

লো-স্কোরিং প্রথম ম্যাচের পর সিলেটে দেখা গেল রান উৎসব। ছোট ছোট ইনিংসে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স পায় ১৬৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। কিন্তু এনামুল হক বিজয়ের তান্ডবের সামনে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের বোলিং লাইন। এরপর ২৪ বছর বয়সী নিহাদুজ্জামানের স্পিন বিষে নীল সাকিব, রিয়াদ, ইফতিখার। প্রায় হেরতে যাওয়া ম্যাচে বরিশালকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিলেন করিম জানাত। ৪ বল বাকি থাকতে বরিশাল পেল ৩ উইকেটের জয়।
নিহাদুজ্জামানের আলো ছড়ানোর দিনে সিলেটে সেজেছে বিপিএলের ঝলকানিতে। নিহাদুজ্জামান অ্যাকশনে আসতেই চুরমার হয়ে যায় বরিশালের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন। সাকিব ও ইফতিখারকে করেছেন বোল্ড, রিয়াদ-চতুরঙ্গকে ফেলেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। কিন্তু করিম জানাত, সালমানকে নিয়ে বরিশালকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
করিম জানাতের ক্যামিওতে শেষ ৬ বলে বরিশালের দরকার হয় কেবল ২ রান। মেহেদী হাসান রানার করা ওভারের প্রথম বলে উইকেট হারান ১২ বলে ৩১ করা জানাত। ওয়াসিম জুনিয়র বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।
বিপিএলের সিলেট পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ফরচুন বরিশালের দলপতি সাকিব আল হাসানের আমন্ত্রণে আগে ব্যাট করতে নামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ম্যাক্স’ও ডাউড ও আফিফ হোসেনের লড়াইয়ের পর শেষদিকে কার্টিস ক্যাম্ফারের ক্যামিও; ৬ উইকেট হারিয়ে তারা স্কোরবোর্ডে জমা করে ১৬৮ রান।
আসরের প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ চ্যালেঞ্জার্সের ওপেনার মেহেদী মারুফ। ৫ রানে থাকা মারুফ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিমের হাতেই তুলেছেন ফিরতি ক্যাচ। রানখরায় ভুগছেন ভারতীয় ব্যাটার উন্মুক্ত চাঁদও। খালেদ আহমেদের শিকার হওয়ার আগে ৩ চারে ১৩ বলে করেন ১৬। প্রথম পাওয়ার-প্লেতে ৪৩ রানে চট্টগ্রাম হারায় দুই উইকেট।
এরপর আফিফ হোসেনকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন টিকে থাকা ওপেনার ম্যাক্স’ও ডাউড। তবে খালেদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৩৩ রান আসে ম্যাক্স’ওর ব্যাট থেকে। দ্রুতই বিদায় নেন অধিনায়ক শুভাগত হোম। ৫ বল খেললেও বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে করেন ২।
এরমাঝেই দারুণ সব স্ট্রোক্স খেলে দলের সংগ্রহ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। তবে আফিফও ছুঁতে পারেননি পঞ্চাশের ঘর। কামরুল ইসলাম রাব্বির করা ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম তিন বল থেকে তুলে নেন দশ রান। চতুর্থ বলে বাউন্স সামলাতে না পেরে সার্কেলের মধ্যেই হয়েছেন ক্যাচ। আফিফের ৩৭ রানের ইনিংসটি সাজানো ২৩ বলে; ৩ চার ও ২ ছক্কায়।
আফিফের বিদায়ের পর উইকেটে এসেই তান্ডব চালান আইরিশ অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার। বিপিএলের অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখেন চার, ছক্কায় সিলেটের গ্যালারি মাতিয়ে। ক্যাম্ফারের দাপুটে ব্যাটিংয়ের কল্যাণে চট্টগ্রাম শেষ ৪ ওভারে পায় মোট ৫৭ রান। তবে ক্যাম্ফারকে সঙ্গ দেওয়া ইরফান শুক্কুর রান আউটে কাটা পড়েন ইনিংসের শেষ বলে। ২৫ বলে ৪৫ রানের হার-না-মানা ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরত আসেন ক্যাম্ফার।
১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে এনামুল হক বিজয় ও সাইফ হাসানের ব্যাট থেকে চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ঝড়েছে। ফরচুন বরিশালের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৮ রান। মেহেদী হাসান রানার স্লোয়ার ডেলিভারিতে সাইফ ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১০ রানে।
কার্টিস ক্যাম্ফারকে তুলোধোনা করে মাত্র ২৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন বিজয়। ক্যাম্ফার নিজের প্রথম ওভারে ১৯ রান খরচ করলে পাওয়ার-প্লের শেষে বরিশালের স্কোরবোর্ডে ৬৭/১। পঞ্চাশ রান করতেই বিজয় হাঁকান ৫ ছক্কা ও ৪ চার। বল হাতে উইকেটশূন্য থাকা সাকিব ব্যাট হাতেও নিষ্প্রভ। মাত্র ২ রান করতেই নিহাদুজ্জামানের দারুণ এক ডেলিভারিতে হয়েছেন বোল্ড।
সাকিবকে আউট করেই ক্ষান্ত হননি নিহাদুজ্জামান। ওয়াইড দিয়ে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। শূন্য বলে শূন্যহাতে রিয়াদ ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। নিহাদুজ্জামানের তৃতীয় শিকার চতুরঙ্গ ডি সিলভা (৩)। এরপর বিজয় ও ইফতিখারের ব্যাটে কিছুটা স্বস্তি পায় বরিশাল।
প্রথম দুই ওভারে কেবল চার রান খরচ করা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে স্টাম্প ভেঙ্গে দেন দারুণ খেলতে থাকা এনামুল বিজয়ের। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৫০ বলে ৭৮ রান করেন এই ওপেনার।