

বিপিএলে কোচিংয়ের শুরু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে, এবার সেই ভিক্টোরিন্সের কাছেই খুইয়েছেন শিরোপা। তাতে অবশ্য তেমন একটা আক্ষেপ নেই রাজিনের, দল রানারআপ হওয়াতেই খুশি কোচ, অধিনায়ক ও মালিকপক্ষ সবাই। সেটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ফাইনাল শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের পোস্টগুলোতে।
রাজিন সালেহ যখন বিপিএলে কোচিং প্যানেলে যুক্ত হন তখনও তিনি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের নিয়মিত খেলোয়াড়। বিপিএলের চতুর্থ আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচিং প্যানেলে যুক্ত হয়ে শুরু, এরপর রাজশাহী রয়্যালসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ হিসেবে শিরোপাও জিতেছেন রাজিন। এবার শুরু থেকেই ছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রধান কোচের দায়িত্বে, তাঁর অধীনেই স্ট্রাইকার্স খেলেছে ফাইনালে। সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হেরে দল হয়েছে রানারআপ।
২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার পর ক্রিকেট কোচিংই হয়েছে রাজিনের পেশা। ২০১৯ সালে সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট দল দিয়ে শুরু, সে বছর জাতীয় ক্রিকেট লিগে টায়ার-২ চ্যাম্পিয়ন হয়ে টায়ার-১ উঠে সিলেট। পরের বছর সিলেট আবার সেই জায়গা ধরে রাখে তাঁর কোচিংয়েই।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ২৪ টেস্ট ও ৪৩ ওয়ানডে খেলা রাজিন ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়কও। ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের দক্ষতায় জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচও হয়েছিলেন অতি দ্রুত।
এবার বিপিএল কাজ করার প্রস্তাবটা এলো, হুটহাট জানতে চাইলেন টাকা কত দিবে? যখন জানলেন প্রস্তাবটা পাঠিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, তখন আর টাকার কথা চিন্তা করলেন না। জানিয়ে দিলেন টাকা কত বলতে হবে না। যেহেতু মাশরাফি বলছে আমি কাজ করব। রাজিন সালেহ এভাবেই সিলেট স্ট্রাইকার্সে যুক্ত হলেন সহকারী কোচ হিসেবে।
সহকারী কোচ পেয়ে গেল স্ট্রাইকার্স, এবার প্রধান কোচ নিয়োগের পালা, সেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথম পছন্দ ওয়াসিম জাফর। যিনি আছেন বিসিবির অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে, সেখান থেকে ছুটতে পারেননি ওয়াসিম। ফলে স্ট্রাইকার্সকে ভিন্ন পথে হাটতে হয়, দেশীয় কোচে আস্থা রাখতে চাইল স্ট্রাইকার্স। ফ্র্যাঞ্চাইজির সবার সামনে মাশরাফি প্রস্তাব দিলেন রাজিন সালেহকে, সেখানেও থাকল ম্যানেজমেন্টের সম্মতি।
বেশ, সহকারী কোচ থেকে রাজিন সালেহ হয়ে গেলেন স্ট্রাইকার্সের প্রধান কোচ। দায়িত্ব নিতে রাজিনকে ভাবতে হয়নি একসময় সতীর্থ ও বর্তমান স্ট্রাইকার্স ম্যানেজার নাফিস ইকবালের উৎসাহ উদ্দীপনায়। যেটা রাজিন ফাইনাল শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে নাফিস ইকবালের নামটাও বিশেষভাবে উল্লেখ্য করেছেন নিজের ফেইসবুক পোস্টে।
এরপর রাজিন-মাশরাফির যুগলবন্দীতে স্ট্রাইকার্স ছুটল দুর্বার, সবার আগে পৌঁছে গেল প্লে অফে। ফাইনালে কুমিল্লার কাছে হেরে খুইয়েছে শিরোপা। তাতে অবশ্য মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি, দল রানারআপ হওয়াতেই খুশি সবাই।
বিপিএলের ফাইনাল শেষে রাজিন ফিরেছেন নিজ শহরে সিলেটে। সেখানে তাঁর সাথে কথা বলেছেন মোহাম্মদ আফজল। একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজিন শুনিয়েছেন স্ট্রাইকার্সের সাথে পথচলার গল্প, জানিয়েছেন কোচিং ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা এবং ভাগাভাগি করেছেন ভারতে রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতাও।
প্রশ্নঃ কিভাবে যুক্ত হলেন স্ট্রাইকার্সের সাথে?
