স্কট বোল্যান্ড; সময় যাকে জায়গা খুঁজে দিল!

স্কট বোল্যান্ড সময় যাকে জায়গা খুঁজে দিল
Vinkmag ad

নিজের জায়গা তৈরি হয়েই থাকে। শুধু নিজেকে নিজের সুযোগ দিতে হয়। স্কট বোল্যান্ড, ৩৪ বছর বয়সী অজি পেসার। অজি বিগ থ্রি: কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজেলউড। এদের মাঝে জায়গা করা মুশকিল মনেহয় আপনার? নিজেকে সুযোগ দিলে সেই মুশকিলটা হয় না। বরং এমন কিছু করা হয়, যেখানে একটি ডেলিভারি, তার ভেতরের পরিকল্পনা আর শুবমান গিলের উইকেট- আপনাকে দেয় ‘মোস্ট থ্রেটিং’ ডেলিভারির তকমা। আর তখন, আপনাকে জায়গা খুঁজতে হয় না। জায়গা নিজেই আপনাকে খুঁজে নেওয়ার কাজটা করে।

আট ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ার, নিয়েছেন ৩৩ টি উইকেট। এভারেজ মোটে ১৪.৫৭। সুযোগ এসেছে স্কট বোল্যান্ডের কাছে অন্যের অনুপস্থিতিতে। যে ফাইনাল শেষ হলো, সেদিকেই তাকান। জশ হ্যাজেলউড ছিলেন ইঞ্জুরিতে। তার পরিবর্তে দলে নেওয়া হয় বোল্যান্ডকে। সুযোগ কাজে লাগানোর বেলায় স্কট বোল্যান্ড যে সিদ্ধহস্ত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সুযোগটা এমনভাবেই কাজে লাগিয়েছেন, স্বয়ং অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে এসে বললেন, “স্কট বোল্যান্ড, সে এখন আমার প্রিয় খেলোয়াড়। সে সবসময়ই আমার প্রিয় ছিল।”– প্রিয়’কে প্রিয় বলার উপযুক্ত সুযোগ প্রিয়’রা তৈরি করে দিলে, এরচেয়ে ভালো আর কি হয়!

নিজের বয়স ৩২ হওয়ার আগ পর্যন্ত নজরেই ছিলেননা। ২০২১ এর ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেন। এখন পর্যন্ত স্কট বোল্যান্ডের ইনিংস সেরা ফিগার ওটাই। ম্যাচ সেরা ফিগারটাও ৭/৫৫, একই ম্যাচে। অল্প সুযোগ, যখনই পেয়েছেন- নিজেকে বঞ্চিত করেননি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অল্প কিছু লিমিটেড ওভারের ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল, সেটা সেই ৫ বছর আগে। ৩২ বছর বয়সে টেস্ট দলে ডেব্যু হলো, এখন তার বয়স চলছে ৩৪। এরকম খুব একটা হয় না।

দিন কয়েক আগে শেষ হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের দ্বিতীয় ইনিংসে বোল্যান্ডের নেওয়া শুবমান গিলের উইকেটটা মনে করে দেখুন। নিজের স্পেলটা শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মাকে স্ট্রাইকে রেখে, মেইডেন ওভার নিয়ে। পরের ওভার করতে এসে শুবমান গিলকে পেলেন স্ট্রাইকে। পর পর তিন বল করলেন আউটসাইড-অফ। গিল তিনটা বলই চমৎকার ডিফেন্ড করলেন। এরপর চতুর্থ ডেলিভারি হাজির হলো। গিল ভাবলেন বলটা ছেড়ে দেওয়ার মতো। লিভ করার জন্য ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন, বল হিট করল অফ-স্ট্যাম্পে। বোকা বনে গেলেন গিল। এভাবে নিজের উইকেট হারিয়ে বসতে কেই-বা চায়!

বিপরীতে স্কট বোল্যান্ড হয়তো চেয়েছেন ভিন্ন কিছু। এঁকেছেন পরিকল্পনা, পরপর তিন বলের ডেলিভারি হয়তো সেই পরিকল্পনারই অংশ। আর চতুর্থ বল, যাকে বলা যেতে পারে ‘ফাঁদ’, সেখানে পা দিয়ে ফেলেছিলেন গিল। হারিয়ে বসতে না চাইলেও, হারাতে হয়- কোনো উত্তম পরিকল্পনায়।

ক্রিক-ভিজের ডাটাবেজ বলছে, বোল্যান্ডের সেই ডেলিভারি ছিল ফাইনালের ‘মোস্ট থ্রেটিং’ ডেলিভারি। পাশাপাশি ২০০৬- এর পর থেকে ইংল্যান্ডে কোনো অজি বোলারের ‘থ্রেটিং’ ডেলিভারিতে দশম স্থানে। গিলকে ডেলিভারি দেওয়া সেই বলে সাধারণত ৩৩% উইকেট প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে বলেও জানিয়েছে ক্রিকভিজ।

ফাইনালের চতুর্থ ইনিংসেও শুবমান গিলকে ফেরান স্কট বোল্যান্ড। বিরাট কোহলি ও রবীন্দ্র জাদেজাকে ফেরান মাত্র দুই বলের ব্যবধানে। আউটসাইড অফ স্ট্যাম্প ডেলিভারিতে সুবিধা করতে না পেরে স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। দুই বল পর, এজ হয়ে উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ধরা পড়েন জাদেজা। বোল্যান্ডের খেলা ৮ টেস্টের মধ্যে এটা ছিল ৬ষ্ঠ ঘটনা, যেখানে এক ওভারে একের অধিক উইকেট শিকার করেছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, তার ডেব্যু টেস্টের দিন।

শুরুর কথায় ফেরা যাক। আপনাকে এখন আর তাই জায়গা খুঁজতে হয় না। আগামীকাল শুরু হওয়া অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে স্কট বোল্যান্ড-কে সুযোগ পেতে, কারো ইঞ্জুরির আর প্রয়োজন নেই। অস্ট্রেলিয়ার একাদশে বোল্যান্ডকে না দেখলেই বরং অবাক হতে হবে। তবে অজিরা পড়বে মধুর সমস্যায়। স্টার্ক, হ্যাজেলউড- কাউকে কি বাইরে রাখতে হচ্ছে, বোল্যান্ডকে সুযোগ দিতে? যার সুযোগ মিলতো কারো ইঞ্জুরিতে, আজ তাকে বাদ দিয়ে একাদশ নির্ধারণ করার কথা ভাবা যাচ্ছে না। সময় এমনই।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

দেশে এমন উইকেট আগে দেখেননি এবাদত

Read Next

দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরির এলিট ক্লাবে শান্ত

Total
0
Share