

দিনে নাসিম শাহের আগুন ঝরা বোলিংয়ে ২৫৫ রানে থামে নিউজিল্যান্ড। নাসিম শাহ গতির ঝড়ের সাথে নিখুঁত লাইন-লেংথে নিউজিল্যান্ডের শেষ চার ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন মাত্র ৪০ রানের ব্যবধানে।
ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে শুরুতে শুভসূচনা করেন নাসিম। ডেথ ওভারে বোলিংয়ে ফিলিপস ও ব্রেসওয়েলের ৬৬ রানের দারুণ এক জুটি থামিয়ে নিউজিল্যান্ডের রানের গতি আটকে দেন নাসিম। সেই সাথে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পেয়েছেন ৫ উইকেটের দেখা। নাসিমের গড়ে দেওয়া ভিতে ফখর জামান (৫৬), বাবর আজম (৬৬) এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান (৭৭*) তিন ফিফটিতে পাকিস্তান ২৫২ রানের লক্ষ্য টপকে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে।
করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৩০ রান তুলে পাকিস্তান। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ইমাম উল হককে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম উইকেট এনে দেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। ইমামের দ্রুত সাজঘরে ফেরাটা পাকিস্তানের রান তাড়ায় তেমন প্রভাব ফেলেনি, কারণ দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার ফখর জামান ও অধিনায়ক বাবর আজম মিলে ৭৮ রানের জুটি গড়লে জয়ের পথেই হাটে পাকিস্তান।
৭৮ রানের জুটি গড়ার পথে ফখর-বাবর, দুজনেই করেন ফিফটি। উইকেটে দুজনেই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে থাকেন। টার্গেট তেমন বড় না হওয়ায় ধীরগতিতে রান তুলেন ফখর-বাবর। ৭৮ রানের সেই জুটি গড়তে বল খেলেন ১০৩টি। ইনিংসের ২৩তম ওভারে ফখরকে ৫৬ রানে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন ব্রেসওয়েল। ফখর ৭৪ বলে ৭ বাউন্ডারিতে সাজান তার ৫৬ রানের ইনিংসটি।
ফখরকে ফিরিয়েও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ ছিল না নিউজিল্যান্ডের। ফখর-বাবর জুটির রেশ কাটতে না কাটতে জমে উঠে বাবর-রিজওয়ানের হার না মানা আরেক জুটি। তৃতীয় উইকেটে বাবর-রিজওয়ানের সেই জুটি ৮২ বলে যোগ করে ৬০ রান। ব্যক্তিগত ৬৬ রানে গ্লেন ফিলিপসের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে সেই জুটি।
বাবরের বিদায়ের পর কিউই বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসে রিজওয়ান-হারিস জুটি। সেই জুটি রানের চাকা সচল করতে হাত খুলে খেলতে থাকে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের গতি বাড়াতে সিঙ্গেলস-ডাবলসের পাশাপাশি চার-ছক্কার দিকেও মনোযোগী হন দুজনে। ফলে চতুর্থ উইকেটে হারিস-রিজুওয়ান মিলে মাত্র ৩৭ বলে গড়ে তুলেন ৫০ রানের জুটি। দলীয় ২৩২ রানে হারিস সোহেল (৩২) সাজঘরে ফিরলে, সেই জুটি থামে ৬৪ রানে।
বাবর এবং হারিসের দুটি অর্ধশত রানের জুটি গড়া রিজওয়ান জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন ৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। ৮২ বলে ৬ বাউন্ডারি এবং ১ ছক্কায় রিজওয়ানের ৭৭ রানের ইনিংসে পাকিস্তান ২৫৬ রানের লক্ষ্য টপকে যায় ৪ উইকেট হারিয়ে। ফলে ১১ বল বাকী থাকতে ৬ উইকেটের জয় নিয়ে সিরিজে ১-০ এগিয়ে যায় পাকিস্তান।
এর আগে করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাট করে সফরকারী নিউজিল্যান্ড নাসিম শাহের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ২৫৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ম্যাচের শুরুতে ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে নাসিমের শুরু, আর শেষ ওভারে মিচেল সান্টনারকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ফাইফারের দেখা পান নাসিম।
প্রথম ওভারে ১ রানে কনওয়েকে হারানোর পর ফিন অ্যালেন এবং কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে ৩৬ ছোট এক জুটি পায় নিউজিল্যান্ড। উইকেটে থিতু হতে থাকা অ্যালেনকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। এরপর ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে ৩২ রানের আরও একটি জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে সামনে এগিয়ে নিতে থাকেন উইলিয়ামসন ৷ দেখেশুনে খেলতে থাকা উইলিয়ামসনের পথে কাটা হয়ে আসেন অভিষিক্ত উসামা মীর। ইনিংসের ১৫তম ওভারে অভিষেক ম্যাচে কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে স্বপ্নের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেন লেগ স্পিনার উসামা মীর। ফলে ৬৯ রানে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ রানের জুটি আসে ড্যারিল মিচেল ও টম লাথামের ব্যাটে। ষষ্ঠ উইকেটে মিচেল ও লাথাম মিলে ৭৫ বলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ভরসা হয়ে উঠা ড্যারিল মিচেলকে (৩৫) ফিরিয়ে পাকিস্তানকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রো এনে দেন মোহাম্মদ নওয়াজ। দলীয় ১৪৭ রানে টিম লাথামকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন অভিষিক্ত উসামা মীর। ফলে ৩১.৩ ওভারে ১৪৭ রানেই ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
বল হাতে নাসিম শাহ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠার আগেই নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের সেরা জুটিটা আসে গ্লেন ফিলিপস এবং মাইকেল ব্রেসওয়েলের। নাসিম শাহের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে দুজনে মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৭৫ বলে যোগ করেন ৬৬ রান। ফিলিপস ও ব্রেসওয়েলের এই জুটিই সফরকারীদের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখায়।
কিন্তু নাসিমের আগুনে বোলিংয়ে কিউইদের সেই স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায় নিমিষেই। তৃতীয় পাওয়ার প্লেতে এসে গ্লেন ফিলিপসকে (৩৭) ফিরিয়ে ৬৬ রানের দুর্দান্ত সেই জুটি ভাঙেন নাসিম। ইনিংসের ৪৪তম ম্যাচে দ্বিতীয় উইকেটের মুখ দেখা নাসিম এক ওভারে পরে এসে জোড়া আঘাত হানেন কিউই শিবিরে, ৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলে মাইকেল ব্রেসওয়েল এবং পঞ্চম বলে অভিষিক্ত হেনরি শিপলিকে (০) ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান নাসিম। কিন্তু ওভারের শেষ বলটি টিম সউদি সতর্কতার মোকাবেলা করলে নাসিমের আর হ্যাটট্রিক পাওয়া হয়নি। হ্যাটট্রিক না পেলেও ইনিংসের শেষ ওভারে মিচেল সান্টনারকে ফিরিয়ে ঠিকিই ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করে নিয়েছেন নাসিম। নিজের চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বার ৫ উইকেট শিকার করেন নাসিম। নাসিমের ৫৭ রানে ৫ উইকেট শিকারের ফলে নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে শেষে ৯ উইকেটে ২৫৫ রানের বেশি পুঁজি পায়নি। নাসিম ছাড়া পাকিস্তানের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন অভিষিক্ত লেগ স্পিনার উসামা মীর এবং একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ নওয়াজ।