রাজিন সালেহঃ প্রস্তাবটা আমাকে নাফিস ইকবাল দিয়েছিল, ‘রাজিন ভাই বিপিএলের একটা দল আপনাকে সহকারী কোচ হিসেবে নিতে চাচ্ছে?’ আমি তখন জানতাম না কোন দল বা কে প্রস্তাব টা পাঠিয়েছেন। তাই আমি প্রথমে পারিশ্রমিকের বিষয়টা নিয়ে আলাপ করি, যে কত টাকা দিবে। যখন মাশরাফির কথা বলছে যে, ম্যাশ প্রস্তাবটা পাঠিয়েছে। তখন আমি আর টাকা নিয়ে ভাবিনি, যেহেতু ম্যাশ প্রস্তাবটা পাঠিয়েছে আমি কাজ করব। পারিশ্রমিক নিয়ে ভাবতে হবে না। এভাবেই শুরু।
প্রশ্নঃ ছিলেন সহকারী কোচ, সেখান থেকে প্রধান কোচের দায়িত্ব পেলেন কিভাবে?
রাজিন সালেহঃ প্রধান কোচ হিসেবে তাদের পছন্দ ছিল ভারতের ওয়াসিম জাফর। যিনি বিসিবির অধীনে ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন। বিসিবির সাথে চুক্তি থাকায় ওয়াসিমকে তারা পায়নি। ফলে দেশী কোচ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে স্ট্রাইকার্স ম্যানেজমেন্ট। হোটেল সোনারগায়ে উদ্বোধনী একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেখানে টিম অফিসিয়ালদের সামনে ম্যাশ প্রধান কোচ হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করে, ম্যানেজমেন্টও প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করে। এরপর সারওয়ার ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয়, তিনিও উৎসাহ দেন দায়িত্ব নিতে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস দেন। আর নাফিস ইকবাল তো শুরু থেকেই, অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর থেকেই আমি প্রধান কোচ।
প্রশ্নঃ প্রধান কোচ হিসেবে নিলামের আগে আপনার তো একটা পরিকল্পনা ছিল দল সাজানো নিয়ে। অনেক পছন্দেরও খেলোয়াড় ছিল, সে অনুযায়ী দলটা কতটুকু সাজাতে পেরেছেন?
রাজিন সালেহঃ আসলে সবারও তো চাহিদা থাকে, কিছু কিছু পছন্দের ক্রিকেটারও থাকে। আমাদেরও ছিল, অনেককে নিতে পারেনি। মুশফিক আমাদের প্রথম পছন্দ ছিল, তাকে আমার পেয়ে যাই সহজে। এদিক থেকে খুশি। লটারি সাতবারের মধ্যে তিনবারই যদি ডাক আসে সাতে তাহলে অনেক তারকা প্লেয়ার এমনিতেই হাতছাড়া হয়ে যায়। এদিক থেকে আমরা একটু পিছিয়ে যাই। তারপরও পারফর্মারদের নিয়ে দল সাজাতে পেরেছি, তারকাবহুল না হলেও দেশের ক্রিকেটে সবাই নিয়মিত পারফর্মার। তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসানকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, ভারত সফরে ‘এ’ দলের সাথে আমি ছিলাম। হৃদয় কিভাবে খেলে, তার সামর্থ্য কেমন তা আমার জানা ছিল। সে হিসাবে আমি ম্যাশকে বলেছিলাম তাকে নেওয়ার জন্য। জাকির যখন সর্বশেষ ‘এ’ দলে ছিল তখন আমি দলের সাথে ছিলাম। সিলেট বিভাগীয় দলের একটা সময় কোচ ছিলাম, সে হিসাবে তাকে নিয়ে ভালভাবে জানাশোনা ছিল। যুব বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলী দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার, ঢাকা লিগে খুব কাছ থেকে দেখেছি তাকে। নাজমুল হোসেন শান্ত বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করে এসেছে, তাকে পাওয়াও দলের শক্তি অনেকগুন বাড়িয়েছে। সেও দুর্দান্ত খেলেছে, যতই তাকে নিয়ে সমালোচনা হোক না কেন। যতই ট্রল হোক না কেন, এ কথা স্বীকার করতে হবে সে ভাল একজন ব্যাটার। আর এখন সে ধারাবাহিকভাবে রান করছে। সব কিছু মিলিয়ে দলটা দারুণ ছিল।
প্রশ্নঃ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে লক্ষ্য ছিল, সে লক্ষ্যে কতটা সফল?
