

ইংল্যান্ডের কাছে ২০১৬ সালে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারার পর টানা ৭ হোম সিরিজে জিতে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অনন্য এই রেকর্ড ভাঙে সেই ইংল্যান্ডই। এবার টানা দুই ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে জস বাটলারের দল। প্রথম ওয়ানডেতে ৩ উইকেটের পরাজয়ের পর আজ টাইগাররা হেরেছে ১৩২ রানে।
মিরপুর শের-ই-বাংলায় সিরিজে টিকে থাকার ব্যর্থ লড়াই করেছে সাকিব, তামিমরা। আর তাতেই সিরিজ জয়ের পথ খুঁজে নিয়েছে সফরকারী ইংল্যান্ড দল। জেসন রয়ের দাপুটে সেঞ্চুরির পর জস বাটলারের ৭৬; শেষদিকে মইন আলি, স্যাম কুরানের ঝড়ো ব্যাটিং। বাংলাদেশকে ৩২৭ রানের পাহাড়সম টার্গেট দেয় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের মাটিতে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড।
মিরপুর হোম অব ক্রিকেট আজ দুই ঐতিহাসিক রেকর্ডের সাক্ষী। ২০০ তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ গড়িয়েছে মিরপুর শের-ই-বাংলায়, সেই সাথে বাংলাদেশ দল খেলছে ১০০ তম ওয়ানডে ম্যাচ। কিন্তু তামিম ইকবালের দল এই ঐতিহাসিক দিনটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের ৫৮ রান ছাড়া কেউ খেলতে পারেননি বড় ইনিংস।
৩২৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ওপেনার লিটন দাস ও তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত’র গোল্ডেন ডাক। স্যাম কুরান ইনিংসের প্রথম ওভারে কেবল ১ রান খরচায় দখলে নেন দুই শিকার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে বিদায় করেন মুশফিকুর রহিমকে (৪)। স্কোরবোর্ডে ৯ রান উঠতেই বাংলাদেশের নেই তিন ব্যাটার।
এরপর সাকিব-তামিকের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগার শিবির। তামিম কিছুটা ধীরগতির হলেও সাকিব ছিলেন চেনা ছন্দে। তবে অধিনায়ক তামিমের বিদায়ে ভাঙে ৭৯ রানের জুটি। ৬৫ বল খেলে তামিম করেন ৩৫ রান, ৪ বাউন্ডারিতে।
ফিফটি হাঁকিয়ে সাকিব ক্রিজে থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। আদিল রশিদকে উড়িয়ে মারতে যেয়ে মিড অফেই হয়েছেন ক্যাচ। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৬৯ বলে ৫৮ রান। দারুণ খেলতে থাকা আফিফ হোসেনকে ফিরিয়ে দেন আদিল রশিদ। ব্যক্তিগত ২৩ রানে থেকে সাজঘরের পথে হাটা শুরু করেন আফিফ। দলীয় ১৬০ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ব্যক্তিগত ২৯ রানে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে নতুন জীবন পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে আদিল রশিদের এই ওভারেই মইন আলির হাতে স্লিপে ক্যাচ হন ৪৯ বলে ৩২ করা রিয়াদ। রশিদের চতুর্থ শিকার ৭ রানে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ। ২১ বলে ২১ করে রান-আউটে কাটা পড়েন তাসকিন আহমেদ। শেষপর্যন্ত ১৯৪ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ।
১৩২ রানের জয়ের সাথে সিরিজ জয় নিশ্চিত ইংল্যান্ডের। স্যাম কুরান ও আদিল রশিদের ৪ টি করে উইকেট।
এর আগে টসে জিতে আগে ইংল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের শুরুর দুই ওভারে ৫ করে মোট ১০ রান তুলেন দুই ইংলিশ ওপেনার। তবে এই জুটি ভাঙে দলীয় ২৫ রানে। গতির ঝড় তুলে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৫ বল খেলে ৭ রানের বেশি পাননি ফিল সল্ট।
আগের ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া জেসন রয় আজ শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। দারুণ সব স্ট্রোক্স খেলে ৫৪ বলে পূর্ণ করেন অর্ধশতক। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের ওপেনার হিসেব জেসন রয় এখন সর্বোচ্চ ফিফটির মালিক (৩৩)।
মেহেদী হাসান মিরাজ বল হাতেই এসেই ভাঙেন রয়-মালানের ৫৮ রানের জুটি। হার-না-মানা সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রথম ওয়ানডের জয়ের নায়ক এদিন প্যাভিলিয়নে ফেরেন ১৯ বল খেলে ব্যক্তিগত ১১ রানে। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জেমস ভিন্সও (৫)।
দাপট দেখিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নিজের ১২ তম সেঞ্চুরি হাঁকান জেসন রয়। এরপর হয়েছেন আরও মারমুখী। তবে সাকিবের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে রয় আউট হন ব্যক্তিগত ১৩২ রানে। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ১২৪ বলে ১৮ বাউন্ডারি ও ১ ছয়ে এই ইনিংস সাজান ওপেনার জেসন রয়।
পরের ওভারে উইল জ্যাকসের (১) উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। ৪১তম ওভারে সাকিবকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। মারকুটে বাটলার মিরাজকে পরপর দুই ছয় হাঁকিয়ে পরের বলেই বিদায় নেন। নিচু হয়ে আসা দ্রুতগতির শটে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মিরাজ।
শেষদিকে ৩৫ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে তাসকিনের তৃতীয় শিকার হন মইন আলি। স্যাম কুরান এরপর আদিল রশিদকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস শেষ করে আসেন। নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ৭ উইকেট খুইয়ে ৩২৬ রানের সংগ্রহ স্কোরবোর্ডে জমা করেছে ইংল্যান্ড। স্যাম কুরান ১৯ বলে খেলেন ৩৩ রানের ক্যামিও ইনিংস।
বল হাতে বাংলাদেশের সবাই ছিলেন রান খরুচে। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তাসকিন আহমেদের ঝুলিতে। মিরাজ শিকার করেছেন দু’টি। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম দখলে নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।