

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হেরে জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদ, সাকিবদের দারুণ বোলিংয়ে বড় স্কোর গড়তে পারেনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ১৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশের ৬ উইকেটের জয়।
ফিল্ডিংয়ে ক্যাচের হ্যাটট্রিক করা নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত। মারকুটে ব্যাটিংয়ে ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে দেন উড, আর্চারদের ব্যাটিং লাইন। শেষবেলায় সাকিব, আফিফের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় জয়।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের জন্য ১২০ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৫৭ রান। আট বছর পর বাংলাদেশ দলে ফেরা রনি তালুকদার প্রথম বলেই হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি। সঙ্গে লিটন দাসের ব্যাট থেকে স্ট্রোক্সের ফুলঝুরি। ৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৩২/০।
পরের ওভারে আদিল রশিদকে বোলিংয়ে এনেই ব্রেকথ্রু পায় ইংল্যান্ড। ব্যক্তিগত ২১ রানে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে যান রনি তালুকদার। এরপর লিটন দাসও উইকেটে টেকেননি বেশিক্ষণ। জফরা আর্চারকে মারতে যেয়ে বল আকাশে তুলে হয়েছেন ক্যাচ। ফেরার আগে ২ বাউন্ডারিতে ১০ বলে করেন ১২।
মার্ক উড বোলিংয়ে আসতেই টানা ৪ বলে ৪ বাউন্ডারি হাঁকান নাজমুল হোসেন শান্ত। তুলোধুনা হয়ে উড নিজের প্রথম ওভারে খরচ করেন মোট ১৭ রান। শান্ত’র শো চলতেই থাকে। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তৌহিদ হৃদয়। ২৮ বলে এই জুটির পঞ্চাশ পূর্ণ হয়। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯৮ রান। শেষ ১০ ওভারে দরকার কেবল ৫৯ রান, হাতে বাকি ৮ উইকেট।
২৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন শান্ত। মইন আলির পরের বলেই উইকেট হারান তৌহিদ হৃদয়। ১৭ বলে ২৪ রান জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচে। ফিফটি হাঁকানোর পর ইনিংস আর বড় করতে পারেননি শান্ত (৫১)। যেই উডকে তুলোধোনা করেছেন আগের ওভারে সেই উডের বলেই স্টাম্প ভাঙে। দলীয় ১১২ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেনের ধ্রুবর ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশ পেল ৬ উইকেটের বড় জয়। শেষবেলায় ৩৪ বলে আফিফ, সাকিবের ৪৬ রানের জুটি।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু অধিনায়কের সিদ্ধান্তে বড় কোনো চমক দেখাতে ব্যর্থ ওপেনিং বোলাররা। নাসুম আহমেদের করা পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে পরপর ক্যাচ তুলেও নতুন জীবন পেয়ে যান ফিল সল্ট ও জস বাটলার। শেষপর্যন্ত ৫১ রান তুলে শুরুর ৬ ওভার শেষ করে ইংল্যান্ড।
এই জুটি অবশ্য ভাঙে নাসুমের হাতেই। ব্যক্তিগত ৩৮ রানে থাকা সল্ট উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। দলীয় ৮০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে সফরকারীদের। তিনে নামা ডেভিড মালানকে ইনিংস বড় করতে দেননি সাকিব আল হাসান। ৪ রান করা মালান লং অনে ক্যাচ নিয়েছেন শান্ত।
তবে শুরু থেকেই দাপট দেখানো ইংলিশ ক্যাপ্টেন জস বাটলার ৩২ বলে হাঁকিয়েছেন ফিফটি। এরপর ভয়ংকর হয়ে উঠা বেন ডাকেটকে বিদায় করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১৩ বলে ২০ রানে ডাকেট যান সাজঘরে। পরের ওভারের শুরুর বলেই বিগ ফিশ জসের উইকেট তুলে নিলেন হাসান মাহমুদ। সমান ৪টি করে চার ও ছয়ে ৪২ বলে বাটলার সাজান ৬৭ রানের ইনিংস।
শেষদিকে মুস্তাফিজ আর হাসান মাহমুদ দারুণ সব ডেলিভারিতে বিপাকে ফেলেন মইন আলি ও স্যাম কারেনকে। ফিজ-হাসানের পেস আগুনে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েন দুই ইংলিশ অলরাউন্ডার। ১১ বল খেলে কারেন হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ তুলেন শান্তর হাতে। ক্যাচের হ্যাটট্রিক করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ইনিংসের শেষ ওভারের শুরুতেই ক্রিস ওকসের (১) স্টাম্প ভেঙে তাসকিন আহমেদ পান প্রথম উইকেট। শেষ ২৫ বলে ইংল্যান্ড স্কোরবোর্ডে জমা করে কেবল ২২ রান। আর তাতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ১৫৬/৬ (২০ ওভার) সল্ট ৩৮, বাটলার ৬৭, মালান ৪, ডাকেট ২০, কারেন ৬, মইন ৮*, ওকস ১, জর্ডান ৫*; হাসান ২/২৬, মুস্তাফিজ ১/৩৪, সাকিব ১/২৬, নাসুম ১/৩১, তাসকিন ১/৩৫
বাংলাদেশ: ১৫৮/৪ (১৮ ওভার) লিটন ১২, রনি ২১, শান্ত ৫১, হৃদয় ২৪, সাকিব ৩৪*, আফিফ ১৫*; আদিল ১/২৫, আর্চার ১/২৭, মইন ১/২৭, উড ১/২৪
ফলাফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।