এনামুলের চোখে ছয় অধিনায়ক, বিশ্লেষণ ও আক্ষেপ

এনামুলের চোখে ছয় অধিনায়ক, বিশ্লেষণ ও আক্ষেপ
Vinkmag ad

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ১৫ টেস্ট আর ১০ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে দশ বছর সময় লেগেছে এনামুল হক জুনিয়রের। এই এক দশকে বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিনায়কেরও বদল হয়েছে কয়েকবার। আসা যাওয়ার মধ্যে ছয় অধিনায়কের অধীনে ছোট ক্যারিয়ারের ১৫টি টেস্ট এবং ১০টি ওয়ানডে খেলেছেন এনামুল। তাঁর খেলা সবগুলো ম্যাচের অধিনায়কের তালিকায় নাম আছে খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার সুমন, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের।

মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বে খেলতে না পারার আক্ষেপ আছে এনামুল হক জুনিয়রের। টেস্ট ক্রিকেটে মাশরাফি অনিয়মিত হওয়া সেই সুযোগ হয়নি এনামুল হক জুনিয়রের। আবার ওয়ানডেতে তেমন একটা বিবেচনা করা হত না তাঁকে। তাই তাঁর খেলা অধিনায়কদের মধ্য থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে এগিয়ে রাখাটা কঠিন হবে। তাই এনামুল জুনিয়রের কাছে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, তারপরে খালেদ মাহমুদ সুজন।

No description available.

নিজের সেই সব অধিনায়ক কেমন ছিলেন, তাঁরা কিভাবে সাহায্য করেছেন এনামুল হক জুনিয়রকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে, সেইসব কথাই শুনিয়েছেন এনামুল।

যখনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এনামুল হক জুনিয়র। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়কও তিনি, সেদিন তাঁর স্পিন জাদুতেই ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।

সেই এনামুলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সূচনা হয় ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে আসে বাংলাদেশে। মোহাম্মদ রফিকের সাথে বাড়তি বা হাতি স্পিনার খুঁজছিলেন তৎকালীন কোচ ডেভ হোয়াটমোর। সেখানে কে হতে পারেন সেরা পছন্দ, দুই তিন নাম আসছিল বার বার, তাঁদের মধ্যে এনামুল হক জুনিয়র ছিলেন এগিয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলানোর পরিকল্পনায় তাঁকে প্রস্তুতি ম্যাচের দলে রাখেন তখনকার নির্বাচকরা, প্রস্তুতি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দেন সদ্য কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পা দেওয়া এনামুল হক জুনিয়র। সেই প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের চার ব্যাটসম্যান কে আউট করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি, আর তাতেই অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের নজর কাড়েন জুনিয়র।

অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ তৎকালীন হেড কোচ ডেভ হোয়াটমোরকে বলেন, ‘মোহাম্মদ রফিকের সঙ্গী হিসেবে এনামকে (এনামুল হক জুনিয়রকে) দলে নেওয়া যায়।’

ফলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পান এনামুল হক জুনিয়র। খালেদ মাহমুদ সুজনের অধিনায়কত্বে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় এনামুল হক জুনিয়রের আর সর্বশেষ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলেন মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে।

খালেদ মাহমুদ সুজন

খালেদ মাহমুদ সুজন, সেই ব্যক্তি যিনি এনামুল হক জুনিয়রকে হাতে ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে তুলেছেন, বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের নায়কও সে কথা অকপটে স্বীকার করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য এনামুল হক জুনিয়রকে তৈরি করেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খালেদ মাহমুদ সুজনের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে জুনিয়র বলেন, ‘আসলে সুজন ভাইয়ের কাছে থেকে সব কিছু শিখেছি, টেস্ট অভিষেকের আগে ২০০২ সালে সুজন ভাইয়ের সাথে কর্পোরেট ক্রিকেটে খেলেছিলাম, যেটা গ্রামীণফোন আয়োজন করেছিল। তারপরে ২০০৩ সালে টেস্ট অভিষেক হয় সুজন ভাইয়ের অধিনায়কত্বে।’

