

২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপে নিজেকে আগ্রাসী পেস বোলার হিসেবে প্রমাণ করেছেন তানজিম হাসান সাকিব। ফাইনালে গতি আর বাউন্সে ভারতীয় ব্যাটারদের কাবু করার পাশাপাশি শরীরি ভাষাও ছিল আগ্রাসী মনোভাব। বল ছুড়ে ব্যাটার দিকে তেড়ে যাওয়া, আর বল ফেরত আসলেই উইকেট বরাবর ছুড়ে মারা। এভাবেই সেদিন নিজের জাত চিনিয়েছিলেন সাকিব।
যুব বিশ্বকাপের সেই ফাইনালের ধরনীতে নেমে এলো করোনা নামক মহামারী। আর তাতে থমকে দাঁড়ালো বিশ্ব! বিশ্বের সবকিছুই তখন প্রায় ছিল অচল, মানুষের চলাফেরাও ছিল না স্বাভাবিক। ঘরের বাহিরে বের হওয়া ছিল তখন বড় অপরাধ।
সেই করোনার প্রভাব এসে পড়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও, যার বাহিরে ছিল না ক্রিকেট। বাংলাদেশেও সব ধরনের খেলা বন্ধ ছিল প্রায় বছর দেড়েক। সেই সময়টাতে সাকিবও ছিলেন ঘরবন্দী, সব কিছু যখন স্বাভাবিকতার দিকে ফিরে তখন সাকিবকে পেয়ে বসে ইনজুরি। সেই ইনজুরি কাটিয়ে সাকিব ফিরেন জাতীয় ক্রিকেট লিগ দিয়ে, সিলেটের সেখানেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে দারুণ বল করেন সাকিব।
এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (টি২০) খেলছেন নিয়মিত। সেখানেও বল হাতে দুর্দান্ত সাকিব। সর্বশেষ বিপিএলে খেলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে, যেখানে সংস্পর্শ পেয়েছেন পাকিস্তানের অন্যতম সেরা বা হাতি পেসার মোহাম্মদ আমিরের। রেজাউর রহমান রাজার প্রশংসা করার পাশাপাশি সাকিবের প্রশংসা করেছেন আমিরও। ডু অর ডাই এক ম্যাচে বল হাতে একাই স্ট্রাইকার্সকে জিতিয়েছিলেন সাকিব।
সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন আবাহনীর হয়ে, সেখানে বল হাতে আবাহনীর শিরোপা জয়ে রেখেছেন বিরাট অবদান। আবাহনীর হয়ে ১১ ম্যাচে ৬.৩৮ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১৯ উইকেট। তার এমন নজর কাড়া বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়েছেন খোদ কোচই। আবাহনীর প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন সাকিবের মাঝেই দেখছেন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের ছায়া।
সাকিব নতুন বলে যতটা না কার্যকর, পুরান বলে তারচেয়ে বেশি ভয়ংকর। সেদিক থেকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অমূল্য রত্ন হতে পারেন যুব বিশ্বকাপ জয়ী সিলেটের এই তরুণ পেসার। তাই ক্রিকেটের ওয়ানডে আর টি২০ নয়, সাকিবেরও প্রিয় টেস্ট ক্রিকেট।
যুব বিশ্বকাপ জয়ের পর সাকিব বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন আবার। সেটাও নিজের প্রিয় ফরম্যাট, লংগার ভার্সন ক্রিকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে হয়ে খেলছেন সাকিব। এখানেও নিজের সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট দলে নিজেকে বিবেচনা করার দাবিটা জানিয়ে রাখলেন সিলেটের এই তরুণ।
বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম-২ এ সাকিবের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল গুটিয়ে গেছে ৩৪৫ রানে। ১৯.১ ওভারে ৫৯ রানে সাকিব শিকার করেছেন ৪ উইকেট। আর তাতেই ৬ উইকেটে ২৬৮ রানে দিন শুরু করা উইন্ডিজ গুটিয়ে যায় মাত্র ৩৪৫ রানে। সাকিব গতি আর বাউন্সে মাত্র ৭৭ রানের ব্যবধানে তুলে নেন ক্যারিবীয়দের শেষ ৪ উইকেট।
