

প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে জিতে নেয় বাংলাদেশ। তবে ঘুরে দাঁড়াতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল ভারত ওপেনার শিখর ধাওয়ান। মিরাজের অমন কীর্তি প্রতিদিন ঘটবে না বলেও জানিয়েছেন দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে। কিন্তু ধাওয়ানকে ভুল প্রমান করে প্রায় একই পরিস্থিতি থেকে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান মিরাজ। এরপর আরও এক নাটকীয় ম্যাচে শেষ হাসি বাংলাদেশের।
প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে জিতে নেয় বাংলাদেশ। তবে ঘুরে দাঁড়াতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল ভারত ওপেনার শিখর ধাওয়ান। মিরাজের অমন কীর্তি প্রতিদিন ঘটবে না বলেও জানিয়েছেন দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে। কিন্তু ধাওয়ানকে ভুল প্রমান করে প্রায় একই পরিস্থিতি থেকে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান মিরাজ। এরপর আরও এক নাটকীয় ম্যাচে শেষ হাসি বাংলাদেশের।
৫ রানের জয়ে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ (৭ ডিসেম্বর) টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ৭ উইকেটে পায় ২৭১ রানের সংগ্রহ। মিরাজের অপরাজিত ১০০ রানের সাথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৭৭ রান।
শ্রেয়াস আইয়ারের ৮২ রানের সাথে আক্সার প্যাটেলের ৫৬ ও রোহিত শর্মার অপরাজিত ৫১ রানের ক্যামিও ইনিংসটি বৃথা যায়। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ভারত থেমেছে ৯ উইকেটে ২৬৬ রানে।
বল হাতে ভারতকে চেপে ধরে সহজ জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। তবে বিপত্তিটা বাংলাদেশ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া রোহিৎ ব্যাট হাতে নেমে পড়লে।
২০৭ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর আঙুলের ব্যথা নিয়েই ভারতকে প্রায় জিতিয়ে দিচ্ছিলেন একাই। ২৮ বলে ৫১ রানের ইনিংসে রোহিত শেখালেন দাতে দাত চেপে লড়াইয়ের মন্ত্র।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে আরেক দফা এসেছে পরিবর্তন। লিটন দাসের সঙ্গী এনামুল হক বিজয়। যদিও পরিণতি একই, জুটি থামে ১১ রানে।
মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বিজয় হয়েছেন এলবিডব্লিউ (১১ )। সিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে লিটন থামেন ৭ রানেই।
আগের ম্যাচে খালি হাতে ফেরা শান্ত (৩৫ বলে ২১) আজ সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন। তাকে পরাস্ত হতে হয় গতির ঝড় তোলা উমরান মালিকের বলে।
এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরের টানা ৩ উইকেট, বিধ্বস্ত বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। ইনিংসের ১৭ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফেরান সাকিবকে (২০ বলে ৮)। আউট হওয়ার আগে ক্রিজে বেশ অস্বস্তিতেই ছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার।
সাকিবের পর টানা ২ বলে ওয়াশিংটন ফেরান মুশফিক (২৪ বলে ১২) ও আফিফকে (০)। আর তাতে ৫ উইকেটে ৬৯ রানে পরিণত হয় স্বাগতিকরা।
সেখান থেকে আগের ম্যাচে অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে দল জেতানো মিরাজের সাথে মাহমুদউল্লাহ মিলে বাংলাদেশকে পথ দেখান। দুজনের জুটিতে আসে ১৪৮ রান। যা ৭ম উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তার আগে ৫৫ বলেই ফিফটি তুলে নেন মিরাজ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের সময় ইনিংসের বাকি ২৩ বল, মিরাজের সেঞ্চুরিতে প্রয়োজন ৩৪ রান। কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না।
কিন্তু ক্রিজে এসে নাসুম যেভাবে স্ট্রাইক নিয়ে বাউন্ডারি হাকাচ্ছিলেন তাতে কঠিনই মনে হচ্ছিল। ৪৮ ওভার শেষেও তার নামের পাশে ৭২ রান।
উমরানের করা ৪৯তম ওভারে ৩ চারে নেন ১৩ রান। সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভারে লাগে ১৫ রান। শার্দুল ঠাকুরের করা দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ৯১, তৃতীয় বলে ডট, চতুর্থ বলে আবার ছক্কা মেরে ৯৭।
পঞ্চম বলে মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে ২ রানে ৯৯ আর শেষ বলে লং অনে ঠেলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে মিরাজ।
সবমিলিয়ে ৮৩ বলে ৮ চার ৪ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত এই অলরাউন্ডার। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারেই এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি। ১১ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংসে অপরাজিত নাসুমও।
দুজনে ৮ম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছেদ্য ২৩ বলে ৫৪ রানে। বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তোলে ১০২ রান, শেষ ৫ ওভারে ৬৮!
