

আগের দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খুইয়েছে ভারত। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে চোটে পড়ে সিরিজ থেকে ছিটকে যান নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। রোহিত ফিট থাকলে আজ (১০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডেতে ইশান কিশানের খেলারই কথা ছিল না। অধিনায়কের চোটে পাওয়া সুযোগ ইশান কাজে লাগিয়েছে দুই হাতে।
চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে টস জিতে ফিল্ডিং করা বাংলাদেশকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে চোখের জল নাকের জল এক করার উপক্রম। ভিরাট কোহলিকে নিয়ে রেকর্ড জুটি গড়ার পথে একগুচ্ছ রেকর্ড সঙ্গী করে নিজে তুলে নেন দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি।
ইশানের ডাবলের সাথে কোহলির সেঞ্চুরি, সাগর পাড়ে বাংলাদেশকে রানের পাহাড়ে চাপ দিল ভারত। ৮ উইকেট সংগ্রহ ৪০৯ রান। এ নিয়ে ৬ষ্ঠ বার ওয়ানডেতে ৪০০ পেরোনো সংগ্রহ তাদের। ক্যারিয়ারের ১০ম ওয়ানডে খেলতে নেমে ইশান আউট হন ২১০ রানে, কোহলি থামেন ১১৩ রানে।
ভারত ইনিংসে শুরুতেই আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই ফেরান শিখর ধাওয়ানকে। শুরুতে এলবিডব্লিউর আবেদন আম্পায়ার নাকচ করলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ। ৮ বলে ৩ রান করে ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলেন ধাওয়ান।
নিজের পরের ওভারে মিরাজ ফেরাতে পারতেন কোহলিকেও। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। কোহলি তখন ১ রানে ব্যাট করছিলেন।
বাংলাদেশ বোলারদের সুখের সময় অতটুকু পর্যন্তই। এরপর কোহলিকে নিয়ে বাকি গল্পটা নিজের হাতেই লিখেছেন ইশান কিশান।
১২তম ওভারে দুজনের জুটি ছুঁয়েছে ফিফটি। কোহলিকে এক পাশে রেখে সাবলীল সব শট উপহার দিতে থাকেন কিশান। ৪৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটির দেখা পান এই বাঁহাতি।
যত সময় গড়িয়েছে কোহলি অন্য প্রান্তে কেবল সহায়ক ভূমিকায় পালন করেছেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সাগরিকায় ঝড় বইয়ে দেন ইশান। দলীয় রান ১০০ হতেই ইশানের ব্যাটে ৭৫!
ইশান ঝড় থামানোর একটা সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সাকিবের দারুণ প্রচেষ্টার পরও কাজে লাগানো যায়নি। মিরাজের করা ২০তম ওভারে তুলে মারেন ইশান। মিড উইকেট থেকে দৌড়ে লং অনে এসে এক হাতে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা সাকিবের। তবে ডানহাত, বাম হাত হয়ে তালুবন্দী হওয়ার আগে মাটি স্পর্শ করে বল।
নিজের দিনে ইশান এরপর হয়েছেন আরও আক্রমণাত্মক। ৮৫ বলেই ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। অর্থাৎ ফিফটি থেকে সেঞ্চুরি, বল খেলেছেন মাত্র ৩৬ টি।
সেঞ্চুরির পরও কোনোদিকে না তাকিয়ে কেবল ঝড়ো ব্যাটিং চালিয়েছেন এই বাঁহাতি। আর তাতে ২৭তম ওভারেই দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরোয়। মাঝে কোহলিও পেয়ে যান ফিফটির দেখা।
তবে ইশানের এমন দিনে সবই ম্লান। ২৮তম ওভারে ১০৩ বলে দেড়শো পার করেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। একই ওভারে কোহলির সাথে জুটি পেরোয় ২০০।
শেষ পর্যন্ত ইশানকে থামানো গেছে। তাসকিনের করা ৩৬তম ওভারে লিটনকে যখন ক্যাচ দেন ততক্ষণে নামের পাশে ১৩১ বলে ২৪ চার ১০ ছক্কায় ২১০ রান। ভাঙে কোহলির সাথে ২৯০ রানের জুটি। যা ওয়ানডেতে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ওই ওভারে দলীয় রান ৩০০ পেরোয়।
১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে রেকর্ড ইশানের, তার চেয়ে দ্রুত ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেনি আর কেউই। আগের সেরা ক্রিস গেইলের ১৩৮ বলে।
ইশানের পর ঠিক ৮৫ বলেই সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলিও। সাকিবের বলে আউট হওয়ার আগে তার নামের পাশে ৯১ বলে ১১ চার ২ ছক্কায় ১১৩ রান। মাঝে ফিরেছেন শ্রেয়াস আইয়ার (৩) ও লোকেশ রাহুল (৮)।
শেষ দিকে ওয়াশিংটন সুন্দরের ৩৭ ও আক্সার প্যাটেলের অপরাজিত ২০ রানে ভারতের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৪০৯ রান।