অধিনায়ক হিসেবে খালেদ মাহমুদ সুজন অসাধারণ, তিনি মাঠে থাকলে বোলারদের উপর চাপটা কমে যেত। ফিল্ডিং সাজানো থেকে শুরু কোথায় বল করতে হবে সব কিছু বলে দিতেন তিনি। সাধারণত দেখা যায় ফিল্ডিং সাজানোর কাজটা বোলার নিজে করে থাকেন কিন্তু খালেদ মাহমুদ সুজনের সময়ে সেই কাজটা নাকি করতেন নিজেই। এ ক্ষেত্রে বোলারদের ফিল্ডিং সাজানোর চাপটা কমে যেত, তিনি শুধু বলতেন ঠিক জায়গায় বলে করে যাও বাকিটা আমি দেখছি। বোলারদের ওপর চাপ কমাতেই এই কাজটা করতেন সুজন।

যেমনটা ফুটে উঠে এনামুলের কথায়, ‘২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমার অভিষেক টেস্টে, আমি তখন তরুণ ছিলাম, টেস্ট ম্যাচে ফিল্ডিং কিভাবে সাজাতে হত তা এতোটা ভাল জানতাম না। সুজন ভাই সেই কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন আমি প্রথম উইকেট পাই, তার আগে সুজন ভাই আমাকে বললেন আমি যেন একটু স্কোয়ার লেগে একটা ফিল্ডার রাখি। স্কোয়ার লেগে আমরা সচরাচর ফিল্ডার রাখি না। আমার পরের বলে সেই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইংলিশ ব্যাটসম্যান ট্রেসকথিকের ক্যাচটা স্কোয়ার লেগেই ধরেছিলেন সুজন ভাই।’

prv 1519923574

খালেদ মাহমুদ সুজন অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বলে মনে করেন এনামুল হক জুনিয়র। যদিও বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ হয়নি তাঁর। এনামুলের ভাষায়, ‘টেকনিক্যালি অনেক সাউন্ড ছিলেন, খেলাটা সহজে বুঝতে পারতেন। সহজে ম্যাচে হাল ছাড়তেন না, শেষ পর্যন্ত লড়াই করার একটা মনোভাব ছিল। যা আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে দেখেছিলাম, বাংলাদেশকে একদম জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।’

খালেদ মাহমুদ সুজনকে নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা হয়, তবে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাটা হয় বেশি। বাংলাদেশের অন্যতম এই সেরা ক্রিকেটারে সমালোচনা মানতে পারেন না এনামুল হক জুনিয়র, তার মতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ পাইপলাইনে প্লেয়ার তৈরি করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সুজন। সব সময় দেশের তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের আগলে রাখেন সুজন।

যেমনটা আলোকপাত করলেন এনামুল, ‘তরুনদের সুযোগ করে দিতে সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন সুজন ভাই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শাহরিয়ার নাফিস, মেহরাব হোসেন জুনিয়রের কথাই যদি ধরো, তাদেরকে সুজন ভাই সিটি ক্লাব টিমে নিয়ে খেলিয়েছিলেন। তারা তখন খুব ছোট ছিল। সবাইকে কিন্তু সুজন ভাই ভাল ক্লাবে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এখনো তিনি তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্লেয়ারদের আগেভাগেই বিভিন্ন দলে সেট আপ করে দেন। বাংলা ট্র্যাক নামে একটি ক্রিকেট একাডেমিও আছে ওনার, যেখানে তিনি তরুন ক্রিকেটার তুলে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। সুজন ভাইয়ের কাছে গিয়ে কেউ কখনো খালি হাতে ফিরে আসেনি। কারো সাথে রাগ করলে, বেশিক্ষণ সেই রাগ রাখেন না।’

হাবিবুল বাশার সুমন

হাবিবুল বাশার সুমন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সফল অধিনায়ক। ওয়ানডেতে জয়ের পরিসংখ্যানে মাশরাফি বিন মুর্তজার পরে দ্বিতীয় সফল অধিনায়ক তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথম জয়টা পায় সেই বাশারের নেতৃত্বেই, অধিনায়ক বাশারের সেই নায়ক আবার এই এনামুল হক জুনিয়র। ২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানে ৬ উইকেট শিকার করে একাই জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিয়েছিলেন এনামুল। এ কথা বলা হয়ে থাকে যে, অধিনায়ক হিসেবে হাবিবুল বাশার হিরো হওয়ার পিছনে এনামুল হক জুনিয়রের অবদান কোনো অংশে কম নয়। আবার একথাও বলা হয় যে এনামুল হক জুনিয়র হিরো হওয়ার পিছনে ছিলেন অধিনায়ক বাশার।