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ভারত শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে। কারণ বাংলাদেশ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বিজয়ের ক্যাচ নিতে গিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো রোহিত শর্মা বাঁহাতে চোট পান।
হাসপাতালে গিয়ে করানো হয় স্ক্যানও। বাংলাদেশ ইনিংসে আর তাকে ফিল্ডিং করতে দেখা যায়নি, ফলে ব্যাটিংয়েও যে খুব প্রয়োজন না হলে নামবেন না অনুমেয়ই ছিল।
ওপেন করেছেন ভিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কোহলিকে (৬ বলে ৫) বোল্ড করে গ্যালারিতে সমুদ্রের গর্জন ফেরান এবাদত হোসেন।
ভোঁ দৌড়ে এবাদত ছুটেছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। তাকে আটকানোর সাধ্য যেন কারও নেই। কোচিং স্টাফদের উদ্দেশ্য করে নিজের ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন ‘স্যলুট’ দিলেন।
মুস্তাফিজের লাফিয়ে ওঠা বলে ৮ রানেই মিরাজকে ক্যাচ দেন ধাওয়ান। সাকিবের প্রথম শিকার ওয়াশিংটন সুন্দর (১১)। আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো লোকেশ রাহুলকে ১৪ রানেই থামান মিরাজ।
৬৫ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারতকে এরপর টেনে নেন এক পাশ আগলে রাখা শ্রেয়াস আইয়ার ও আক্সার প্যাটেল। ৬৯ বলে ফিফটির দেখা পান আইয়ার। দুজনের জুটিও এরপর ১০০ পেরোয়।
বাংলাদেশের মনে ভয় ধরানো এই জুটিও অবশ্য ভেঙেছেন মিরাজ। তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সেঞ্চুরি মিস করেন আইয়ার। আফিফের হাতে ধরা পড়ার আগে নামের পাশে ১০২ বলে ৬ চার ৩ ছক্কায় ৮২ রান।
নিজের দ্বিতীয় স্পেল করতে এসে এবাদত ফেরান ফিফটি হাঁকানো আক্সারকে (৫৬ বলে ৫৬)। ৭ উইকেটে ২০৭ ভারতের স্কোরবোর্ডে।
ঝুঁকি নিয়ে ক্রিজে রোহিত, শুরুতে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। পরে চোট পাওয়া হাতেই সঙ্গ দিচ্ছিলেন দীপক চাহারকে।
৩০ বলে সমীকরণ ৫৯ রান। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে চাহারকে ফেরান এবাদত, তবে ওই ওভারে ২ ছক্কা ১ চার মেরে বিস্মিত করেছেন রোহিত।
অন্য প্রান্তে মোহাম্মদ সিরাজ ভালো সঙ্গ না দিলেও ৪৯তম ওভারে রোহিত আরও ভয়ংকর। দুই দফা জীবন পেয়ে হাঁকিয়েছেন ২ ছক্কা, ওভারে রান ২০।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ২০, মুস্তাফিজের প্রথম ৫ বলে হাঁকালেন ২ চার ১ ছক্কা। শেষ বলে সমীকরন দাঁড়ায় ৬। তবে এবার আর পারলেন না ভারতীয় কাপ্তান। ইয়র্কার লেংথের বলে ছক্কা হাঁকাতে ব্যর্থ হন, বাংলাদেশ জেতে ৫ রানে। ২৭ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৩ চার ৫ ছক্কায়।