

অ্যাডিলেডে ভারতের কাছে ৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। অথচ এই ম্যাচে হতে পারতো ভিন্ন কিছুও, ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশকে সে পথেই রেখেছিলেন লিটন দাস। মাঝের বৃষ্টিতে সব এলোমেলো, পা পিছলে লিটন হলেন রান আউট। আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশও পথ হারালো, শেষের চেষ্টাটুকু নুরুল হাসান সোহানের। ব্যর্থ হয়ে তার আক্ষেপ একটি বাউন্ডারির।
ছোট বাউন্ডারি বলে অ্যাডিলেড ওভালে ১৮৫ এমনিতেই তাড়া করার মতো লক্ষ্য। তার উপর লিটনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৭ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৬৬। লিটন একাই তাতে ২৬ বলে ৫৯!
কিন্তু বিপত্তিটা আনলো বৃষ্টি। ঘন্টাখানেকের বৃষ্টিতে নতুন লক্ষ্য ১৬ ওভারে ১৫১! ফের খেলা শুরু হতেই লিটন পা পিছলে পড়ে হলেন রান আউট (২৭ বলে ৬০)। এরপর মাঝে চলেছে শুধু আসা যাওয়ার মিছিল।
শেষ দিকে সোহানের ব্যাটে কিঞ্চিৎ আশার আলো খুঁজেছে সমর্থকরা। তিনি সঙ্গী হিসেবে পান তাসকিন আহমেদকে। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ৪৩। অর্শদ্বীপ সিংয়ের ১৪তম ওভার থেকে আসে ১২ রান।
১২ বলে সমীকরণ ৩১। তাসকিনের ১ চার ১ ছক্কায় হার্দিক পান্ডিয়ার করা ১৫তম ওভারে ১১, ওভারের শেষ ২ বলে অবশ্য কোনো রান পাননি সোহান। ৬ বলে এবার প্রয়োজন ২০।
অর্শদ্বীপকে দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে খেলা জমান সোহান। ৪ বলে প্রয়োজন ১৩, তৃতীয় বলে ডট, ৩ বলে লাগে ১৩। চতুর্থ বলে ২ রান, পঞ্চম বলে চার। ১ বলে কঠিন সমীকরণ ৭। অন্তত সুপার ওভারে নিতে ছক্কা মারতেই হত। সোহান পারেননি, এসেছে কেবল ১ রান। ৫ রানে বিজয়ী ভারত। অর্থাৎ শেষ বলে ওই একটা ছক্কার আক্ষেপই সোহানের কণ্ঠে।
এমন ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সোহান বলেন, ‘ক্লোজ একটা ম্যাচ ছিল। একটা বাউন্ডারি দূরে ছিলাম। ম্যাচটা জিততে পারলে কাছাকাছি চলে যেতাম, টুর্নামেন্টের আরেক ধাপ ওপরে যাওয়ার। দূর্ভাগ্যবশত হয়নি।’
‘লিটন একটা ভালো মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল। আমরাও কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে… শেষ ওভারে আমিও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে হয়ে যাবে। তবে যেটা বললাম যে, একটা বাউন্ডারি ঘাটতি ছিলাম।’
বৃষ্টি শেষে ৯ ওভারে লাগতো ৮৫ রান, হাতে ১০ উইকেট। বর্তমানে টি-টোয়েন্টিতে যা অনায়েসেই সহজ সমীকরণ বলে দেওয়া যায়। কিন্তু টাইগার ব্যাটাররা হতাশ করেছে, উপহার দিয়েছে এলোমেলো ব্যাটিং। অথচ চাইলেই খানিক স্মার্ট উপায়ে ম্যাচটা বের করা যেত। যদিও সোহান বলছেন তাদের এমন ব্যাটিং স্মার্ট ভাবনার অংশই ছিল।
তার ভাষায়, ‘আমরা স্মার্ট উপায়েই চিন্তা করছিলাম। টি-টোয়েন্টিতে যখন ওভারপ্রতি ৯-১০ কাছাকাছি, সাড়ে ৯ করে ছিল, তখন তো ঝুঁকি নিতেই হতো। আমরা ব্যাটসম্যানরা হয়তো সেটাই চেষ্টা করছিলাম।’
‘সবাই ক্যালকুলেটিভ চিন্তা করে। কিন্তু বাইরে থেকে চিন্তা করে যাওয়া একরকম, মাঠে গিয়ে পরিস্থিতিটা আর একরকম থাকে না। সবসময় এমন না যে, ক্যালকুলেট করে গেলেই ওই জিনিসটা করতে হবে। প্রয়োগ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
শেষ বলে ঐ ছক্কাটা মেরে দিলেই সোহান হয়ে যেতেন নায়ক। দেশের ক্রিকেটে তার নাম উচ্চারিত হত আলাদাভাবে। এমন সুযোগ মিস করাকে কীভাবে দেখছেন তিনি নিজে?
এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নায়ক হওয়ার থেকে আমার কাছে মনে হয় যে দেশের জন্য ম্যাচ জেতাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় সেই সুযোগটা খুব কাছে ছিল। যেটা বললাম একটা বাউন্ডারি দূরে ছিলাম। ওইটাই আশা করছিলাম যেন ম্যাচটা জিততে পারি। শেষ পর্যন্ত এটাই আশা করছিলাম। দূর্ভাগ্যবশত হয়নি।’