রাজিন সালেহঃ আমরা আশানুরূপ ফল পেয়েছি, লক্ষ্য ছিল প্রথমে প্লে অফ নিশ্চিত করা। এরপর ম্যাচ বাই ম্যাচ আগানো। সেখানে আমরা সফল, শেষ দুই ম্যাচের একটিতে জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে। সেখানে জিতলে সরাসরি ফাইনালে, নতুবা আরেকটা ম্যাচ খেলে ফাইনালে যেতে হবে। বাকীটা ভাগ্যের বিষয়। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায় দল হিসেবে পুরোপুরি সফল।
প্রশ্নঃ ২০০৪ সালে যখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হন, তখন দলে মাশরাফি বিন মর্তুজাও ছিলেন। আপনার নেতৃত্বে মাশরাফি বাংলাদেশ দলে খেলেছেন, এখন আপনি সিলেট স্ট্রাইকার্সের কোচ এবং মাশরাফি আপনার দলের অধিনায়ক। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
রাজিন সালেহঃ আসলে মাশরাফির সাথেও খেলেছি, মুশফিকের সাথেও টেস্ট ম্যাচে খেলেছি। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। এখন যদিও আমি ড্রেসিংরুমে প্রধান কোচ হিসেবে আছি, তবে নিজেকে প্রধান কোচ হিসেবে ভাবি না। ড্রেসিংরুমে নিজেকে একজন বড় ভাই হিসেবে দেখি, একজন অভিভাবক হিসেবে আছি। জাতীয় দলে খেলাকালীন সময়ে যেভাবে বড় ভাই হিসেবে গাইড করতাম, এখানেও তেমন গাইড করছি। মাশরাফি ও মুশফিক থাকায় আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে, ড্রেসিংরুম কিভাবে সামলাতে হয় সেটা আমার জানা আছে। তবে ড্রেসিংরুমে মাশরাফিকে পাওয়া বাড়তি অনুপ্রেরণা। জাতীয় দলে যেভাবে ছিলাম এখানেও তাই, শুধু পার্থক্য ভূমিকায়। সেখানে ছিল খেলোয়াড় আর এখানে প্রধান কোচ, এই পার্থক্য।
প্রশ্নঃ অনেক সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে মালিক পক্ষের দল গঠন এবং একাদশে সাজানোতে চাহিদা থাকে। অনেক হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। তাদের পছন্দ-অপছন্দ থাকে। এরকম কোনো কিছু এবার লক্ষ্য করলেন কিনা?
রাজিন সালেহঃ বিপিএলে আমি অনেকদিন ধরে কাজ করছি। এরকম ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক পাইনি। বিপিএলের অন্যতম সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি বলা যায় সিলেটের মালিক পক্ষকে। একজন মানুষ হিসেবে বলেন বা অফিসিয়াল হিসেবে, এক কথায় তারা অসাধারণ। তারা সব কিছু মাশরাফি এবং টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। দলগঠনেও তারা সন্তুষ্ট ছিলেন, দল নিয়ে যেকোনো কিছুতেই সর্বাত্মক সহযোগিতা আশ্বাস দেন। তাদের কোনো চাপাচাপি ছিল না, দলের রেজাল্টের জন্য তারা যেকোনো কিছু করতে রাজি ছিলেন। অনেক সময় এমনটা হয় যে ম্যাচের মাঝখানে অনেকে এসে মিটিং করে, বিভিন্ন সময় অনেক কথা বার্তা বলে। এক্ষেত্রে তারা সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম, সব সময় ড্রেসিংরুমের বাইরে ছিলেন। এটা একটা ইতিবাচক দিক, ফলে প্লেয়ারদের উপর কোনো চাপ ছিল না। চাপমুক্ত থেকে তারা স্বাধীনভাবে খেলতে পারছে।
প্রশ্নঃ সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিক পক্ষের বিপিএলে দল গড়ার গল্পটা জানেন কিনা? তাদের যাত্রাটা কিভাবে শুরু যদি একটু বলতেন?
