অ্যান্ডি বালবার্নির স্বপ্নের বাহক বাবা অ্যাশলি, মানিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশে

অ্যান্ডি বালবার্নির স্বপ্নের বাহক বাবা অ্যাশলি, মানিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশে
Vinkmag ad

ছেলে দেশকে নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশে। বাবা-মা আসলেন ছেলের খেলা দেখতে। সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে গতকাল ঢাকায় আসেন আইরিশ ক্যাপ্টেন অ্যান্ডি বালবার্নির বাবা-মা, আজ আসলেন মিরপুর শের-ই-বাংলায়। সেখানেই কথা বলেছেন, সুনাম করেছেন বাংলাদেশের। বন্দনায় মেতেছেন তাসকিনের। সুযোগ পেলে সাকিব আল হাসানকে আয়ারল্যান্ড দলে পেতে চাইতেন!

অ্যান্ডি বালবার্নি শুধু নিজেই তার স্বপ্নের বাহক নন, পৃথিবীর সব দুর্গম পথে তার সঙ্গী হতে চান বাবা অ্যাশলি বালবার্নি ও মা ক্যান্ডি লাপপিন। বাবা হয়ে ছেলের সাফল্য দেখা গর্বের; অ্যান্ডি বালবার্নির বাবা অ্যাশলি বালবার্নিরও ঠিক এমনই অনুভূতি। শৈশবে বাবার আঙুল ধরে শুরু হয় পথচলা, কৈশোরের দুরন্তপনার সঙ্গী, এখন আয়ারল্যান্ড দলের নিয়মিত অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি।

তার নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে আয়ারল্যান্ড। অঘটন’-ই বলছেন অনেকে। কারণ, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ক্যাপ্টেন অ্যান্ডি বালবার্নির অনবদ্য হাফ-সেঞ্চুরি যা এককথাই বীরত্বব্যঞ্জক।

খেলোয়াড় ছেলের জন্য তাই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। ছেলেকে ঘিরেই অ্যান্ডি বালবার্নির বাবার স্বপ্নের পৃথিবী, কল্পনার পাতায় পাতায় এঁকে রেখেছে শতশত সুখের আলপনা।

‘আমরা তার জন্য খুবই গর্বিত। সে যেটা করতে ভালবাসে, সেটাই করছে। সে নিজেও আনন্দিত (টেস্টে নেতৃত্ব দিতে নেমে), আমরাও তাকে খেলতে দেখে আনন্দিত।’

‘তার যখন ৬ বছর বয়স তখন আমরা আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমাই। আমাদের বাড়িটা ক্রিকেট মাঠের খুব কাছে ছিল। সেদিন থেকে শুরু করে আজ অব্দি- তাকে যদি আপনি জিজ্ঞাসা করতেন যে সে কি হবে- তার উত্তর একটাই হত- আমি পেশাদার ক্রিকেটার হতে চাই।’ 

সবশেষ বিপিএলে অ্যান্ডি বালবার্নি খেলেছেন খুলনা টাইগার্সের জার্সি। তখন বালবার্নির বাবা অ্যাশলি বাংলাদেশে আসতে না পারলেও ইউটিউবে দেখেছেন বিপিএল।

‘আমার ছেলে বিপিএলে খেলেছে খুলনা টাইগার্সের হয়ে। আমি তাদের সব ম্যাচ দেখেছি ঘরে বসে টেলিভিশনে (ইউটিউবে)।’ 

ক্রিকেটের কারণেই বালবার্নি পরিবার আজ বাংলাদেশে। এই প্রথমবার বাংলাদেশে আসলেন, মুগ্ধ হয়েছেন এদেশের সৌন্দর্যে।

‘আমরা আনন্দিত যে সে (অ্যান্ডি) তার স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। আর সেটা করতে গিয়ে সে বাংলাদেশের মত সুন্দর দেশে আসছে।’

‘আমরা অনেক দেশে গিয়েছি (ছেলের খেলা দেখতে)। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, জিম্বাবুয়ে, কানাডা, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস সহ অনেক দেশেই যাওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম বাংলাদেশে আসা, আমরা শ্রীলঙ্কাতেও যাচ্ছি প্রথমবারের মত।’

‘খুবই উপভোগ করি (মাঠে বসে ছেলের খেলা দেখা)। আমরা এখানে পৌঁছেছি সোমবার সকালে। এখানে অনেক মানুষ। এক ঢাকাতে যে মানুষ আছে তা আয়ারল্যান্ডের মোট মানুষের ৩ গুণ! অনেক মানুষ, তবে আমরা এটাতে মানিয়ে নিচ্ছি (হাসি)।’ 

ট্রাফিক জ্যাম ঢাকাবাসীদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আপনি ডাবলিনে এটা কল্পনাতেও আনতে পারবেন না। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’র তথ্যানুসারে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ২৬ হাজার।

নির্জনতম এক শহর থেকে ১ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষের বসবাস ঢাকায় এসে কেমন লাগছে অ্যাশলি বালবার্নির?

