

সাধারণত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে একটি দলের মালিকানা নিতে হয়। ড্রাফট কিংবা সরাসরি চুক্তিতে খেলোয়াড় কিনে দল গঠন, পরিচালনা সবই করতে হয় তাদের। তবে ২০১৩ সাল থেকেই অদ্ভুত এক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সাক্ষী দেশের ক্রিকেট। যত সময় গড়িয়েছে ততই অবনতি হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) নামক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির।
লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে ২০১৩ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) বাইরে যাত্রা করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক বিসিএল। প্রথম শ্রেণির এই টুর্নামেন্টে দল চারটি। প্রথম আসরে তিন দলের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি পেয়েছিল বিসিবি। সাউথ জোনের প্রাইম ব্যাংক, সেন্ট্রাল জোনের ওয়ালটন ও ইস্ট জোনের পৃষ্ঠপোষক হয় ইসলামী ব্যাংক। আর কোনো আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে না পাওয়ায় নর্থ জোনের দায়িত্ব নেয় বিসিবি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করে লাভের আসায়। যদিও প্রথম শ্রেণির কোনো টুর্নামেন্ট থেকে সরাসরি লাভ পাওয়ার আশা করাটা ভুল। দীর্ঘ দিন দল চালিয়েও ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে ২০২০ সাল থেকে সরে যায় প্রাইম ব্যাংকও। ফলে ২০২১-২২ মৌসুমে বিসিএলে চার দলের মাঝে দুই দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি টিকে থাকে। সাউথ জোনের দায়িত্বও নিতে হয় বিসিবিকে।
চার দলের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি পাওয়া গেলেও বিসিএল থেকে আয় করা সম্ভব না বিসিবির। বরং বড় একটা অর্থ ব্যয় করতে হয় প্রথম শ্রেণির এই টুর্নামেন্ট চালাতে গিয়ে। কিন্তু শুরুতে এক ও পরে দুইটি দলের দায়িত্ব নিতে হয়েছে বলে খরচ বেড়েছে আরও। হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে রূপ নেয় আসন্ন আসর। কারণ এবার সেন্ট্রাল জোন পরিচালনা করা ওয়ালটনও সরে গেছে। সেন্ট্রাল জোনের ভারও বহন করতে হবে বিসিবিকে।
অর্থাৎ ১০ বছরের মাথায় এসে অবনতির চরম পর্যায়ে চলে আসে বিসিএল। প্রথম আসরে তিন ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকলেও বর্তমানে মাত্র একটি। একমাত্র ইসলামী ব্যাংকই টিকে রইলো ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে।
বিসিএল লঙ্গার ভার্সনের টুর্নামেন্ট হলেও গত বছর থেকে ওয়ানডে সংস্করণ যুক্ত করেছে বিসিবি। আসন্ন আসর মাঠে গড়াবে ২০ নভেম্বর থেকে। শুরুতে থাকছে ওয়ানডে সংস্করণ, যা চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
লিগ পর্বের ম্যাচগুলো বিকেএসপিতে অনুষ্ঠিত হবে, পর্দা নামবে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম দিবা রাত্রির ফাইনাল দিয়ে। লঙ্গার ভার্সনের জন্য অবশ্য দুইটি আলাদা স্লট ভেবে রেখেছে টুর্নামেন্ট কমিটি, ডিসেম্বরর ১২ কিংবা ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ শুরু হতে পারে বিসিএল লঙ্গার ভার্সন।
আজ (১৫ নভেম্বর) মিরপুরে ওয়ানডে সংস্করণ সামনে রেখে প্লেয়ার্স ড্রাফট অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি দল ৬ জন করে আগের খেলোয়াড় ধরে রেখেছে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ইসলামী ব্যাংক ইস্ট জোনের রেখে দেওয়া ক্রিকেটার হল তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুবরা।
বিসিবি নর্থ জোনে আছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস। বিসিবি সাউথ জোনে এনামুল হক বিজয়, নাসুম আহমদদের সাথে বিসিবি সেন্ট্রাল জোনে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, সৌম্য সরকার।
ড্রাফট শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। এবার ওয়ালটনের সরে যাওয়াতে মাত্র একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে লিগ চালানো নিয়ে কথা বলেন তিনি।
দুঃখ প্রকাশ করে বিসিবির এই পরিচালক জানিয়েছেন তারা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করেও ইতিবাচক সাড়া পাননি। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন গুণী এই সংগঠক।
তার ভাষায়,
‘এটা দুঃখজনক, এই মুহূর্তে সরে গেছে একটা দল। দুইটা ছিল এতোদিন, আরও চেষ্টা ছিল বাড়ানোর। সারা বিশ্বেরই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। সেটার ফলশ্রুতিতে অনেক কিছুতেই প্রভাব পড়েছে। আমাদের যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল ওয়ালটন তারাও জানিয়েছে তারা বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এটা ওভারকাম করলে উনারা আবার আমাদের সাথে থাকবে।’
এবারে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণ আরও কিছুদিন পরে শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে সামনে ভারত সিরিজ বলে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির সুযোগ করে দিতে দিন কয়েক আগেই শুরু হচ্ছে।
১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসবে ভারত, ৪, ৭ ও ১০ ডিসেম্বর মাঠে গড়াবে ওয়ানডে তিনটি। সফরে দুটি টেস্টও খেলবে ভারতীয়রা, ১৪ ডিসেম্বর প্রথমটি ও ২২ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচটি শুরু হবে।