উইকেটে সেট হওয়া কেলভিন ওসয়াল্ড সিনক্লেয়ারকে (৩২) ফিরিয়ে শুরুটা করেন সাকিব। এরপর সাকিব একে একে তুলে নেন আকিম কেলভিন জর্ডান (২), অ্যান্ডারসন ফিলিপ (৪) ও জাইর ম্যাকএলিস্টারের উইকেট। ফলে মাত্র ১৬ রানের মাথায় শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয় ‘এ’ দল গুটিয়ে যায় ৩৪৫ রানে।
এর আগে কার্ক ম্যাকেঞ্জি (৯১), কেসি কার্টি (৬৮) দুই ফিফটিতে ৬ উইকেটে ২৬৮ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে উইন্ডিজ। আজ অধিনায়ক জশুয়া ডি সিলভার অপরাজিত ৪৭ রানে ভর করে সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি স্কোর করে সফরকারীরা। ফলে ১০৮ রানের লিড পায় ত্যাগনারায়ণ চন্দরপলরা।
১০৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা বাংলাদেশ সাদমান ইসলাম (৭৪) এবং শাহাদাত হোসাইন দিপু (৫০) জোড়া ফিফটিতে তৃতীয় দিন শেষ করেছে
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে তুলে মাত্র ৩০ রান। সিলেট ক্যারিবীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে যেন রান খরায় ভুগছেন বা হাতি ওপেনার জাকির হাসান। দুই ম্যাচের ৪ ইনিংসে তার রান ৬১, যেখানে আজ ফিরেছেন মাত্র ১৩ রানে।
জাকিরকে হারানোর পর রানে থাকা ব্যাটার সাইফ হাসানকে দ্রুত হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৫১ রানে আকিম কেলভিন জর্ডানের বলে সাইফ সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ১৬ রানে।
এরপর নাইম শেখ আর সাদমানের ব্যাটে আগায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এই দুই ব্যাটার মিলে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৫৬ রান। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ রান করা নাইম ব্যক্তিগত ২৮ রানে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। নাইমকে থামিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন কেভিন সিনক্লেয়ার।
তবে বাংলাদেশের ইনিংসে সেরা জুটিটা আসে সাদমান ও শাহাদাত দিপুর ব্যাটে। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৬৮ রানের জুটি, যেখানে সাদমান করেন ফিফটি। সাদমানের ৭৪ রানের ইনিংসে লড়াইয়ে ফিরে বাংলাদেশ। এরপর দিপুও পান ফিফটির দেখা। প্রথম ইনিংসে ৭৩ রান করা দিপু, দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৫০ রান। সাদমান ও দিপুকে যথাক্রমে ফেরান আকিম কেলভিন জর্ডান ও কেলভিন সিনক্লেয়ার। ফলে ২০৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। দিপুর আগে আফিফ হোসাইন ধ্রুব ফিরেন ব্যক্তিগত ৪ রানে।
২০৯ রানে ৬ উইকেটে হারানোর পর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় ইরফান শুক্কুরের ব্যাটে। শেষ বিকেলে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান ইরফান, ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ফিফটি করেন এই ব্যাটার। দিন শেষে ৮৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে অপরাজিত আছেন ৬৪ রানে। নাইম হাসানকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে গড়েছেন অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রানের জুটি। সেই জুটিতে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ২৭৪ রানে। ইরফানের সাথে নাইম ব্যাট করছেন ১৪ রানে।
ক্যারিবীয় ‘এ’ দলের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন কেভিন সিনক্লেয়ার। ২টি উইকেট শিকার করেন আকিম কেলভিন জর্ডান এবং ১টি উইকেট নেন রেইমন রেইফার।
এর আগে শাহাদাত হোসাইন দিপুর (৭৩) ফিফটিতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ২৩৭ রান।