রাজিন সালেহঃ সিলেট পর্বে সারওয়ার ভাইর (সারওয়ার চৌধুরী) সাথে কথা। আমি জানতে চেয়েছিলাম বিপিএলে দল নেওয়ার চিন্তাটা কিভাবে আসল। আমি আগে থেকে জানতাম তারা আমেরিকাতে ক্রিকেটের পিছনে প্রচুর টাকা খরচ করেন। তখন সারওয়ার ভাই বলেছিলেন, আমেরিকাতে তো অনেক টাকা খরচ, সেই টাকা দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে করলে তো দেশের ক্রিকেটে অনেক লাভবান হবে। সেই চিন্তা থেকে তারা চেয়েছিলেন ঢাকা লিগে কিংবা প্রথম বিভাগ/দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে একটা ক্লাব কিনতে। সে সূত্র ধরে মাশরাফির সাথে যোগাযোগ করেন সারওয়ার ভাই ও অন্যরা। ম্যাশের এক বন্ধু থাকেন আমেরিকায়, নাম শুভ্র। তার মাধ্যমে ম্যাশের সাথে যোগাযোগ। তাদের বাজেট শুনে ম্যাশ প্রস্তাব দিল যে, ‘বাজেটটা আরেকটু বাড়ালে বিপিএলে একটা দলের ব্যবস্থা করে দিতে পারব। প্রথমে বিপিএল দিয়ে শুরু করুন।’ আর এখান থেকেই শুরু, এরপর ম্যাশের হাত ধরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের যাত্রা শুরু।
প্রশ্নঃ দলের পারফরম্যান্সে তাঁরা কতটা সন্তুষ্ট ছিলেন?
রাজিন সালেহঃ আসলে তারা দলের পারফরম্যান্সে অনেক খুশি। কারণ দল ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছে, সেখানে হয়তো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তারপরেও তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা আমাদের সব সময় উৎসাহ জুগিয়েছেন। ম্যাচ হারলেও মেসেজ দিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন। এটাও বলেছেন, ‘খেলার হারজিত থাকবে, এবার হয়নি পরের হবে।’
প্রশ্নঃ অনেক সময় দেখা যায়, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকপক্ষের অনেক চাহিদা থাকে। একাদশে কে খেলবে না খেলবে, ড্রেসিংরুমেও তাদের সম্পৃক্ততা থাকে। তারা তাদের মতো করে একাদশ খেলাতে চান। এরকম কোনো কিছু এবার ছিল কিনা?
রাজিন সালেহঃ বিপিএললে আমি অনেক দিন ধরে কাজ করছি। আমার কাছে মনে হয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি অন্যতম সেরা একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি। একজন মানুষ হিসেবে বলেন বা অফিসিয়াল হিসেবে বলেন, তাঁরা ছিলেন অসাধারণ। দলে তাঁদের কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছিল না, তাঁরা সব কিছু মাশরাফির উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা যেভাবে দল সাজিয়েছি, তাতে তাঁরা খুশি ছিলেন। আমরা যেভাবে বলব সেভাবেই তাঁরা কাজ করতে রাজি ছিলেন। তাঁরা আমাদেরকে কোনো ধরনের চাপাচাপি করেননি। অনেক সময় আছে খেলার মাঝে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক পক্ষ অনেক কথা বলে, আলাপ আলোচনা করে। ড্রেসিংরুমের অনেক বিষয়েও নাক গলায়। তাঁরা সম্পূর্ণ এসবের বাইরে ছিলেন। আমাদের যা চাহিদা ছিল তা দিতে তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন। এর বাইরে কোনো কিছুতে তাঁরা যুক্ত হননি। ফলে খেলোয়াড়দের কোনো চাপ ছিল না, স্বাধীনভাবে খেলতে পেরেছে। যা দলের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক ছিল।
প্রশ্নঃ ফাইনালে ষষ্ঠ বোলারের ঘাটতি ছিল কি না, বাড়তি বোলার থাকলে কিন্তু ফলাফল ভিন্ন হতে পারত?
