনে দাঁড়ায় ৬৬২ রানের পাহাড়সম টার্গেট।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শরিফুল, তাসকিনের পেস তোপে আফগানরা যেন অসহায়। দিন শেষে তারা পিছিয়ে ছিল ৬১৭ রানে। জোড়া উইকেট হারিয়ে ১১ ওভারে আফগানিস্তান স্কোরবোর্ডে ৪৫ রান তুলতেই দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণা করেন অনফিল্ড আম্পায়ার। আলোক স্বল্পতার কারণে ২০ ওভার আগেই দিনের আগে সমাপ্ত করতে হয়।
রহমত শাহ ১০, নাসির জামাল ৫ রানে অপরাজিত থেকে নতুন দিনের খেলা শুরু করেন। কিন্তু ৩ ওভারও থাকতে পারলেন না মাঠে, এবাদত দিনের শুরুতেই বাংলাদেশকে এনে দেন ব্রেকথ্রু। তার লাফিয়ে উঠা বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় লিটনের গ্লাভসে। আগের দিন পাঁচ রানের সাথে আজ কেবল ১ রান করতেই নাসির জামাল নেন বিদায়।
এরপর আফসার জাজাইকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শরিফুল। শর্ট বলে এজ হয়ে ক্যাচ তুলেন গালি পজিশনে থাকা মিরাজের হাতে। নাসির জামাল ২২ বল খেলে করেন ৬, জাজাই সমান ৬ রান করেন ১২ বলে। সকালের এমন শুরু নিশ্চিতভাবেই বড় হারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তানকে।
হাশমতউল্লাহ শহীদির রিটায়ার্ড হার্টে কপাল খুলল মিডল অর্ডার ব্যাটার বাহির শাহ মেহবুবের। বাংলাদেশের বিপক্ষে চলমান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার জন্য অভিষেক হয় এই তরুণ ব্যাটারের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অবাক করা ব্যাটিং গড় আর ত্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড নিয়ে ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন বাহির। সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন রহমত শাহকে।
কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের দাপট মিরপুরে দেখাতে চরম ব্যর্থ বাহির। ৭ রান করতেই শরিফুলের শর্ট বলে হয়েছেন কুপোকাত। থার্ড স্লিপে থাকা তাইজুল ইসলাম লুফে নিলেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। স্কোরবোর্ডে ৭৮ রান উঠতেই ৫ উইকেট নেই আফগানদের। এরপর তাসকিন আহমেদ অ্যাকশনে ফিরতেই নেই আরও দুই উইকেট।
থিতু হয়ে ৩০ রানে থাকা রহমত শাহকে ক্যাচ বানান উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসে। উইকেট মেডেন দেওয়া তাসকিন নিজের পরের ওভারে এসে তুলে নেন করিম জানাতের স্টাম্প। তাসকিনের ড্রিম ডেলিভারিতে অফ স্টাম্প উঠে যায় ১৮ রান করা করিম জানাতের। মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম উইকেটে পরিণত হন আমির হামজা।
বিশ্বরেকর্ড গড়া জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল কেবল দুই উইকেট। বল হাতে তাসকিন আহমেদ এসেই ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন ইয়ামিন আহমদজাইকে। ওভারের ৪র্থ বলে লেগ বিফোরের আউট দিয়েও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান জহির খান। পরের বলে বোল্ড করে ফাইফার পূর্ণ করার আনন্দেও মাতেন তাসকিন। তবে এ যাত্রায়ও নো বলের নাটকীয়তাই বেঁচে যান জহির। তবে তাসকিনের শেষ বলে হাতে আঘাত পেয়ে জহির মাঠ ছাড়লে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। বাংলাদেশ পায় বিশাল জয়।