আসলে নায়ক কে? শুনি এনামুল হক জুনিয়রের কথায়, তিনি বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে আমি ছিলাম উইকেট শুন্য, এদিকে রফিক ভাই হ্যামস্ট্রিং আঘাত পেয়েছিলেন সুমন ভাই আমাকে এসে বললেন ‘রফিক ভাই কিছুটা ইনজুরি এই ম্যাচ জিতাতে হলে আমাকে ভাল করতে হবে। রাজিন ভাই, আফতাবরা আমাকে সাহস দিতে লাগলো যে, “তুই পারবি,তুই পারবি”। প্রথম উইকেট পাওয়ার পর মনে হয়েছে আমি ভাল কিছু করতে পারব। পরে সেই ম্যাচে ছয় উইকেট পেয়েছিলাম। আসলে সেদিন সুমন ভাই আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন।’

No description available.

অধিনায়ক হিসেবে হাবিবুল বাশার সুমন ছিলেন মোস্ট মোটিভেটেড ক্যাপ্টেন। তিনি মনে করতেন যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে আসা প্লেয়ারদের নতুন করে শিখার কিছু নাই। প্রত্যেক প্লেয়ারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন তিনি। অধিনায়ককে যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়, সেই কাজটা খুব ভাল করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, ব্যাট হাতে বেশ ভালই সার্ভিস দিয়েছিলেন। তাঁর সময় অনেক ভাল প্লেয়ার উঠে এসেছিল বাংলাদেশ দলে। অধিনায়ক ভাল খেললে বাকিরা উৎসাহ পায়, সেই কাজটা ভালভাবে করে গেছেন হাবিবুল বাশার। এক ইনিংস খারাপ খেললে পরের ইনিংস ভাল খেলেতেন তিনি।

এনামুল হক জুনিয়র বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে সুমন ভাই টেকনিক্যালের চেয়ে মোটিভেটেড ছিলেন বেশি। তিনি প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন। বোলাররের কাজ বোলারকে, ব্যাটসম্যানের কাজ ব্যাটসম্যানকে। চাপ তৈরি না করে উৎসাহ জোগাতেন বেশি। বোলাররা নিজেদের মত করে ফিল্ডিং সাজাতে পারত, কিছু কিছু ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন। তখন আমি অনেক ম্যাচিউরড ছিলাম খেলাটা বুঝতাম। তাই নিজেই ফিল্ডিং সাজিয়ে নিতাম, অনেক সময় পরামর্শও দিতেন। অধিনায়ক যে সামন থেকে নেতৃত্ব দেয় সেই গুনটা সুমন ভাইয়ের ছিল।’

খেলার বাইরে বাশার ছিলেন খুবই আড্ডাবাজ ও হাসিখুশি প্রানবন্ত এক মানুষ। এনামুল যেমনটা বলেছিলেন, ‘খেলার বাইরে সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার) খুবই আড্ডা প্রিয়, আড্ডাবাজ। হাসি খুশি। সব সময় হাসি খুশিতে মাতিয়ে রাখতেন সবাইকে। আসলে বাংলাদেশের সব অধিনায়ককে আমি এরকম দেখেছি। সুজন ভাইও এরকম ছিলেন।’

এনামুল হক জুনিয়রের এক সময়ের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বর্তমানে কাজ করছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে আছেন বাশার। এদিকে এনামুল হক জুনিয়র ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছেন দাপটের সাথে। ফিটনেস, পারফর্মেন্স নজর কাড়ার মত। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মাদের একজন এনামুল হক জুনিয়র, বিশেষ করে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে বোলারদের টপ ফাইভ লিস্টে তার নাম থাকে সবসময়। ফিটনেস টেস্টেও দুর্দান্ত এনামুল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বছর দুইয়েক আগে। এতসবের পরেও কি এনামুল কোনো বার্তা পেয়েছিলেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের কাছ থেকে? সেটা হোক উৎসাহমূলক বা তার পারফরম্যান্সে নির্বাচকদের ভাবনা নিয়ে?

