

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বড় দুঃখের নাম হয়ে থাকবে ২০০৩ সালের মুলতান টেস্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে জিততে মাত্র ১ উইকেটের পরাজয় সঙ্গী টাইগারদের। ম্যাচ শেষে ক্রিকেটারদের চোখের জল দেশের ক্রিকেটে মন খারাপের ছবি হয়ে বাঁধাই করা আছে প্রায় দুই দশক ধরে। ঐ ম্যাচের একাদশে থাকা হান্নান সরকার ৩১ অক্টোবর রাতে আবারও মুলতানের উদ্দেশে বিমান ধরেছেন। এবার অবশ্য ভূমিকা ভিন্ন, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নির্বাচক। তবে মন খারাপের স্মৃতি ফিরে আসবে মুলতানের ড্রেসিং রুমে জানালেন নিজেই।
২০০৫ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ততদিনে খেলতে হয়েছে ৩৫ টেস্ট। অথচ সাদা পোশাকে প্রথম জয়ের দেখা বাংলাদেশ পেতে পারতো নিজেদের ২৪তম টেস্টে, ২০০৩ সালে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
সিরিজের তৃতীয় টেস্ট, আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৮১। হাবিবুল বাশারের ব্যাটে সর্বোচ্চ ৭২ রান। জবাবে মোহাম্মদ রফিকের পাঁচ উইকেট শিকারে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে অলআউট ১৭৫ রানে।
১০৬ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৫৪ রানে। তবুও জয়ের জন্য পাকিস্তানের লক্ষ্য ২৬১। এক পাশে ইনজামাম উল হক অনড়, তবে অন্য পাশে একের পর এক উইকেট হারাচ্ছিল স্বাগতিকরা।
৬ উইকেটে ১৩২ রানে পরিণত হওয়া পাকিস্তানের জন্য জয় বেশ কঠিনই তখন। কিন্তু লেজের ব্যাটারদের নিয়ে সে পথ ধীরে ধীরে পাড়ি দেন ফিফটির পর সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ইনজামাম। এরপরও ২০৫ রানে নেই ৮ উইকেট, ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটার উমর গুলকে দ্রুতই ফেরানোর সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।
কিন্তু ক্রিজ ছেড়ে বার বার বেরিয়ে যাওয়া গুলকে ম্যানকাডিং না করে বরং সতর্ক করেন মোহাম্মদ রফিক। ঘটনাটি ক্রিকেট বিশ্বে দারুণ এক উদারতার গল্প হয়ে আছে। কিন্তু গুল বেঁচে গিয়ে প্রায় ১০০ বল খেলে ফেলেন, এমন সঙ্গ পেয়ে অন্য প্রান্তে ইনজামাম নিজের কাজটা ঠিকভাবেই করেন।
গুল আউট হন দলকে জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে রেখে। শেষ ব্যাটার ইয়াসির আলিকে নিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করেন ১৩২ রানে অপরাজিত থাকা ইনজামাম। বাংলাদেশ হেরেছে ১ উইকেটে।
প্রায় ২০ বছর পর বাংলাদেশের ওই দলের ওপেনার হান্নান সরকার যুব দলের নির্বাচক হয়ে মুলতানে ফিরছেন। সফরে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে একটি চার দিনের, তিনটি একদিনের ও দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সবকটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে মুলতানে।
মিরপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ২০০৩ সালের সেই ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন হান্নান। তার বিশ্বাস এখন মুলতান স্টেডিয়ামের অনেক কিছু চোখের সামনে স্পষ্ট নয়। তবে মাঠে ঢুকলেই পুরোনো সেসব স্মৃতি মনে পড়বে, হারিয়ে যাবেন দুই দশক আগে আক্ষেপে মোড়ানো সে ম্যাচে।
তার ভাষায়, ‘আসলে মুলতানের সেই টেস্টে আমিও ছিলাম। এখন আমি এই মুহূর্তে মাঠের ব্যাপারগুলো মনে করতে পারছি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত মাথে যাওয়ার পর আমার মনে পড়বে, ড্রেসিং রুমের স্মৃতি মনে পড়বে। আসলে সুখের স্মৃতি আবার দুঃখের স্মৃতিও বলতে পারি এতো কাছে গিয়েও ম্যাচটা হেরেছি। এটাতো মনে করিয়ে দিবে মাঠে যাওয়ার পরে। কিন্তু আমাদের যুব দলের জন্যই পাকিস্তানের যে কোনো কন্ডিশনে খেলাটাই চ্যালেঞ্জিং হবে। বিশেষ করে এই দলটার, কারণ এরা একদমই নতুন। যাদের বাইরে খেলার একদমই অভিজ্ঞতা নাই।’