রাজিন সালেহঃ আসলে আমাদের ষষ্ঠ বোলার ছিল থিসারা পেরেরা। দুর্ভাগ্যবশত তাকে মাঠে পুরোপুরি ব্যবহার করা যায়নি। রুবেল শুরুতে দুর্দান্ত বোলিং করেছে, শেষ ওভারে এসে সব উলটপালট হয়ে গেছে। সাকিবও (তানজিম হাসান) এর আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু ফাইনালে ছিল তার বিপরীত চিত্র, হয়তো বড় ম্যাচের চাপ নিতে পারেনি। অভিজ্ঞতার একটা ব্যাপার আছে। সেটা হয়তো ভুগিয়েছে। মাশরাফি বল করতে পারলে ফলাফল ভিন্ন কিছু হতো। তবে রানটা আরো বেশি হতে পারত, যেমনটা সালাউদ্দিন ভাই বলেছিলেন।
প্রশ্নঃ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার চোঁট দলে কতটা প্রভাব পড়েছিল?
রাজিন সালেহঃ অবশ্যই বড় একটা প্রভাব পড়েছিল। দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফিরেও সে বল হাতে দারুণ ছন্দে ছিল। চোঁট পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিল। তার দুই/তিনটা ওভার কিন্তু ম্যাচের চিত্র পালটে দেওয়ার মতো ছিল। আর সেটা চোঁট পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রমাণও করেছে মাঠে। সেমিফাইনালেও সে ৩ ওভার বোলিং করে সিলেটকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল। চোঁটের কারণে যা পাইনি। তাঁর ২/৩ ওভার মিস করেছি সব সময়।
প্রশ্নঃ আপনারা তো জানতেন যে দল প্লে অফে গেলে মোহাম্মদ আমির এবং ইমাদ ওয়াসিমকে পাবেন না। তাঁদের বিকল্প আগে থেকে ঠিক করে রাখেননি কেন?
রাজিন সালেহঃ আসলে বিপিএল চলাকালীন সময়ে আরো ২টি টি২০ লিগ চলছিল। দুবাই এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত দুই লিগে অনেক প্লেয়ার ব্যস্ত ছিল তখন। তাই প্রথমে আমরা মোহাম্মদ ইরফানকে দিয়ে আমিরের জায়গাটা পূরণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে খুব একটা সফল না হওয়াতে ইসুরু উদানাকে নিয়ে আসি। শেষ দিকে লুক উডকে আনতে হয়েছে। ইমাদের জায়গাটা পূরণ করা ছিল কঠিন, শেষ দিকে লিন্ডেকে উড়িয়ে আনা হয়। সে দুবাই লিগে ভাল খেলছিল। এখানেও সে সফল হয়েছে। তারপরেও এক ম্যাচের জন্য আমির এবং ইমাদকে আনতে হয়েছিল। ফাইনালে ইমাদের চার ওভার এবং ডেথে আমিরের দুই ওভার খুব মিস করেছি।
প্রশ্নঃ আপনারা চাইলে নিলাম থেকে দেশী ভাল বাহাতি স্পিনার নিতে পারতেন, তানভীর ইসলাম ছিল, নিহাদউজ্জামান খুব ভাল করেছে এবার। এ দুজনের কাউকে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল কিনা?
রাজিন সালেহঃ সত্যি কথা বলতে কি, নিহাদ আমার পছন্দের তালিকায় ছিল না। তবে তানভীরকে নিতে পারতাম। সেটা হয়নি, কারণ লটারিতে বেশ কয়েকবার আমাদের ডাকটা সাত নাম্বারে আসে। সেখানে কুমিল্লা এগিয়ে ছিল, তাই তারা তানভীরকে আগেই নেয়।
প্রশ্নঃ এবার বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের কোচিং প্যানেলে সবাই ছিলেন দেশী কোচ। দলের সব বিভাগেই ছিলেন দেশের কোচরা। স্ট্রাইকার্সের এই দুর্দান্ত খেলার পেছনে দেশীয় কোচ কারণ কিনা?