এ ব্যাপারে এনামুল বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে এরকম কোনো বার্তা পাইনি, সেটা উৎসাহমূলক হোক কিংবা দলে নেওয়া না নেওয়া। নির্বাচক হওয়ার পর থেকে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। দেখা হলে আমি সুমন ভাইকে আমার অধিনায়ক হিসেবে দেখি, আগের স্মৃতিগুলো মনে করে আড্ডায় হারিয়ে যাই। সুমন ভাইকে সব সময় সম্মানের জায়গায় দেখি এবং সম্মান করি। কিন্তু আমার ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনো কোনো কথা হয়নি। এ ব্যাপারে কখনো কোনো কিছু বলেননি।’

মোহাম্মদ আশরাফুল

২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে যোগ দেন জেমি সিডন্স। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তার প্রথম সিরিজ ছিল নিউজিল্যান্ডের সাথে তাদের মাঠিতে। মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল, সেই সফরে বাংলাদেশ টেস্ট দলে ছিলেন এনামুল হক জুনিয়র। সেই সফরে মোহাম্মদ আশরাফুলের অধিনায়কত্বে এক টেস্টে খেলার সুযোগ পান এনামুল হক জুনিয়র। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকেই মোহাম্মদ আশরাফুলের অনেক স্মৃতি আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকবার এক দলে আশরাফুলের সাথে খেলার অনেক স্মৃতি আছে এনামুলের।

No description available.

সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক বলেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে অনেক স্মৃতি আছে আমার, তবে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে কেমন ছিল এতোটা মনে নেই। একবার জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেট বিভাগের হয়ে তার অধিনায়কত্বে খেলেছিলাম তখন মনে হয়েছে সে একটা সলিড ক্যাপ্টেন। ২০১০-১১ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংক প্রথম দল গঠন করে, সেই দলে আশরাফুলের অধিনায়কত্বে খেলেছিলাম। তাঁর ক্যাপ্টেনসি অনেক উপভোগ করেছি তখন। সুপার লিগে দুই একটা ম্যাচে সে খেলতে পারেনি। দলও অনেক ভাল খেলেছিল তাঁর নেতৃত্বে। এটা মানতে হবে যে মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার এবং একজন ভাল ক্রিকেটার।’

মাশরাফি বিন মর্তুজা

এনামুল হক জুনিয়র আফসোস করেন মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বে খেলতে না পারার জন্য। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট উইন্ডিজ সফরের জন্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অধিনায়ক এবং সাকিব আল হাসানকে সহ অধিনায়ক করে দল ঘোষণা করে বিসিবি। সেই সফরে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন এনামুল হক জুনিয়র। মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নামে বাংলাদেশ দল, ইনিংসের শুরুতেই ইনজুরিতে পড়ে যান মাশরাফি। ফলে অধিনায়কের দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান এবং সে ম্যাচে বাংলাদেশ দল জয় লাভও করে। সেই দলে ছিলেন এনামুল, তবে প্রথম ম্যাচের একাদশে সুযোগ হয়নি তাঁর।

No description available.

দলের ডাগ আউটে বসে মাশরাফির অধিনায়কত্বের কিছুটা ঝলক দেখেছিলেন এনামুল। সেই দেখা থেকে জুনিয়র বলেন, ‘নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, শুরুর দিকে মনে না হলেও চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়ে বুঝা গেছে সে খুব ভাল অধিনায়ক। প্লেয়ারদের পক্ষে দাড়ানো, প্লেয়ারদের খারাপ সময়ে পাশে থাকা আসলে দলের প্রয়োজনে কাজ করা। সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। পরিসংখ্যান, নেতৃত্ব গুণ সব কিছুই বলবে তিনি বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক। বল হাতেও বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। সবার মুখেই তাঁর গুণগান শুনেছি। প্লেয়ার হিসেবেই দেখেছি সব, অনেক ম্যাচ একসাথে খেলেছি। শুরু দিকে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। ২০০৫ সালের পর আমাকে বাংলাদেশের একজন সেরা স্পিনার হিসেবে মানতেন। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কোনো আফসোস থাকলে, তারমধ্যে অন্যতম একটা আফসোস হচ্ছে তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারা।’

