মিরাজ ম্যাজিকে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ

মিরাজ ম্যাজিকে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ
Vinkmag ad

বাংলাদেশ-ভারত লড়াই দ্বৈরথে রূপ নিয়েছে বলা হলেও মাঠের ক্রিকেটে বরাবরই শেষ হাসি হাসছিল ভারত। ৭ বছর পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে তারা। প্রথম ওয়ানডেতে প্রায় একই দিকে মোড় দিচ্ছিল ম্যাচ। সহজ জয়কে কঠিন করে হারের পথেই ছিল বাংলাদেশ। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য, দুর্দান্ত, অতিমানবীয় এক ইনিংসে এবারের দৃশ্যপট বদলালো।

দম বন্ধ হয়ে আসা পরিস্থিতি থেকে যেভাবে ১ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন তাতে খানিকের জন্য হলেও বিশেষণ শূন্য হতে হবে যে কাউকে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করা ভারতকে ১৮৬ রানেই গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। লোকেশ রাহুলের ৭৩ রানের ইনিংস ছাড়া থিতু হতে পারেনি আর কেউ। বল হাতে ঝলক দেখান সাকিব, ক্যারিয়ারে চতুর্থ বারের মতো নিয়েছেন ৫ উইকেট। পেসার এবাদতের শিকার ৪ উইকেট।

এরপর লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশ ১৩৬ রানে হারায় ৯ উইকেট। নিশ্চিত পরাজয়ের দিকে যাওয়া ম্যাচটিই কিনা মিরাজের অমন দুর্দান্ত ইনিংসে ১ উইকেটে জিতেছে টাইগাররা।

হাসান মাহমুদ যখন নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন তখন মিরাজের নামের পাশে মাত্র ১ রান, দলের জয়ে প্রয়োজন ৫১! সঙ্গী মুস্তাফিজকে নিয়ে এই অসাধ্যই সাধ্য করেছে মিরাজ। চলতি বছর চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আফিফ হোসেনকে নিয়ে যে ম্যাচটি জিতিয়েছেন এবার ছাপিয়ে গেছেন ওই ম্যাচকেও।

৪৩তম ওভার শেষে প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। দীপক চাহারের করা ৪৪তম ওভারে তিন চারে আসে ১৫ রান। ৩৬ বলে সমীকরণ ১৪, শার্দুল ঠাকুরের করা ৪৫তম ওভারে মুস্তাফিজ হাঁকান এক চার। ওভার শেষে রান ৬।

৩০ বলে ৮ রান প্রয়োজন এমন সমীকরণে ভক্ত সমর্থকদের হৃদকম্প বাড়ছে তখন ৪৬তম ওভারেই ম্যাচ বাংলাদেশের। প্রথম বলেই চার মেরে কাজটা আরও সহজ করে নেন মিরাজ। এরপর নো বলে আসে সিঙ্গেল, ফ্রি হিটে মুস্তাফিজ পাননি কোনো রান। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ টাই করে ফেনেন মুস্তাফিজ, পরের বলে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ।

এরপ ভোঁ দৌড়, না দিয়ে উপায়ও বা কি ছিল? ভারতের কাছে তীরে গিয়ে তরী ডুবানোর গল্প তো অনেকদিন ধরেই লিখে আসছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও যে আছে একদম ক্লোজ ম্যাচ হারের ক্ষত।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশ ওপেনার নাজমুল হাসান শান্ত প্রথম বলেই ফিরেছেন। তিন নম্বরে নামা এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে আসেন ১৪ রানের বেশি।

২৬ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পরের পথটা টেনে নেন লিটন ও সাকিব। দুজনে জুটিতে যোগ করেন ৪৮ রান। ৬৩ বলে ৪১ রান করা লিটন আউট হলে ভাঙে জুটি। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩ চার ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান লিটন।

লিটনের পর একই পরিণতি সাকিবেরও। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ভিরাট কোহলির অসাধারণ এক ক্যাচে ৩৮ বলে ২৯ রানেই থামেন টাইগার অলরাউন্ডার।

দলীয় রান ১০০ হওয়ার আগেই ৪ উইকেট নেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মুশফিকুর রহিম মিলে ৬৯ বলে ৩৩ রানের মন্থর জুটি গড়েন। পরপর দুই বলে ফিরেছেন দুজনেই। রিয়াদ ৩৫ বলে ১৪, মুশফিক ৪৫ বলে ১৮ রান করেন।

১২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের পথটা কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। সে কঠিন কাজটাই ঠান্ডা মাথায় সহজ করেন মিরাজ।

এর আগে ভারতের উদ্বোধনী জুটি টিকেছে ৫.২ ওভার। মিরাজের বলে শিখর ধাওয়ান ৭ রান করে আউট হন। বেশি কিছু করতে পারেনি রোহিত শর্মা ও ভিরাট কোহলিও। ১১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে দুজনকেই ফেরান সাকিব।

ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড করেন রোহিতকে (৩১ বলে ২৭ রান)। এক বল পর ফেরান কোহলিকেও। কাভারে লিটন দাসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে কোহলি থামেন ৯ রানে। ৪৯ রানেই ৩ উইকেত হারিয়ে বসে সফরকারীরা।

৪৩ রানের জুটিতে দলকে পথ দেখাতে চেয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল। তবে দলীয় ১০০ রানের আগেই আইয়ারকে ( ৩৯ বলে ২৪) ফেরান এবাদত হোসেন।

৪৩ বলে ১৯ রান করে সাকিবের বলে এবাদতকে ক্যাচ দেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ফলে ভাঙে রাহুলের সাথে ৬০ রানের জুটি। তার আগেই অবশ্য ৪৯ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন লোকেশ রাহুল।

সুন্দরের পর ক্রিজে আসা কোনো ব্যাটারই দাঁড়াতে পারেনি। সাকিবের সাথে এবাদতের তোপে খালি হাতে ফেরেন শাহবাজ আহমেদ ও দীপক চাহার। ২ রানের বেশি করতে পারেনি শার্দুল ঠাকুর।

৪ উইকেটে ১৫২ থেকে ৮ উইকেটে ১৫৬ রানে পরিণত হয় সফরকারীরা। দীপক চাহারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ক্যারিয়ারে চতুর্থ বারের মতো ৫ উইকেট শিকার সাকিবের।

একপাশ আগলে রেখে লোকেশ রাহুলের যে চেষ্টা সেটি প্রতিরোধ করেন এবাদত। ৫ চার ৪ ছক্কায় ৭০ বলে ৭৩ রান রাহুলের নামের পাশে। এবাদতের চতুর্থ শিকার হয়ে মোহাম্মদ সিরাজ (২০ বলে ৯) আউট হলে ১৮৬ রানেই অলআউট হয় ভারত।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার পথে ৪৭ রান খরচ এবাদতের। ৩৬ রানে ৫ উইকেট নেন সাকিব।

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

লাবুশেইন, লায়ন দাপটে অস্ট্রেলিয়ার বড় জয়

Read Next

মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স করতে ২০ বলই লাগতো মিরাজের!

Total
0
Share