রাজিন সালেহঃ আসলে সবাই প্রধান কোচের ভূমিকায় ছিল, শুধু আমি একা প্রধান কোচ ছিলাম না। কেউ বোলিংয়ে প্রধান ছিলেন, কেউ ব্যাটিংয়ে কেউ আবার ফিল্ডিংয়ে। সবাই সবার জায়গায় প্রধান ছিলেন। সবাই সবার কাজ করেছে ঠিকঠাক মতো, প্রতিটি বিভাগেই তাঁরা দারুণ ভাবে কাজ করেছে। আমি সবাইকে সবার কাজ ভাব করে দিয়েছিলাম। কেউ কারো কাছে দায়বদ্ধ ছিল না। একসাথে এতজন দেশীয় কোচ কাজ করা দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় অর্জন বলা যায়। আমাদের কোচিং স্টাফটা খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছিল। সৈয়দ রাসেল, তুষার ইমরানদের বিসিবি কাজে লাগালে দেশের ক্রিকেট দারুণ ফল পাবে।
কোচের বাইরে কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবদান আমাদের ম্যানেজার নাফিস ইকবালের। সে দীর্ঘদিন ধরে বিপিএলে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে, খুলনা টাইটান্সে অনেকদিন ম্যানেজার হিসেবে ছিল। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেও সে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছে। তার সেই সব অভিজ্ঞতা সে এখানে শেয়ার করেছে। যা স্ট্রাইকার্সকে অনেক সাহায্য করেছে। আমরা সবাই একসাথে মিলে কাজ করেছি বিধায় দল এতোদূর যেতে পেরেছে। কোচিং স্টাফ, ম্যানেজার, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকপক্ষ সবাই ছিলেন দুর্দান্ত। তাই খেলোয়াড়রাও মাঠে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে।
প্রশ্নঃ এবার সিলেটে দেশী কোচের পাশাপাশি মালিকানায় যারা ছিলেন সবাই ছিলেন সিলেটি। স্ট্রাইকার্স দুর্দান্ত খেলার পিছনে দেশী কোচের পাশাপাশি সিলেটি মালিকানা বড় ভূমিকা পালন করল কিনা?
রাজিন সালেহঃ অবশ্য এটা বড় একটা ভূমিকা পালন করেছে। দেশীয় কোচ থাকায় আমাদের যোগাযোগের ভাষাটা ছিল খুব সহজ। আমরা একে অন্যকে খুব সহজে বুঝতে পারতাম। আমাদের মনের ভাব মন খোলে প্রকাশ করতে পারতাম। মালিকপক্ষও সিলেটি হওয়ায় নিজ শহরের প্রতি তাঁদের আলাদা একটা টান কাজ করত। অন্য রকম ভালা লাগা কাজ করত সবার মাঝে। ভাষাগত মিল থাকায় কাজটা সহজ হয়েছে।
প্রশ্নঃ আপনি তো জাতীয় দলের হয়ে কাজ করেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন নিয়মিত আছেন কোচের ভূমিকায় আছেন। অনেক সময় শুনা যায় ভাষাগত ভিন্নতার কারণে বিদেশি কোচের সাথে যোগাযোগ ক্ষেত্রে দেশী ক্রিকেটারদের বিঘ্নতা ঘটে। কোচের ভাষা খেলোয়াড় ঠিকঠাক মতো বুঝতে পারেন না, আবার খেলোয়াড়ের কথাও কোচ বুঝেন না। এমনটা বিপিএল একবার হয়েছিল, আপনি কখনো এটা লক্ষ্য করেছেন কিনা?
রাজিন সালেহঃ আসলে এটা ভুল ধারণা। আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা এখন ক্রিকেটের ভাষা বুঝে। কোচ যেকোনো ভাষার হোক না এটা কোনো সমস্যা না, কারণ ক্রিকেটের ভাষা এক। আমাদের ক্রিকেটাররা এখন ইংরেজি ভাষা যথেষ্ট জানে এবং বুঝে। দেশি কোচ থাকলে সুবিধা হচ্ছে, খুব সহজেই তাঁদের কাছে ভেড়া যায়, সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। নিজ দেশের কেউ থাকলে তার সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সবাই। খুব সহজেই তারা কোচের সাথে মিশতে পারে, যেকোনো কিছু শেয়ার করতে পারে কোনো রকম সংকোচ ছাড়া।
প্রশ্নঃ সিলেট স্ট্রাইকার্স কোচিং প্যানেলে মৌলভীবাজার জেলা দলের কোচ মো. রাসেল আহমেদ ছিলেন। উনার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
রাজিন সালেহঃ রাসেল এখনো শেখার মধ্যে আছে। সে এখান থেকে শিখছে। বিপিএলে একটা দলে কিভাবে কাজ করতে সেটা সে খুব কাছ থেকে দেখছে এবং দলের সাথে কাজ করার মাধ্যমে সে অনেক কিছু শিখছে। যা তার ভবিষ্যতে কোচিং ক্যারিয়ারে কাজে দিবে।
প্রশ্নঃ বিপিএলের মান নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। আয়োজনেও অনেক ঘাটতি দেখা যায়। আপনার চোখে এমন কিছু কি পড়েছে, যেটা পরিবর্তন করা দরকার বলে মনে করে?