সাকিব আল হাসান

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ইনজুরিতে পড়েন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফলে অধিনায়কের দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। সেই ম্যাচে একাদশে ছিলেন এনামুল হক জুনিয়র, বল হাতে দুই ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে অবদান রাখেন তিনি। ফলে বাংলাদেশ দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় ২-০ তে। বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ ব্যাটে বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্ব খুব বেশি উপভোগ করতেন এনামুল হক জুনিয়র।

সাকিবকে নিয়ে এনামুল হক বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্ব খুব বেশি উপভোগ করেছি, ২০০৯ সালে একটি ম্যাচে খেলেছি। জিম্বাবুয়ের সাথে ওয়ানডে সিরিজও ভাল খেলেছিলাম। প্রতিপক্ষ দলকে রিড করার ক্ষমতা অনেক ভাল। গেম রিড করার ক্ষমতা খুব বেশি। টেকনিক্যালি বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক। খুব স্ট্রিক্ট ক্যাপ্টেন। যাকে যেখানে সম্মান দেওয়ার কথা তাকে সেখানে সে সম্মান দেয়। সে স্ট্রেইট ফরয়ার্ড কথা বলে, কারো পিছনে সে কোনো কথা বলবে না। যার যে ভুল সে তার সামনা-সামনি বলে দেয়। সে বলে দেয় ‘এনাম ভাই আপনার এখানে এই জিনিসটা করা ঠিক হয়নি।’ এভাবে সে বলে দেয়। আসলে এটা খুব ভাল, এটা করা দরকার বলে মনে করি।’

No description available.

মুশফিকুর রহিম

অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুর রহিম যখন উন্নতি করা শুরু করেছিলেন তখনিই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন তিনি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন এনামুল হক জুনিয়র। সেই ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেই ম্যাচে ভালও খেলেছিলেন এনামুল হক জুনিয়র কিন্তু এরপর আর কোনো সুযোগ পাননি এনামুল।

সেই এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে অধিনায়ক মুশফিকে এনামুল বলেন, ‘মুশফিকের নেতৃত্বে এক ম্যাচ খেলেছিলাম, ভালও করেছিলাম। পরের ম্যাচে খেলার সুযোগ পাইনি। অধিনায়ক হিসেবে মুশফিক উন্নতি করছিল তখন, এরপর কিনা সে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়। মুশফিক আবেগী ছেলে কিন্তু এখন অনেক পরিনত হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি পরিপক্ক। এখন তার অধিনায়কত্ব করার কথা কিন্তু সে করছে না। বিপিএলে যেভাবে ক্যাপ্টেন্সি করেছে, সেটা দেখে বুঝা গিয়েছিল যে তার ঐ সময়ে তার অধিনায়কত্ব ছাড়া ঠিক হয়নি। বিপিএলের ক্যাপ্টেন্সি দেখে বুঝা গেছে তার নেতৃত্ব গুন দারুণ ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে মোহামেডানে একসাথে খেলেছি, বিসিএলেও এক দলে খেলেছি। সন্দেহ নেই, সে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। সে আসলে পরিশ্রমী প্লেয়ার, সে নিজেকে যে পর্যায় নিয়ে গেছে কেউ যদি তাকে ফলো করে তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরো উন্নতি হবে। রাতারাতি এই পর্যায় আসেনি মুশফিক, কঠোর পরিশ্রমের ফলেই এতো দূর এসেছে। আসলে অনুশীলনের প্রথম ব্যক্তি মুশফিক, শেষ ব্যক্তিও মুশফিক। মাঠে তাকে সবার আগে পাওয়া যায় এবং সে সবার শেষে রুমে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে তো জানতে সবাই পারছেন যে, করোনার সময় ব্যাটিং অনুশীলন না করতে পারায় সে কতটা আফসোস করছিল। তখন তার ভিডিও গুলো দেখলেই বুঝা যেত আসলে সে কতটা কঠোর পরিশ্রমী।’

মোহাম্মদ আফজাল

Read Previous

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের জন্য ইংল্যান্ডের স্কোয়াড ঘোষণা

Read Next

বৃষ্টি বাধার আগে সিলেটে চন্দরপল দর্শন

Total
0
Share