১০ পেরিয়ে একাদশে বিসিএসএ

BCSA
Vinkmag ad

১০ বছর পেরিয়ে এগারো বছরে পা রাখল বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের পাশে থাকার জন্যই বিসিএসএ এর এই পথচলা। টাইগারদের পদচারণা যেখানে, দেশ কিংবা বিদেশ; সেখানেই লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে গর্জন দিতে উপস্থিত হয়ে যায় বিসিএসএ এর সদস্যরা। টেস্ট কিংবা বিশ্বকাপ যেকোন ম্যাচে ড্রাম, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে হলুদ জার্সি গায়ে জড়িয়ে গ্যালারিতে হাজির একদল ইয়েলো আর্মি, লক্ষ্য একটাই টাইগারদের সমর্থন।

২০১৩ সালের ২৩ মে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। আজ ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশের স্বীকৃত এই সমর্থক গোষ্ঠী। টাইগারদের সমর্থনে বিসিএসএ এর মাঠ ও মাঠের বাইরের উপস্থিতি অসাধারণ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকদের একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে বিভিন্ন পেশার নবীন ও প্রবীন সমর্থকদের একত্র করে দুঃসময়েও বাংলাদেশ দলের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৩ সালের ২৩ মে গঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিসিএসএ’কে।

167A4065
বিসিএসএ টাইগার্স

বর্তমান ক্রিকেটারদের সাফল্য-ব্যর্থতায় সমর্থন দেওয়া, সাবেক ক্রিকেটারদের সম্মান জানানো। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরণ করতে বিসিএসএ হরহামেশাই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিজয় উৎসবেও অগ্রভাগে থাকে বিসিএসএ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার স্বীকৃতসরূপ ‘বিসিএসএ’ ২০১৫ সালে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পায়। বিসিএসএ এর চলার পথে ক্রিকেট সমর্থকদের স্বপ্নের নায়কেরাও তাদের শত ব্যস্ততায় সময় দিয়েছেন ‘বিসিএসএ’ এর বিভিন্ন আয়োজনে।

দেখতে দেখতে বিসিএসএ পেরিয়ে গেলো ১০টি বছর। বিসিএসএ টাইগার্স হয়ে উঠল আরও জনপ্রিয়, আরও প্রসারিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দিয়ে এসেছে অকুণ্ঠ সমর্থন। সদস্যদের কাছে ‘বিসিএসএ’ শুধু একটি সংগঠন’ই নয়, পরিবারের বাহিরেও ‘বিসিএসএ’ তাদের কাছে যেন আরেকটি পরিবার। হাতে-হাত রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুসময়ে-দুঃসময়ে হাসিমুখে সমর্থন করে যাচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশি ভক্তদের ক্রিকেট প্রেম প্রদর্শনের পাশাপাশি বিসিএসএ এমন অনেক কাজই করছে যা প্রতিষ্ঠানটির পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমের মর্যাদাও বাড়িয়ে তুলছে। কলম্বোর পি সারা ওভাল মাঠে শ্রীলঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারাকে বিশেষ বিদায়ী সম্মান জানিয়ে বিসিএসএ বাংলাদেশের সেই সম্মান অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিসিএসএ’র বর্তমান কর্মপরিকল্পনা শুধু ক্রিকেটেই থাকছে না। ফুটবলসহ অন্য ইভেন্টগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু সাকিব তামিমদের খেলা নয় এরা জাতীয় নারী ক্রিকেট দল, অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেটারদেরও মাঠে গিয়ে সমর্থন দিয়ে এসেছে।

DSC 0439
শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ দলের সাথে বিসিএসএ।

হলুদ গ্যালারির গর্জন ছড়িয়েছে মিরপুর থেকে ধর্মশালা-কলম্বো হয়ে ইংল্যান্ডে

বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) হলুদ গ্যালারির গর্জন ছড়িয়েছে মিরপুর থেকে ধর্মশালা, হায়দ্রাবাদ, কলম্বো, ডাম্বুলাতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থনে নিজেদের উজাড় করে দেয়া এ সংগঠনটির গর্জন প্রকম্পিত হয়েছে ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডেও। দেশের মাটিতে টাইগারদের উৎসাহ দিতে, উদ্বুদ্ধ করতে সবসময়ই হলুদ পোশাকে মাঠে যেয়ে সমর্থন যোগায় বিসিএসএ। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও টাইগারদের সমর্থনে কমতি যেনো না থাকে সেলক্ষ্যে গ্যালারীতে উপস্থিত থাকে বিসিএসএ। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর বিসিএসএ দলগতভাবে বিদেশ সফর করেছে চারবার। লাল-সবুজের পতাকা আকাশে তুলে গর্জন দেয় সাকিব-তামিম-মাশরাফি বলে।

২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন যোগাতে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে গিয়েছিল বিসিএসএ’র একটি দল। হিমাচল প্রদেশের ধরমশালাতে কিংবা কোলকাতার ইডেন গার্ডেনে সাকিব-মাশরাফিরা দেখেছিল হলুদ পোশাকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া বিসিএসএ’কে। এরপর ভারতের হায়দ্রাবাদে ঐতিহাসিক ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট দেখতে হায়দ্রাবাদে গিয়েছিল বিসিএসএ’র একটি দল। ২০১৭ সালে শ্রীলংকা সফর তারপর ২০১৮’তে এসে নিদাহাস ট্রফিতে টাইগার ক্রিকেটারদের সমর্থন যোগাতে শ্রীলঙ্কা যায় বিসিএসএ’র একটি দল।

