

ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলার হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এই সিরিজে ব্যাটার মিরাজই দেখিয়েছেন ঝলক। খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে হাঁকিয়েছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। অনেকটা অসম্ভব পরিস্থিতি থেকে দেখা পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের। ম্যাচ শেষে মিরাজ জানালেন তিনিও ভাবেননি সেঞ্চুরি হবে।
টস জিতে গতকাল (৭ ডিসেম্বর) মিরপুরে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানো টাইগারদের পথ দেখায় মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর ১৪৮ রানের জুটি। মাহমুদউল্লাহ ৭৭ রান করে বিদায় নিলেও অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস মিরাজের ব্যাটে।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের সময় ইনিংসের বাকি ২৩ বল, মিরাজের সেঞ্চুরিতে প্রয়োজন ৩৪ রান। কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। কিন্তু ক্রিজে এসে নাসুম আহমেদ যেভাবে স্ট্রাইক নিয়ে বাউন্ডারি হাকাচ্ছিলেন তাতে কঠিনই মনে হচ্ছিল। ৪৮ ওভার শেষেও তার নামের পাশে ৭২ রান।
উমরানের করা ৪৯তম ওভারে ৩ চারে নেন ১৩ রান। সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভারে লাগে ১৫ রান। শার্দুল ঠাকুরের করা দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ৯১, তৃতীয় বলে ডট, চতুর্থ বলে আবার ছক্কা মেরে ৯৭।
পঞ্চম বলে মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে ২ রানে ৯৯ আর শেষ বলে লং অনে ঠেলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে মিরাজ। সবমিলিয়ে ৮৩ বলে ৮ চার ৪ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত এই অলরাউন্ডার। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারেই এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি। ১১ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংসে অপরাজিত নাসুমও।
নিজের সেঞ্চুরি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেন, ‘না, এটা কখনোই ভাবিনি যে সেঞ্চুরি হবে। তবে দলের জন্য খেলেছি, ফ্লো ছিল, আল্লাহর অনুগ্রহ ছিল অশেষ, হয়ে গেছে।’
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৯ উইকেটে ২৬৬ রানে থামে ভারত। বৃথা যায় শ্রেয়াস আইয়ারের ৮২, আক্সার প্যাটেলের ৫৬ ও চোট পাওয়া হাত নিয়ে খেলা রোহিত শর্মার অপরাজিত ৫১। ৫ রানে জিতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি ইতোমধ্যে ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
মাহমুদউল্লাহর সাথে নিজের জুটি নিয়ে মিরাজ যোগ করেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। ম্যাচ জিততে পেরেছি, এজন্য আরও ভালো লাগছে। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। রিয়াদ ভাই ও আমার জুটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খুব ভালো লাগছে।’
‘আমরা আসলে ওইরকম চিন্তা করে খেলিনি যে এত রান করতে হবে। ৬ উইকেট পড়ে গেছে, কত রানই বা করবেন! ওরকম চিন্তা-ভাবনা ছিল না। আমার আর রিয়াদ ভাইয়ের যে কথা হচ্ছিল, আমরা বল টু বল খেলার চেষ্টা করি ও ছোট ছোট জুটি গড়ার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের দুজনের জুটি খুবই ভালো হয়েছে।’
প্রথম ওয়ানডেতেও মিরাজের নায়কোচিত ইনিংসে জিতেছে বাংলাদেশ। অবিচ্ছেদ্য শেষ উইকেট জুটিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৫১ রান তুলে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে জয়ের নায়ক হওয়াকে দারুণ কিছু বলছেন এই অলরাউন্ডার।
তার ভাষায়, ‘অবশ্যই আমার জন্য এটা বড় একটা পাওয়া। ভারত অনেক ভালো দল, বিশ্বের সেরা দলগুলির একটি ওরা এখন। আমার কাছে মনে হয়, এরকম বড় দলের সঙ্গে পারফর্ম করলে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে।’
‘সবচেয়ে বড় কথা, ভারতের সঙ্গে আমরা দ্বিতীয়বার সিরিজ জিতেছি। আমার ব্যক্তিগতভাবে ওরকম চাওয়া ছিল না যে ভালো করতেই হবে। স্বাভাবিকই ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে হয়ে গেছে। পরিস্থিতির যা দাবি, ওরকম খেলেছি। ভাগ্য পক্ষে এসেছে।’