

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল সাদা বলের দুই ফরম্যাটে তো বটেই, লাল বলের ক্রিকেটেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের পসরা সাজিয়ে বসেছে। ইংল্যান্ড দলের সেই সূত্র মেনে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে অন্য দলগুলোও। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলেও সেই সূত্র মেনে খেলার আলামত পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
তবে খেলাটা যখন ৫০ ওভারি, তখন ঠিক দলগতভাবে আক্রমণাত্মক ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটা খেলতে পারছে না বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের বছর ২০২৩ এর শুরু থেকে বলার মত পারফর্ম করতে পারছে না বাংলাদেশের টপ অর্ডার। আতশ কাচের নিচে খোদ অধিনায়ক তামিম ইকবালের পারফরম্যান্স।
২০২৩ এ ৯ ম্যাচ খেলে ২৮.২৫ গড়ে ২২৬ রান করেছেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে এই বছরে ৭ জন ১০০ এর বেশি রান করেছেন, যাদের মধ্যে সর্বনিম্ন স্ট্রাইক রেট তামিম ইকবালের (৭৫.৮৩)।
চলতি বছরে ওয়ানডেতে ২৯৮ বল মোকাবেলা করেছেন তামিম ইকবাল। যার মধ্যে ২৮ বল থেকেই করেছেন ১১৬ রান। বাকি ২৭০ বল থেকে করেছেন কেবল ১১০ রান। প্রতি ম্যাচেই তাৎপর্যপূর্ণ ডট বল খেলছেন তামিম, যা তার স্ট্রাইক রেটে প্রভাব ফেলছে তো বটেই, প্রভাব ফেলছে দলের স্কোরবোর্ডেও, চাপে ফেলছে অন্য প্রান্তে থাকা ব্যাটারকে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩য় ওয়ানডের উদাহরণ টানা যাক। এই ম্যাচে দারুণ শুরু করেছিলেন পজিশন বদলে চারে নামা লিটন দাস। তবে ৩৯ বলে ৩৫ রান করে থামতে হয় তাকে। এই আউটে তামিমের দায় দেখেন ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ক্রিকেটখোরের প্রতিষ্ঠাতা একেএম কাউসার।
ম্যাচ চলাকালীন ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিল লিটন, স্ট্রাইকে গিয়ে তিন বল ডট দিয়ে সিঙ্গেল নিলো তামিম। শেষ বলটা খেলার দায়িত্ব লিটনের। ওভারে রান আসছে মাত্র ২!
ওভার প্রতি যেখানে রান নেয়া উচিত ৫-৬ করে সেখানে শেষ বলে লিটনের কি করা উচিত? অবশ্যই তার চার বা ছয় মারার ইনটেনশন থাকবে, চার বা ছয় মারার মত বলও তো পাওয়া লাগবে তার?
এই অবস্থায় সে আউট হলে দায়টা কার? শুধুই লিটনের? মনস্তাত্ত্বিক চাপ বলে একটা জিনিস আছে!’
একেএম কাউসারের কথাকে চাইলে আপনি আমলে নাও নিতে পারেন, তবে দলগত খেলাতে যেকোন ব্যক্তির পারফরম্যান্স প্রভাব ফেলে সামগ্রিক ফলে।
তামিমের অতিরিক্ত ডট বল খেলার প্রবণতা দলকে তো বটেই, ভোগাচ্ছে তামিমকেও। যেই পরিসংখ্যান নিয়ে তামিমকে প্রায়শই গর্ব করতে শোনা যায়, সেই পরিসংখ্যান বলছে ২০২৩ এ এসে ৩৪ বছর বয়সী তামিমের রেকর্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
২০২৩ এ তামিমের ডটবল নামা (লেগ বাই সূত্রে রান আসলে সেই বল বিবেচনা না করে)-
১ মার্চ, বিপক্ষ ইংল্যান্ড, মিরপুর- ৩২ বলে ২৩ রান। ২৩ রানের ১৬ রান আসে ৪ টি বাউন্ডারির সাহায্যে। এই ইনিংসে তামিম ডট বল খেলেন ২১ টি।
৩ মার্চ, বিপক্ষ ইংল্যান্ড, মিরপুর- ৬৫ বলে ৩৫ রান। ৩৫ রানের মধ্যে ১৬ রান আসে ৪ টি বাউন্ডারির সাহায্যে। ৬৫ বলের মধ্যে ৪৩ বলেই কোন রান নিতে পারেননি তামিম।
৬ মার্চ, বিপক্ষ ইংল্যান্ড, চট্টগ্রাম- ৬ বলে ১১ রান। ১১ রানের মধ্যে ৪ রান আসে ১ বাউন্ডারিতে। ৬ বলের মধ্যে ২ বলে কোন রান নিতে পারেননি তামিম।
১৮ মার্চ, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, সিলেট- ৯ বলে ৩ রান। ৯ বলের মধ্যে ৬ বলই খেলেন ডট।
২০ মার্চ, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, সিলেট- ৩১ বলে ২৩ রান। যেখানে ১৬ রান আসে ৪ বাউন্ডারিতে। ডট বল ২১ টি।
২৩ মার্চ, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, সিলেট- ৪১ বলে অপরাজিত ৪১ রান। ৪১ রানের ৩২ রানই আসে ৫ চার ও ২ ছয়ের সাহায্যে। এই ইনিংসেও তামিমের খেলা ডটবলের সংখ্যা- ২৮ টি!
৯ মে, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, চেমসফোর্ড- ১৯ বলে ১৪ রান, ৮ রান আসে দুই বাউন্ডারিতে। ডট বলের সংখ্যা ১৪।
১২ মে, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, চেমসফোর্ড- ১৩ বলে ৭ রান, কোন বাউন্ডারি ছাড়া। এই ইনিংসেও ৯ টি ডট বল খেলেন তামিম ইকবাল।
১৪ মে, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, চেমসফোর্ড- ৮২ বলে ৬৯ রান। ২৪ রান আসে ৬ বাউন্ডারিতে। ডট বলের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ, ৩৯ টি।
২৪০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ার তামিম ইকবালের। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ওয়ানডে রানের মালিক তামিমের আছে ১৪ সেঞ্চুরি, ৫৬ ফিফটি। ৩৬.৭২ গড়ে রান করা তামিমের স্ট্রাইক রেট ৭৮.৫৭ (২০২৩ সালের স্ট্রাইক রেটের চেয়ে কিঞ্চিত বেশি)।