

সাকিব আল হাসানের হাত ধরেই ঘরের মাঠে ইংলিশদের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওয়ানডে হেরে সিরিজ খুইয়ে ফেলা তামিম ইকবালের দল শেষ ওয়ানডেতে এসে পেল বড় জয়। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ৫০ রানের জয়। ব্যাট হাতে ৭৫ রানের ইনিংসের পর বোলিংয়ে সাকিব নেন ৪ উইকেট।
শান্ত-মুশফিকের জোড়া ফিফটি, এরপর সাকিব আল হাসানের একা হাতের দাপুটে লড়াই। সাকিবের সর্বোচ্চ ৭৫ রানের ইনিংসে ভর করে ২৪৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। এরপর সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণি আর এবাদতের পেস আগুনে পুড়ে ছাই ইংলিশ ব্যাটিং লাইন।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দারুণ শুরু পায় জেসন রয় ও ফিল সল্টের ওপেনিং জুটি। তবে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশকে এনে দেন ব্রেকথ্রু, ভাঙে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে ফেরত যান সল্ট। এবাদত হোসেনের বলে ডাক হয়েছেন তিনে নামা ডেভিড মালান।
পরের ওভারে এসেই সাকিব দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টাম্প ভাঙেন ১৯ রানে থাকা জেসন রয়ের। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি স্যাম কারেন। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৪৯ বল খেলে করেছেন ২৩ রান। অপরদিকে দারুণ খেলতে থাকা জেমস ভিন্সকেও বিদায় করেন সাকিব।
মইল আলি ফিরে যান দ্রুত। কেবল দুই রান করা মইনের স্টাম্প ভেঙে আইকনিক স্যালুট তুলেন এবাদত হোসেন। দলীয় ১৩০ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য শেষ ১৯ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১০০ রান, হাতে ৪ উইকেট।
দারুণ খেলছিলেন জস বাটলার। কিন্তু তাইজুল ইসলাম লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তুলে নেন ইংলিশ অধিনায়কের মূল্যবান উইকেট। ২৪ বল খেলে ২৬ রানে থামেন বাটলার। তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার ৮ রান করা আদিল রশিদ। ১৭৪ রানে ৮ নম্বর উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
এরপর সাকিব আল হাসান ফিরিয়ে দেন রেহান আহমেদকে (২)। পকেটে নেন নিজের ৪র্থ শিকার। রেহান আহমেদ ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিবের ৩০০ তম উইকেট। প্রথম বাংলাদেশি, সবমিলে ১৪ তম বোলার হিসাবে ৫০ ওভারি ক্রিকেটে ৩০০ বা তার বেশি উইকেট শিকার করেন সাকিব।
ক্রিস ওকসকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ হেরেই সিরিজ খুইয়েছে টাইগাররা। আজ শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলপতি তামিম ইকবাল। দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করে যাওয়া তাসকিন আহমেদকে বিশ্রামে রেখে আজ সেরা একাদশে এবাদত হোসেন।
ফের ব্যর্থ লিটন দাস। আজও ফিরেছেন ডাকের স্বাদ নিয়ে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই প্রথম লিটন পরপর দুই ম্যাচে আউট হয়েছেন শূন্যরানে। স্যাম কারেনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে ১৭ রান উঠতে দুই ওপেনারকেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ৬ বলে ১১ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
ধীরগতির হলেও নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগার শিবির। প্রথম পাওয়ার-প্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩৪ রান। মুশফিক, শান্ত শুরুর দিকে উইকেটে লড়াই করলেও সময়ের বদলে তারা বেরিয়েছেন খোলস ছেড়ে।
দলের বিপর্যয়ে ব্যাট করতে এসে ৬৯ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজে এটি শান্ত’র দ্বিতীয় অর্ধশতক। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছিলেন ৫৮ রানের ইনিংস। কিন্তু দুর্ভাগা শান্ত ব্যক্তিগত ৫৩ রানে পড়েছেন রান আউটের ফাঁদে। ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে গড়া ৯৮ রানের জুটি।
শান্ত বিদায় নেওয়ার এই ওভারেই ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিম। তবে ব্যক্তিগত ৭০ রানে থাকা মুশফিককে ফেরালেন আদিল রশিদ। এরপর ৮ রান করতেই একই বোলারের বিপক্ষে একই পরিণতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের।
আজও হেসেছে সাকিব আল হাসানের ব্যাট। ৫৫ বলে হাঁকিয়েছেন ফিফটি। ব্যাক টু ব্যাক ফিফটিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের ৫২তম ফিফটির দেখা পেলেন সাকিব। সাকিবকে সঙ্গ দিতে এসে ২৪ বল খেললেও ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি আফিফ হোসেন। আর তাতেই ভেঙে যায় ৪৯ রানের পার্টনারশিপ।
রেহান আহমেদ তার অভিষেক রাঙিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে। জফরা আর্চারের প্রথম সাফল্য, দ্রুতই ফিরে গেলেন তাইজুল ইসলাম। বিপরীতে সাকিব ফিফটি হাঁকানোর পর হয়েছেন আরও মারকুটে। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭৫ রানে সাকিবকে ফেরান আর্চার, দুর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নেন জেসন রয়।
পরবর্তী বলেই আর্চারের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন মুস্তাফিজুর রহমান, শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার, রিভিউ নিয়ে সফল হয় ইংলিশরা।
৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফল বোলার আর্চার। ২ টি করে শিকার স্যাম কারেন ও আদিল রশিদের। ১ টি করে উইকেট পকেটে পোরেন ক্রিস ওকস ও রেহান আহমেদ।