‘আমি জ্যাম দেখিনি, কারণ আমার চোখ বন্ধই ছিল বেশিরভাগ সময়ে। এটা ভয়ঙ্কর, আমার জন্য।’

আয়ারল্যান্ডের স্পোর্টস ও ক্রিকেট নিয়ে গল্প শোনালেন অ্যাশলি,

‘ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডে একনম্বর খেলা তো নয়ই, এমনকি ১০ নম্বরও না (হাসি)। আয়ারল্যান্ডে এটি খুবই কম জনপ্রিয় খেলা, তবে এটার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অনেক দেশ থেকেই আয়ারল্যান্ডে বসবাস করতে মানুষ আসে, এশিয়া থেকেও আসছে… এবং তারা ক্রিকেট খেলতে চায়।’

‘এটার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলেও এখনও তা খুবই কম। আমাদের খুব বেশি ক্রিকেটার নেই। যাদেরকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে দেখেছেন, তারাই আসলে একটা গ্রুপ যারা সব ফরম্যাট খেলছে। কারণ প্লেয়ার পুল খুবই ছোট। আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে যদিও।’

‘শুরুতে এটা প্রভাব ফেলেছিল (কাউন্টি ক্রিকেট)। এখন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটাররা ওভারসিজ ক্রিকেটার হিসাবে খেলে। আগে এমনটা ছিল না, এর মানে হচ্ছে কাউন্টির সুযোগ তাদের কমছে। তবে অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া স্ট্রাকচার আরও পেশাদার হচ্ছে। যা আয়ারল্যান্ডে খেলাটাকে জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রাখবে।’

‘আমি মনে করি আমাদের দল খুব দ্রুত উঠে আসছে। অল্প সময় আগেও তাদের বেশিরভাগ অ্যামেচার ছিল। তবে এখন তারা সবাই পেশাদার, তারা টেস্ট সহ সব ফরম্যাট খেলছে। আইরিশ ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অতো টাকা নেই, এটা আমাদের জন্য সীমাবদ্ধতার কারণ হতে পারে।’

‘আমি আশা করব বিশ্বকাপে যাবার। তবে তার আগে হয়তো জিম্বাবুয়েতে আমাদের কোয়ালিফাইং খেলতে হতে পারে। যদি না আমরা ইংল্যান্ডে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে না হারায়। ৩-০ তে জিতলে আমরা সরাসরি বিশ্বকাপে যাব। যদি আপনারা এটা প্রভাবিত করতে পারেন তাহলে আমি অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো (হাসি)।’

পেসার তাসকিন আহমেদ ও লিটন দাসের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অ্যাশলি বালবার্নি। সাকিবের প্রশংসা করতে ভুল করেননি,

‘আমি তাসকিন আহমেদের ওপর ইমপ্রেসড। আমি মনে করি সে দারুণ এক বোলার। এবং তোমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আছে। এর চেয়ে ভালো কি হতে পারে? আর লিটন দাস, খুবই এক্সাইটিং ক্রিকেটার।’

সুযোগ পেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানকে আয়ারল্যান্ড দলে পেতে চাইতেন অ্যাশলি বালবার্নি,

‘সাকিব আল হাসান (সুযোগ থাকলে আয়ারল্যান্ড দলে পেতে চাইতাম)। কারণ সে চারটি ভিন্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। দারুণ ক্রিকেটার। এছাড়া তামিম ইকবালকেও, যখন সে ভালো খেলে, খুব ভালো খেলে।’

রাকিবুল হাসান

Read Previous

সাকিবের বোলিংয়ে না আসা, তামিমের দায়িত্ব নেওয়া; ব্যাখ্যায় তাইজুল

Read Next

আইপিএলে দল পেলেন দাসুন শানাকা

Total
0
Share