

“হি ইজ এ সুপারস্টার অব বাংলাদেশ ক্রিকেট এন্ড হি হ্যাজ প্লেয়ড লাইক এ সুপারস্টার” -কমেন্টেটর নাসের হুসাইনের কণ্ঠে ভেসে আসছিল। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সবচেয়ে বেশি পরিচিত করেছেন যারা, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে একসাথে আনন্দ করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন তিনি দিনের পর দিন। সবাইকে গর্ব করে বলতে পারার সুযোগ করে দিয়েছেন, “এক নাম্বার অলরাউন্ডারটা আমার দেশের”। কোটি কোটি হৃদয়ে পেয়েছ যে ঠাঁই সেই সাকিব আল হাসান আজ ৩৬-এ পড়ছেন। কিংবদন্তি বেঁচে থাকুক আরও হাজার বছর।
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক অর্জনের নাম। রেকর্ড, র্যাংকিং, অলরাউন্ডার, নাম্বার ওয়ান, এগ্রেশন এইসব শব্দের সাথে সাকিব বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়েছেন। ভাগ্যিশ সাকিব জন্মেছিলেন এইদেশে, তাইতো বিশ্ব মানচিত্রে গর্ব করে চলতে পারি, বলতে পারি বাংলাদেশের নাম। সাকিবের নামটা থাকুক কোটি হৃদয়ে বিশ্বাস হয়ে, ভরসা হয়ে অথবা আদর্শ হয়ে! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সাকিব এক অসামান্য প্রাপ্তি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাকিব আল হাসান কোনো একটি অধ্যায় নয়, পুরো একটা মহাকাব্য। দ্য গ্রেটেস্ট অব বাংলাদেশ ক্রিকেট হিস্টোরি। দলের বিপর্যয়, স্কোরবোর্ডে রান দরকার? সাকিব আছে… প্রতিপক্ষের উইকেট পড়ছে না, পার্টনারশিপ বড় হয়ে যাচ্ছে? সাকিব আছে… প্রতিপক্ষকে আটকে দেওয়া দরকার কম রানেই, সাকিবই প্যাকড করে দেবে! এমন অদ্ভুত ক্যারেক্টারের খেলোয়াড় বাংলাদেশ হয়তো এরপর আর দেখবেও না, নিশ্চিতভাবেই। তাঁর অভিজ্ঞতা যে দলের কাছে কতটা অমূল্য, তা বোঝাই যায় সতীর্থদের মুগ্ধতায়।
একজন মানুষের পক্ষে প্রবলতম চাপে কতটা কুল থাকা সম্ভব! সাকিব এ ব্যাপারে অতিমানব! পাহাড় সমান চাপ নিয়েও হাসিমুখে খুনে মেজাজে পারফর্ম করে যাওয়ারাই বিশ্ব ক্রিকেটে তারকা থেকে মহাতারকা হয়েছেন যুগে যুগে। মাথার উপর সমালোচনার একরাশ ঝড় তুফান নিয়েও দিব্যি চলতে পারেন নিজের মত করে। কারণ তিনি যে সাকিব। বড়পর্দায় সাকিবের মতো একটানা সাফল্যে ঝুলি ভরেছে এমন নায়ক নেহাতই হাতে গোনা।
বহুবার তাকে ঘিরেই আমরা আশায় বুক বেঁধেছি, বুনেছি হাজার স্বপ্ন। কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত সাকিব জ্বলজ্বলে মহাতারকার মতোই।
২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে পয়তাল্লিশতম ওভারের পঞ্চম বল, অ্যাডাম মিলনের ১৩৯ কিলোমিটার পার আওয়ার এর বলটা যখন সাকিব উইকেটকিপারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করল তখন বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে।
সেসময় কমেন্টেটর নাসের হুসাইন এর কন্ঠে ভেসে আসছিল – “He is a SUPERSTAR of Bangladesh Cricket and he has played like a SUPERSTAR”
এরপর ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৩ নম্বরে নেমে অনবদ্য ব্যাটিং করেছিলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে কাটিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়। রেকর্ড সংখ্যক ৬০৬ রান করে মাতিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। ২ সেঞ্চুরি, ৫ ফিফটিতে সাকিবের গড় ছিল ঈর্ষণীয়- ৮৬.৫৭। বাঁ-হাতি স্পিনে নিয়েছেন ১১ উইকেট। দল সেমিফাইনালের পৌঁছাতে না পারলেও সাকিব ছিলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
সাকিবকে আমরা সেরা মানি। লেজেন্ড বলি। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটকে এইরকম কিছু উপহার না দিলে শুধু পরিসংখ্যান দেখে হয়ত লেজেন্ড বলতে সংকোচ করত। তাই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেই এইরকম একটা অবিশ্বাস্য পারফর্ম্যান্স দরকার ছিল। জানিনা কোন শব্দ জাস্টিফাই করবে ১৯ বিশ্বকাপের সাকিবকে।
জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ২০০৬ সালে অভিষেক। নিজের ঐতিহাসিক এই ম্যাচে পারফর্ম্যান্স খুব আহামড়ি কিছু ছিল না। এলটন চিগুম্বুরার উইকেট আর ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩০ রান। ২০২৩-এ এসে সাকিবের নামের পাশে ১৩,৭৩৪ রান, ৬৬৩ আন্তর্জাতিক উইকেট। ২০০৭ বিশ্বকাপের ঠিক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা ত্রিদেশীয় সিরিজে কানাডার বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন। এখন তিনি ১৪ সেঞ্চুরির মালিক। সাফল্যের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।
ছোটবেলায় ফুটবলার হতে চাইতেন। এখনও সময় পেলে নেমে পড়েন মাঠে। ভালোবাসেন লিওনেল মেসিকে। কখনো চাঁদে যাবার সুযোগ হলে মেসিকে নিয়ে যেতে চান সাকিব।
১৯৮৭ সালের আজকের এই দিনে (২৪শে মার্চ) মাগুরা জেলায় জন্ম নেন এই ক্রিকেটীয় বিস্ময়। লাল সবুজের জার্সি গায়ে দাপট দেখিয়েছেন পুরো বিশ্বে। সাকিবের জন্মটা শুভই হয়েছে কোটি বাঙ্গালি ক্রিকেট ভক্তের জন্য।
শুভ জন্মদিন আমাদের সাকিব আল হাসান।