

সিরিজ শুরুর আগেই আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলার বার্তা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক আফিফ হোসাইন ধ্রুব। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে নেমেই যেন অধিনায়কের কথার বাস্তবায়ন বদ্ধপরিকর সাইফ হাসান, জাকির হাসান ও জাকের আলি অনিকরা। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে দ্রুত রান তুলাতেই মনোযোগী ছিলেন জেমি সিডন্সের শিষ্যরা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান তুলেছিলেন ঠিকি, তবে অতিরিক্ত আক্রমনাত্মক হতে গিয়ে ফলোঅনে পড়তে হয়েছে আফিফদের।
তৃতীয় দিনে সেঞ্চুরি হয়নি জশুয়া ডি সিলভার, ফিরেছেন ৭৭ রানে। তবে ফিফটি পেয়েছেন কেভিন ওয়াসল্ড, জশুয়া ডি সিলভা আউটের পরই ৭ উইকেটে ৪২৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল। কেভিন থাকেন ৫৩ রানে। জবাবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল ব্যাটিংয়ে নামতেই উইকেটের আচরণ বদলে যায়, সিলেটের সবুজাভ উইকেটের ফায়দা কাজে লাগিয়ে উইন্ডিজ বোলার জেইর ম্যাকেলিস্টার তুলে নেন ৫ উইকেট। ফলে সাইফ হাসান (৯৫) ও জাকের আলি অনিক (৬৪*) ফিফটির পরও বাংলাদেশ ফলোঅন এড়াতে পারেনি। বাকী ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে ৬৭.৪ ওভারে বাংলাদেশ থামে ২৬৪ রানে।
প্রথম দুই দিনের মতো আজও সিলেটে বৃষ্টির কারণে খেলায় বিঘ্ন ঘটে। সেই বাধায় খেলা শুরু নির্ধারিত সময়ের পর। বেলা ১১টায় খেলা শুরু হলে দিনের শুরুতে ফিফটি তুলে নেন কেভিন ওয়াসল্ড। কেভিনের ফিফটির পর জশুয়াকে সাজঘরে ফেরান নাইম হাসান। ফলে ৭৭ রানে রানে থামে ক্যারিবীয় অধিনায়কের ইনিংস। জশুয়া প্যাভিলিয়নের পথে হাটতেই ইনিংস ঘোষণা করে যান। কির্ক ম্যাকেঞ্জি (৮৬), ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল (৮৩), আলিক স্টিভেন আথানাজ (৮৫), জশুয়া ডি সিলভা (৭৭) এবং কেভিন ওয়াসল্ডের (৫৩*) পাঁচ ফিফটিতে ৪২৭ রানের পুঁজি পায় উইন্ডিজ।
বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মো. মুশফিক হাসান। নাইম হাসানের শিকার ২ আর ১টি করে উইকেট নেন সাইফ হাসান ও রিপন মন্ডল।
জবাবে খেলতে শুরুতে বড়সড় ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। ২১ রানে ওপেনার সাদমান ইসলাম (২), ৬১ ও ৬৮ রানে জাকির হাসান (৩০) ও মাহমুদুল হাসান জয় (২) হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
সাদমানকে হারানোর ধাক্কা সাইফ হাসান নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালান জাকির। দ্বিতীয় উইকেটে ৪০ রান যোগ করেন মাত্র ৫০ বলে। জাকিরের বিদায়ে সেই লড়াই থামে দলীয় ৬১ রানে। চারে নামা মাহমুদুল উইকেটের আচরণ বুঝে ওঠার আগেই প্যাভিলিয়নে পাঠান জাইর ম্যাকেলিস্টার।
এরপর সাইফের ব্যাটে আগায় বাংলাদেশ ইনিংস, ৮ চার এবং ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ফিফটি করেন সাইফ। সেই সাথে বাংলাদেশের সংগ্রহও একশো পেরিয়ে সহজেই। সাইফ যাকে সঙ্গে পান সেই আফিফ হোসাইনও ব্যাট করেন আগ্রাসী মেজাজে। ম্যাচ শুরুর আগে আফিফ বলেছিলেন আক্রমনাত্মক ক্রিকেটই হবে মূলমন্ত্র। সেই কথার বাস্তবায়ন আফিফ করেছেন নিজেই, তবে সেটা বেশিদূর টানতে পারেননি। সাইফ-আফিফের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ফিফটি আসে মাত্র ৩৭ বলে। যেখানে অধিনায়ক আফিফের ব্যাট থেকে ২১ বলে ৩০ রান।
দলীয় ১৬৯ রানে আফিফকে ফিরিয়ে সাইফ-আফিফের শতরানের চতুর্থ উইকেট জুটি ভাঙেন রেইমন রেইফার। চারদিনের ম্যাচে টি২০’র স্বাদ দেওয়া আফিফ-সাইফ শতরানের জুটি গড়েন মাত্র ৭৫ বলে। ৪১ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রান করে আফিফ আউট হলে ভাঙে ১০১ রানের জুটি।
আফিফের বিদায়ের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ ‘এ’ দল। দারুণ সব শটে মুগ্ধতা ছড়িয়ে সেঞ্চুরির দিকে ছুটে চলা সাইফকেও ফিরতে হয়েছে সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে পুড়ে। ম্যাকেলিস্টারের বলে ফিরতে ক্যাচে পরিণত হয়ে সাইফ সাজঘরে ফিরেন ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে। আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কার সাহায্যে ৯৫ রানের মনমাতানো ইনিংস খেলেন সাইফ।
এরপর ম্যাকেলিস্টারের বলেই কাবু হয়েছেন বাংলাদেশের নিচের সারির ব্যাটাররা। ছয়ে নামা জাকের আলি অনিক ব্যতিত আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। আসলে দাঁড়াতে দেননি ম্যাকেলিস্টার। নাইম হাসান (৪) ও রিপন মন্ডল (০) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ২৬৪ রানে থামিয়ে দিতে অনবদ্য অবদান রাখেন ম্যাক। সেই সাথে মাত্র ১৫ ওভারে ৬০ রানে শিকার করেন ৫ উইকেট। আর অনিকের একক লড়াই থামে ৬৪ রানে অপরাজিত থেকেই।
২৬৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় ফলোঅনে পড়ে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়রা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশকে। ফলোঅনে পড়ে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ‘এ’ দল কোনো উইকেট না হারিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে ৫ রানে। সাদমান অপরাজিত আছেন ৫ রানে, আরেক ওপেনার জাকির ২ বলে মোকাবেলা করেও রানের দেখা পাননি এখনো।