
আগের ম্যাচে নিশ্চিত পরাজয়ের পথে থাকা দলকে অবিশ্বাস্যভাবে জেতান মেহেদী হাসান মিরাজ। আজ (৭ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে নিয়ে মুগ্ধতা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাধ্য করলেন। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন মান বাঁচানো সংগ্রহের আশা করছে তখনই মিরাজের আরেক দফা ঝলক।
এবার সঙ্গী হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে পেলেন। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পাশাপাশি চোখের প্রশান্তি দেওয়া ব্যাটিংয়ে শেষদিকে অসাধারন এক সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন। তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৭১!
৮৩ বলে ১০০ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ অবশ্য আউট হন ৭৭ রান করে। দুজনের জুটিতে যোগ করেন ১৪৮ রান। যা ৭ম উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই তোপের মুখে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে আরেক দফা এসেছে পরিবর্তন। লিটন দাসের সাথে আজ ইনিংস শুরু করেছেন এনামুল হক বিজয়। তবে আরও একবার ব্যর্থতা সঙ্গী উদ্বোধনী জুটিতে।
মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে টানা দুই চার মেরে ভালো কিছুর আভাস দিয়েছেন বিজয়। কিন্তু ফিরেছেনও একই ওভারে। চতুর্থ বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বাঁচলেও পরের বলেই হয়েছেন এলবিডব্লিউ (৯ বলে ১১ )।
আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে খালি হাতে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে লিটনের জুটিও বেশি দূর এগোয়নি। ২৮ রানের জুটি ভাঙে সিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে লিটন (২৩ বলে ৭) বোল্ড হলে।
এ দিন সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা শান্তকে পরাস্ত হতে হয় গতির ঝড় তোলা উমরান মালিকের বলে। ৩৫ বলে ৩ চারে ২১ রানের ইনিংসটি সাজান শান্ত।
এরপর ১৫তম ওভারে আক্রমণে আসা ওয়াশিংটন সুন্দরের এক স্পেলে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারও বিধ্বস্ত। ইনিংসের ১৭ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফেরান সাকিবকে (২০ বলে ৮)।
আউট হওয়ার আগে ক্রিজে বেশ অস্বস্তিতেই ছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার। নিজের পরের ওভারে টানা ২ বলে ওয়াশিংটন ফেরান মুশফিক (২৪ বলে ১২) ও আফিফকে (০)। আর তাতে ৫ উইকেটে ৬৯ রানে পরিণত হয় স্বাগতিকরা।
সেখান থেকে আগের ম্যাচে অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে দল জেতানো মিরাজের সাথে মাহমুদউল্লাহ মিলে বাংলাদেশকে পথ দেখায়। আক্সার প্যাটেলের করা ৩০তম ওভারে দুজনের জুটি ফিফটি পূর্ণ করে।
উমরান মালিকের করা ৩৮তম ওভারে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে ৫৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন মিরাজ। ৪০তম ওভারে দুজনের জুটি ছুঁয়েছে সেঞ্চুরি। মিরাজের পথ ধরে ফিফটির দেখা পান মাহমুদউল্লাহও। যে পথে তার লেগেছে ৭৪ বল।
৪৫তম ওভারে দলীয় রান পেরোয় ২০০। সময় গড়াতেই আরও বেশি হাত খুলে ব্যাটিং করেন মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ। সিরাজের করা ৪৭তম ওভারে আসে ১৪ রান।
তবে পরের ওভারে উমরান মালিকের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ।
উইকেটের পেছনে দারুণ এক ক্যাচ নেন লোকেশ রাহুল। তাতে ৯৬ বলে ৭ চারে থামে ৭৭ রানের ইনিংস। ভেঙেছে মিরাজের সাথে ১৪৮ রানের জুটি, যা ৭ম উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও নাসুমকে নিয়ে দুর্দান্তভাবে ইনিংসের শেষটা করলেন মিরাজ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের সময় ইনিংসের বাকি ২৩ বল, মিরাজ অপরাজিত ৭১ বলে ৬৬ রানে।
সেঞ্চুরিটা কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। কিন্তু ক্রিজে এসে নাসুম যেভাবে স্ট্রাইক নিয়ে বাউন্ডারি হাকাচ্ছিলেন তাতে মিরাজের সেঞ্চুরি অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। ৪৮ ওভার শেষে তার নামের পাশে ৭২ রান।
তবে উমরান মালিকের করা ৪৯তম ওভারে ৩ চার মেরে নেন ১৩ রান। শেষ ওভারে লাগে ১৫ রান। শার্দুল ঠাকুরের করা দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ৯১, তৃতীয় বলে ডট, চতুর্থ বলে আবার ছক্কা মেরে ৯৭।
পঞ্চম বলে মিড অফদিয়ে উড়িয়ে ২ রানে ৯৯ আর শেষ বলে লং অনে ঠেলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে মিরাজ। সবমিলিয়ে ৮৩ বলে ৮ চার ৪ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত এই অলরাউন্ডার। ১১ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংসে অপরাজিত নাসুমও।
দুজনে ৮ম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছেদ্য ২৩ বলে ৫৪ রানে। বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তোলে ১০২ রান, শেষ ৫ ওভারে ৬৮!