

ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের শেষ বলে জয় কেড়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন। টিম সাউদি ও কেন উইলিয়ামসনদের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে আহমেদাবাদের ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচেও। কারণ লঙ্কানদের স্বপ্ন ভঙ্গের দিনে কপাল খুলেছে ভারতের, কিউইদের শেষ বলের জয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গী হয়েছেন রোহিত শর্মা ও ভিরাট কোহলিরা।
সোমবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের শেষ ম্যাচের শেষ দিনে অতটা গুরুত্ব বহন করেনি। চারদিন ব্যাটারদের রাজত্ব চলায়, শেষ দিনে যে ম্যাচের ফলাফল ড্র ছাড়া বই কিছু হবে না তা আগেই থেকেই জেনে গিয়েছিল সবাই। তবে টেস্ট ক্রিকেটে শেষ দিনের রোমাঞ্চ বলে একটা আছে, সেটা দেখার জন্যই হইতো চোখ পেতেছিলেন আহমেদাবাদ টেস্টে।
সেই রোমাঞ্চে ঘি ঢালতেই কিনা অজিরা ২ উইকেটে ১৭২ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে দিনের খেলা ১০ মিনিট বাকী থাকতে। ভারত অবশ্য সেই ফাঁদে পা দেয়নি, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং না করেই ড্র মেনে মাঠ ছাড়েন রোহিত শর্মা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা। কারণ ২ ম্যাচে জিতে ভারত সিরিজ জয় অর্ধেক নিশ্চিত করেছিল আগেই। তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয় পাওয়ায় শেষ ম্যাচে ভারত হারলে ২-২ সিরিজ টাই হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দাঁড়ায়। অজিদের সেই সুযোগ না দিতেই ভারত শেষ ম্যাচ খেলতে নাম পাকাপোক্ত ব্যাটিং পিচে।
ফলাফল ম্যাচের চারদিনেই ব্যাটাররা করেছেন রাজত্ব। উসমান খাজা (১৮০) ও ক্যামেরুন গ্রিনের (১১৪) জোড়া সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া তুলে ৪৮০। অজিদের দুই সেঞ্চুরির জবাবটা ভারত দিয়েছে শুবমান গিল (১২৮) ও ভিরাট কোহলির (১৮৬) দুর্দান্ত দুই সেঞ্চুরিতে ৫৭১ রান সংগ্রহ করে।
অজিরা দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমেও বাইশগজে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখে। ভারতীয় বোলারদের উইকেট না দেওয়ার পণেই আগান ট্রেভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেইন। দ্বিতীয় উইকেটে হেড-লাবুশেইন গড়েন ১৩৯ রানের জুটি, যেখানে বল খরচ করেন ২৯২টি।
দিনের শেষ দিকে এসে আক্সার পাটেলের বলে ধৈর্য্য হারা হন হেড। সরাসরি বোল্ড ফিরেন সাজঘরে, সেই পড়েন সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। ১৬৩ বলে ৯০ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটি খেলেন হেড, যাতে ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কার মার।
আর ২১৩ বল মোকাবেলা করে ৬৩ রানে অপরাজিতই থাকেন লাবুশেইন। তার সাথে ৫৯ বল খেলে ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ।
ভারতের হয়ে ২৪ ওভারে ৫৮ রানে ১ উইকেট নেন অশ্বিন। আর ১৯ ওভারে ৩৬ রানে উইকেট পান রবীন্দ্র জাদেজা।
ব্যাটারদের ম্যাচে বল হাতে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন ভারতের অশ্বিন। উসমান খাজা ও ক্যামেরুন গ্রিনের জোরালো সেঞ্চুরির দিনেও নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। গিল-ভিরাটের সেঞ্চুরির দিনেও বেশ সফল ছিলেন অজি দুই স্পিনার টড মার্ফি ও নাথান লায়ন। দুজনেই নিয়েছিলেন ৩টি করে উইকেট।
বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের শেষ ম্যাচ ড্র হওয়ায় ভারত সিরিজ জিতেছে ২-১।
ব্যাটারদের স্বর্গ রাজ্যে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ব্যাটারই। ১৮৬ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংসে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের ভিরাট কোহলি।
শেষ ম্যাচে ব্যাটারদের ব্যাটে আলো ছড়ালেও সিরিজ জুড়ে ছিল বোলারদের দাপট। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তাই ২৫ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
ভারতের স্পিন ট্র্যাকে ব্যাটিংয়ে বেশ সাবলীল ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজা। ভারতীয় স্পিনারদের দারুণ ভাবে সামলিয়ে ৭ ইনিংসে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে সাড়ে সাতচল্লিশ গড়ে ৩৩৩ রান করে খাজা হয়েছেন সিরিজের রান সংগ্রহে আছেন সবার শীর্ষে।