রাজিন সালেহঃ যেকোনো টুর্নামেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়, বিপিএল তার উর্ধ্বে নয়। তবে মান এতোটা খারাপ না যে পেলে দেওয়ার মতো। এবার যেটা হয়েছে শুরু থেকে ডিআরএস ছিল না, এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অনেক আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছে। শুরু থেকেই ডিআরএস থাকলে আউট নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকত না। শুরু থেকে ডিআরএস এর ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। আর বিপিএল যেন নির্দিষ্ট একটা ক্যালেন্ডারে হয়, তাহলে ভাল মানের বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়া যাবে। এবার একসাথে তিনটা টি২০ টুর্নামেন্ট ছিল। আবার বিপিএল শেষ না হতেই পিএসএল শুরু হয়, ফলে পাকিস্তানি যারা এসেছিল তাদের টুর্নামেন্ট শেষ না করেই চলে যেতে হয়েছে। এদিকটা খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ৪৩টি ওয়ানডে ও ২৪টি টেস্ট, যেখানে ওয়ানডেতে অধিনায়কও ছিলেন একবার। তবে টি২০ খেলা হয়নি, এমনকি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০তেও না। তারপর কোচ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে বিপিএলে আপনার একটি শিরোপা আছে। আসলে টি২০ ক্রিকেটের কোচিংটা কিভাবে রপ্ত করেছেন?
রাজিন সালেহঃ টি২০ ক্রিকেট না খেললেও খেলাটা খুব বেশি দেখেছি। টেস্ট ক্রিকেট লম্বা সময়ের খেলা, অবসরে যাওয়ার পর তা দেখা না হলেও টি২০ দেখতাম। টি২০ বুঝার জন্য অনেক পড়াশোনা করেছি। দেখে বুঝার চেষ্টা করতাম কি পরিকল্পনা নিয়ে দলগুলো খেলছে। কিভাবে দল পরিচালনা করছে, কঠিন সময়ে কিভাবে দল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর আগে যখন বিপিএল কাজ করেছি বিভিন্ন কোচের সাথে, দেশি বিদেশি অনেক কোচের সাথে কাজ করেছি। তাঁদের সাথে কাজ করার সুবাদে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা কাজে লাগিয়েছি। সবার কাছ থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতাম। নিজে যেহেতু ক্রিকেট খেলেছি, ক্রিকেটটা তো বুঝি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে খেলোয়াড়দের জন্য যেটা সহজ হবে সেটা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। সেভাবে দল পরিচালনা করার চেষ্টা করতাম। আমার মনে হয়েছে ক্রিকেটাররা সেটা পুরোপুরি মাঠে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
প্রশ্নঃ আপনি তো রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে বাংলাদেশ লিজেন্ডসের পক্ষে খেলেছিলেন৷ সেখানে যাঁদের সাথে খেলেছেন তাঁদের অনেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কোচিংয়ের সাথে জড়িত। খেলার ফাঁকে তাঁদের কারো সাথে কোচিং নিয়ে কোনো আলোচনা না হয়েছিল কিনা?
রাজিন সালেহঃ আসলে সেখানে শুধু খেলার মধ্যেই ছিলাম। খেলার ফাঁকে কোচিং নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। শচীন টেন্ডুলকারের সাথে দেখা হয়েছে, ছবিও তুলেছি। ভারতীয় ক্রিকেটার যাঁদের সাথে দেখা হয়েছে, ভারতের ক্রিকেট উন্নয়নের খোঁজ খবর নিয়েছি। বিশ্ব ক্রিকেটে এখন তাঁরা কিভাবে এতোটা দাপট দেখাচ্ছে? তাঁদের গেম ডেভলপমেন্ট কিভাবে কাজ করে সেটা জানার চেষ্টা করেছি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কোচিং আলোচনা হয়নি কারো সাথে।
প্রশ্নঃ আসলে এই টুর্নামেন্ট টি২০ বুঝতে কতটা সাহায্য করেছে, যেহেতু নিজে সরাসরি খেলোয়াড়ের ভূমিকায় ছিলেন?
