

মুশফিক হাসান, বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে নতুন আবিষ্কার। বয়স ২১ হয়নি, এরমাঝেই তার জন্য খুলে গেছে জাতীয় দলের দরজা। নিঃসন্দেহে আজকের দিনে বাংলাদেশের সেরা ভাগ্যবান এই মুশফিককেই বলা চলে। যার পেস আগুনে দুই দিন আগেই সিলেটে পুড়েছে ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন। সর্বশেষ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলা পেসার মুশফিক হাসান ইতোমধ্যে আলো কেড়েছেন। এবার আফগানদের বিপক্ষে আলো ছড়ানোর অপেক্ষায়…
ঢাকায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের জন্য আজ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে দলে আছেন দুই আনক্যাপড খেলোয়াড়, ব্যাটার শাহাদাত হোসেন দিপু এবং পেসার মুশফিক হাসান।
২১ বছর বয়সী ডানহাতি মিডল-অর্ডার ব্যাটার শাহাদাত হোসেন দিপুকে বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমের পাতা আর টিভি পর্দায় দেখা গেলেও মুশফিক হাসান নামটা যেন একেবারেই অচেনা, অজানা। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে মুশফিকের জন্ম ২০০২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। স্কুল ক্রিকেটে ভালো করে সুযোগ পেয়ে যান অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগীয় দলে, এরপর চমক হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৮ দলে ডাক মিলে।
গতি ও বাউন্সারে নির্বাচকদের মুগ্ধ করে ২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে ডাক আসে মুশফিক হাসানের। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বসা এই বিশ্বকাপে একটি মাত্র ম্যাচেই খেলার সুযোগ পান মুশফিক। ৭ ওভারের কোটায় ৫২ রান খরচায় নেন ২ উইকেট।
২০২২ সালেই মুশফিক হাসানের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক। ২০ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে তিনবার পাঁচ উইকেট নিয়ে মোট ৪৯ উইকেট শিকার করেন। আছে ইনিংসে ৮ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও। ২৪তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) চতুর্থ রাউন্ডে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ৭৩ রান খরচায় ৮ উইকেট পেসার মুশফিক হাসানের। রংপুরের জার্সি গায়ে ঢাকার বিপক্ষে এমন উইকেট উৎসবে মেতে উঠেন তরুণ মুশফিক। এই আসরেই অভিষেকের পর এই ঢাকার বিপক্ষেই প্রথম রাউন্ডে নেন ৫ উইকেট।
ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন নিজেকে। সিলেটে চার দিনের ম্যাচে এক ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশ এই টেস্টে হারলেও দলের পক্ষে সেরা বোলার ছিলেন মুশফিক।
সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মুশফিক হাসানের ঠিকানা ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ৯ ম্যাচ খেলা মুশফিক উইকেট পান মোট ১০ টি। সাকিব, মিরাজ, সৌম্যদের এই দলে মুশফিক হন ৪র্থ সেরা বোলার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত অনানুষ্ঠানিক টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অংশ ছিলেন। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই নিজের ঝুলিতে নেন ৩ উইকেট। তার শিকারে পরিণত হন উইন্ডিজের সেরা সব ব্যাটার; ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল, রেমন রেইফার ও ব্র্যান্ডন কিং। বাংলাদেশ ‘এ’ দল ফলো অনে পড়ে ম্যাচ করে ড্র, ফলে ২য় ইনিংসে আর বল হাতে নেওয়ার সুযোগ হয়নি মুশফিকের। ২০ ওভারে ৪ মেডেন ও ৫৪ রান খরচায় ৩ উইকেট তুলে নেওয়া মুশফিকই প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সেরা বোলার।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের সেরা একাদশে জায়গা না পেলেও শেষ টেস্টে ফের বল হাতে দৌঁড়ানোর সুযোগ আসে মুশফিকের সামনে। এবারও প্রথম ইনিংসে টাইগার পেসারদের মধ্যে তিনিই সেরা। ৫৯ রানের বিনিময়ে পকেটে নেন জুনিয়র চন্দরপল আর জাচারি ম্যাককাস্কির উইকেট। ২য় ইনিংসে অবশ্য ৭ ওভার বল করলেও থাকেন উইকেটশূন্য।
এই দুই চারদিনের ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করেই যেন নায়ক বনে মুশফিক হাসান। প্রথমবারের মতো এই তরুণ বাংলাদেশের সাদা পোশাকের দলে।