এক ছাদের নিচে রানা-সাকিব-লারা

মাঠের বাইরেও ক্রিকেটকে উৎসবে পরিনত করতে ‘বিসিএসএ’ আয়োজন করে আসছে ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট উৎসব’। বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই উৎসবে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নানা স্মারক, ছবি ও প্রকাশনার প্রদর্শনী। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট, প্রথম টেস্ট জয়, কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোসহ স্মরণীয় সব জয়ের ম্যাচের স্টাম্প। সবচেয়ে উজ্জ্বল তবু যেন রংহীন পুরোনো একটি স্টাম্প। সেটি যে ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ের সেই স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী! অকালপ্রয়াত ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার অটোগ্রাফসহ জার্সি মনে করিয়ে দেবে জীবনের কঠিনতম বাস্তবতা।

বইয়ের নাম ‘মাশরাফি’

নড়াইলে দূরন্ত কৌশিকের বেড়ে ওঠা, চিত্রা নদীর সঙ্গে মিতালি, নড়াইল এক্সপ্রেস হয়ে আবির্ভাব, মাঠের ভেতরে-বাইরে তার নাটকীয় ও রোমাঞ্চকর জীবন উঠে এসেছে ‘মাশরাফি’ বইয়ে। বইটির প্রকাশক বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সমর্থক সংগঠনের কোনো ক্রিকেটারের জীবনী প্রকাশের ঘটনা ক্রিকেটে যথেষ্টই বিরল। এটি দারুণ ভাবে ছুঁয়ে গেছে মাশরাফিকে। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জাতীয় দলের ক্রিকেটার-কর্মকর্তা ও মাশরাফির পরিবার ছাড়াও উপস্থিত ছিল ‘বিসিএসএ’ এর প্রায় পঞ্চাশ জন সদস্য।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবদান রাখা অধিনায়কদের নিয়ে বই ‘বাংলাদেশের অধিনায়ক’। শহীদ জুয়েলের স্মরণে বই ‘ক্রীড়াঙ্গন থেকে রণাঙ্গন’। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সাফল্য ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়। তাদের নিয়েও বিসিএসএর প্রকাশনায় উন্মোচন হয়েছে বই ‘চ্যাম্পিয়ন’।

এসবই যেন মাঠের লড়াইকে বইরের পাতায় রূপ দিতে বিসিএসএ এর অনন্য প্রচেষ্টা।

bcsa1

কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের স্মরণ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ খেলোয়াড় তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কাজ করে আসছে এই সংগঠনটি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবদান রাখা কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের স্মরণে প্রতিবছরই ‘বিসিএসএ’ এর নিবন্ধনকৃত সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করে আসছে বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ‘বিসিএসএ লিজেন্ড কাপ’, ‘মাশরাফি ট্রফি’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান ও অতীতের ক্রিকেটারদের সম্মান জানিয়েছে বিসিএসএ।

ইতিহাস রচয়িতাদের স্মৃতি রোমন্থন

বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) উদ্যোগে উদযাপন করা হয়েছে ঐতিহাসিক ‘বাংলাদেশ বনাম এমসিসি’ ম্যাচের ৪০ বছর পূর্তি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিতে ঐ ম্যাচের ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। সেটিই ছিল বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত, তখন ১৬ জন ক্রিকেটার দেশের ক্রিকেটের উদ্বোধন করেছিলেন চোখেমুখে স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন বর্তমানে যখন অনেকটাই সত্যি, তাঁরা আবারও মিলিত হলেন একই ছাদের নিচে। প্রবীণ সাবেক ক্রিকেটারদের সেই সুযোগটা করে দিয়েছে বিসিএসএ। মূলত ঐ ম্যাচের খেলোয়াড় ও ঐ ম্যাচ সম্পর্কিত সবাইকে সম্মান জানাতেই বাংলাদেশের স্বীকৃত সমর্থক গোষ্ঠী বিসিএসএ এই আয়োজন করে।

IMG 1046A
ডেভিড রিচার্ডসনকে সম্মাননা স্মারক দেয় বিসিএসএ

বিসিএসএ এর কর্মকান্ডে মুগ্ধ আইসিসি

২০১৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সঙ্গে আইসিসির সদর দপ্তরে সাক্ষাত করেছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী।  (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮) আইসিসির সদর দপ্তরে যান বিসিএসএ’র সভাপতি জুনায়েদ পাইকার ও সহ সভাপতি তানভির আহমেদ। যেখানে তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানান স্বয়ং আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। বিসিএসএ’র কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে মুগ্ধ হন আইসিসির প্রধান নির্বাহী।

সুসময়ের পাশাপাশি দুঃসময়েও দলের পাশে থাকতে চায় বিসিএসএ। আর অতীতকে সঙ্গী করে বর্তমানের হাত ধরে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে থাকতে চায় বাংলাদেশ দলের পাশাপাশি।

রাকিবুল হাসান

Read Previous

শাস্ত্রীর পছন্দের সেরা একাদশে অস্ট্রেলিয়ার ৭, ভারতের ৪

Read Next

এলপিএলে গলের সঙ্গে চুক্তিতে সাকিব

Total
0
Share