রাজিন সালেহঃ আসলে টি২০ ক্রিকেটটা বুঝেছি বিপিএলে কাজ করার মাধ্যমে। বিপিএলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোচের সাথে কাজ করেছি। কে কিভাবে ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় সেটা মাথায় রাখতাম। পরে সেটা ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। আমি সব সময় নোট করতাম। সারওয়ার ইমরান স্যারের সাথে একবার কাজ করেছিলাম, সেসময় স্যার আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, স্যারের সাথে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। যা টি২০ ক্রিকেটে কোচিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করছে। রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলার আগেও তো আমি বিপিএলে কোচিং করিয়েছি। রাজশাহী রয়্যালসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ হিসেবে শিরোপাও আছে। সেসময় রাজশাহী রয়্যালসের প্রধান কোচ ছিলেন ওয়াইস শাহ, তিন ম্যাচ বাকী থাকতেই চলে যাওয়ায় ফাইনাল সহ তিন ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ পাই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা অবস্থাতেও আমি বিপিএলে কাজ করার সুযোগ পাই। বিপিএলের চতুর্থ আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে আমার যাত্রা শুরু।
প্রশ্নঃ ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ হবেন, তা নিয়ে একবার আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন। এর বছর দুইয়েকের ব্যবধানে জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচও হয়েছিলেন। তবে সেটা এক সিরিজ সীমাবদ্ধ ছিল। এখন কোচিং ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রাজিন সালেহঃ সব সময় স্বপ্ন দেখি বড় জায়গায় কাজ করার। সেটা জাতীয় দল হলে তো অনেক ভাল। বিসিবি আমাকে একবার সুযোগও দিয়েছে, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে এক সিরিজে সব কিছু বাস্তবায়ন করা যায় না। সেটা শুধু আমি না, বিশ্বের যেকোনো কোচই, এক সিরিজে সব পালটে দিতে পারবেন না। কোচ দেশি হোক কিংবা বিদেশি যেকোনো কোচকেই অন্তত বছর দেড়েক সময় দিতে হবে। তাহলে একজন কোচ সেরাটা দিতে পারবে। প্লেয়ারদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারবে। আমাকে যদি লম্বা সময়ের জন্য বিবেচনা করা হয় তাহলে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব বাংলাদেশকে ভাল কিছু দেওয়ার। তাহলে নিজের পরিকল্পনা ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারব।
প্রশ্নঃ অনেক সময় তো আইসিসির সহযোগী দেশগুলোতে কাজ করার প্রস্তাব আসে। বিদেশে কোনো দলের কোচ হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি না?
রাজিন সালেহঃ আসলে এখনো এরকম কোনো প্রস্তাব পাইনি। প্রস্তাব পেলেও যাব না। দেশে কাজ করতে চাই৷ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছি, দেশের ঘরোয়াও ক্রিকেটেও নিয়মিত খেলতাম। সে হিসেবে দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিটা আমার জানা। এখানে কাজ করাটা সহজ হবে। বিসিবিও আমাকে যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে, অল্প সময়ের ভিতরে জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচেরও দায়িত্ব পেয়েছিলাম। ‘এ’ দল এবং বাংলা টাইগার্স দলেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। এখানে কাজ করলে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে অবদান রাখা যাবে। আমার কাছে দেশের ক্রিকেট আগে। আপাতত দেশের ক্রিকেট নিয়েই ভাবছি।
প্রশ্নঃ এবার তো সহকারী কোচ হওয়ার সুযোগ আছে, বিদেশিদের পাশাপাশি দেশি কোচদেরও আবেদনের সুযোগ আছে। সহকারী কোচ হওয়ার আবেদন করবেন কিনা?
রাজিন সালেহঃ বিসিবি আমাকে একবার জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব দিয়েছিল। তখন তো আবেদন করা লাগেনি। তাঁরা তখন আমাকে যোগ্য মনে করেছিল বলেই ফিল্ডিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এবারও যদি সহকারী কোচ হিসেবে যোগ্য মনে করেন তাহলে দায়িত্ব দিবেন। এখানে আবেদন করতে হবে কেন। আমার কাছে মনে হয়, আমি যোগ্য হলে এমনিতেই ডাক পাব। আবেদন করতে হবে না।